কেক বানাতে চান কিন্তু কেক বানানোর রেসিপি জানেন না? কেক বানাতে হলে রেসিপি জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেক আমাদের খাদ্যতালিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে গেছে। মুখের রুচি পরিবর্তন করার জন্য, জন্মদিনে কিংবা যেকোনো অনুষ্ঠানে কেক অনেক সুস্বাদু একটি খাবার হিসেবে প্রচলিত। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে চুলায় কেক বানানোর রেসিপি এবং কেক বানানোর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
কেক বানানোর রেসিপি
রেসিপি মেনে রান্না করলে তবেই তো সেই রান্না অনেক সুস্বাদু হবে, তাই না? আগে কখনো কেক বানাননি, এখন কেক বানাতে চাচ্ছেন, কিন্তু কীভাবে কেক বানাতে হয় না জেনে থাকলে এই পোস্টটি আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। কেক বানানোর সহজ রেসিপি শিখে নিলে ঘরে বসেই কেক বানাতে পারবেন। এতে করে দোকান থেকে কেক কিনতে হবে না এবং নিজের ইচ্ছে মতো কেক বানাতে পারবেন।
তো চলুন, কেক বানাতে যেসব উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো দেখে নেয়া যাক।
কেক বানানোর উপকরণ সমূহ
কেক বানাতে হলে আমাদের কিছু উপকরণ প্রয়োজন। এই উপকরণ দিয়ে কেক বানাতে হবে। আপনি যেহেতু আগে কখনো কেক বানাননি, এর মানে কেক বানাতে কী কী উপকরণ প্রয়োজন তা আপনার জানা নেই। নিচে কেক বানানোর রেসিপিগুলো উল্লেখ করে দিয়েছি। কেক বানাতে হলে এসব উপকরণ কিনে আনতে হবে।
- ময়দা – ২ কাপ
- কাঁচা ডিম – ৩ টি
- চিনি – ২ কাপ
- সাদা তেল – ১ কাপ
- গুঁড়ো দুধ – ১/২ কাপ
- ভ্যানিলা এসেন্স – ১ চা চামচ
- বেকিং পাউডার – ১ চা চামচ
- নুন – ১/২ চা চামচ
- ড্রাই ফ্রিটুস – ২ চামচ
উপরে উল্লেখ করে দেয়া উপকরণ গুলো কেক বানানোর সময় প্রয়োজন হবে। আপনার কাছে যদি উপরে উল্লিখিত উপকরণসমূহ না থাকে, তবে বাজার থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসবেন। কোনো উপকরণ না থাকলে কেক সম্পূর্ণরূপে বানানো হবে না এবং স্বাদের কমতি থেকে যাবে।
কেক বানানোর পদ্ধতি
প্রথম ধাপ – প্রথমে যেকোনো একটি পরিষ্কার পাত্রে ডিম, তেল এবং চিনি খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে মিশিয়ে নিবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না চিনির দানা ভালো করে গলে যাচ্ছে ততক্ষন অব্দি ভালো করে মিশিয়ে নিন।
দ্বিতীয় ধাপ – এবার ময়দা, বেকিং পাউডার, দুধ ও নুন চেলে নিবেন। এরপর ডিম, তেল এবং চিনির ওই মিশ্রণটির মধ্যে ময়দা, বেকিং পাউডার, দুধ ও নুন ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণগুলি অনেক সময় ধরে ফেটিয়ে ক্রীমের মতো তৈরি করে নিন। মিশ্রনের মাঝে যেন কোনো দানা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
তৃতীয় ধাপ – এবার মিশ্রণটির মধ্যে ড্রাই ফ্রিটুস ও ভ্যানিলা এসেন্স ভালো করে মিশিয়ে নিন। কেক বানানোর রেসিপি তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু কেক বানানো বাকী।
চতুর্থ ধাপ – এবারে প্রেসার কুকার ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে সিটি খুলে নিয়ে ঢাকা দিয়ে চুলোতে গরম করতে বসিয়ে দিন।
পঞ্চম ধাপ – এখন একটি কেক প্যানের মধ্যে তেল মাখিয়ে নিয়ে নিন। এরপর কেকের মিশ্রণটি প্যানের মধ্যে দিয়ে একটু ঝাকিয়ে নিন যাতে মিশ্রণে কোনো বাতাস থেকে না যায়। এবার প্রেসার কুকারে একটি স্ট্যান্ড উপর কেক প্যানটি বসিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। ৩৫ মিনিট ধরে এবার বেক হতে দিন।
ষষ্ঠ ধাপ – ৩৫ মিনিট হয়ে গেলে মিশ্রণটির মাঝে একটি কাঠি দিয়ে দেখুন কাঠির সাথে মিশ্রণ লেগে যাচ্ছে কি না। যদি লেগে না যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে কেক তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু, যদি দেখা যায় যে, কাঠির সাথে মিশ্রণ লেগে যাচ্ছে, তাহলে আরও কিছু সময় যাবত চুলোর উপরে তাপ দিয়ে রাখতে হবে। এর কিছু সময় পর আবারও কাঠি দিয়ে চেক করে দেখবেন।
সপ্তম ধাপ – এটাই কেক তৈরির অন্তিম ধাপ। এ ধাপে আপনাকে কেক প্যান সহ চুলো থেকে নামাতে হবে। এরপর, প্যান ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। যখন দেখবেন প্যান ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, তখন প্যান থেকে কেক বের করে নিয়ে ফ্রিজ এ রেখে দিবেন। ফ্রিজ এ রেখে কিছু সময় পর বের করে আপনার ইচ্ছে মতো করে কেক পরিবেশন করতে পারবেন। এটাই হচ্ছে বাসায় কেক বানানোর রেসিপি।
ময়দা দিয়ে কেক বানানোর রেসিপি
ময়দা দিয়ে নরমাল কেক বানাতে চাইলে উপরে উল্লেখ করে দেয়া রেসিপি অনুসরণ করে আপনি নিজেই কেক তৈরি করতে পারবেন। তবে, ময়দা দিয়ে কেক বানাতে চাইলে আপনাকে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে ময়দা অনেক সুন্দর করে চেলে নিতে হবে। ময়দা এমনভাবে চেলে নিতে হবে যেন এর মাঝে কোনো দানাদার কিছু না থাকে। এতে করে কেকের মান অনেক ভালো হবে। এরপর ময়দার সঙ্গে বাকী সকল উপকরণ সুন্দর করে মিশিয়ে কেকের জন্য ব্যাটার তৈরি করে নিতে হবে।
ব্যাটার যত সুন্দর করে ফেটিয়ে নিবেন, কেক তত সুন্দর হবে। উপরে ইতোমধ্যে কেক বানানোর উপকরণ এবং কেক তৈরির রেসিপি উল্লেখ করে দিয়েছি। তাই একই রেসিপির পুনরাবৃত্তি করলাম না। কেক বানানোর উপকরণ গুলো সংগ্রহ করে এই রেসিপি অনুসরণ করে নিজে থেকেই চকোলেট কেক, নরমাল কেক সহ ক্রিম দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কেক তৈরি করতে পারবেন।
কেক বানানোর রেসিপি বিষয়ক কিছু কথা
- কেক বানানোর রেসিপিতে যে উপকরণগুলোর কথা বলেছিলাম। সেখানে তেল এর কথা উল্লেখ করা ছিলো। আপনি চাইলে তেল এর পরিবর্তে বাটার(মাখন) ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি যদি চকোলেট কেক তৈরি করতে চান, তবে উপরে উল্লেখ করে দেয়া কেক বানানোর রেসিপি অনুযায়ী চকোলেট কেকও বানাতে পারবেন। এজন্য আপনাকে কেক তৈরির মিশ্রনের সঙ্গে কোকো পাউডার যুক্ত করতে হবে।
- কেক তৈরির মিশ্রণ তৈরির সময় সবগুলো উপাদান একসাথে করে ভালো করে ফেটিয়ে নিবেন। অর্থাৎ, সবগুলো মিশ্রণ একসাথে করে ভালো করে মাখিয়ে নিবেন। যত বেশি ফেটিয়ে নিবেন, কেক তত সুন্দর হবে। তাই, কেক তৈরির মিশ্রণটি একটু সময় নিয়ে ফেটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে কেকের স্বাদ বৃদ্ধি হবে এবং কেক দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে।
- কেকের উপর চিনি মেশানো পানি দিয়ে এরপর ইচ্ছেমতো ক্রিম দিয়ে কেক সাজিয়ে নিতে পারবেন। ক্রিম দিয়ে চাইলে যেকোনো লেখা কিংবা আকৃতি তৈরি করে নিতে পারেন।
- ময়দা দিয়ে কেক বানানোর সময়, ময়দা অনেক ভালো করে চেলে নিবেন। লক্ষ্য রাখবেন, যেন ময়দার মাঝে কোনো দানাদার কিছু না থাকে।
- চুলোতে কেক বানাতে গেলে একটা জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে। বেশি আঁচ দেয়া যাবে না। বেশি আঁচ দিলে কেকের নিচের অংশ পুড়ে যেতে পারে।
উপরে উল্লিখিত রেসিপি বিষয়ক টিপসগুলো মেনে আপনি চাইলে ঘরে বসে অনেক সুন্দর কেক বানাতে পারবেন। রেসিপি জানা থাকলে আপনি এখন থেকে নিজেই চেষ্টা করে সুন্দর সুন্দর কেক বানিয়ে আপনার পরিবারের সবার জন্য পরিবেশন করতে পারবেন।
সাধারণত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কেক না ফোলার কারণ কি?
কেক তৈরি করার সময় বেকিং পাউডার অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে কেক চুপসে যেতে পারে। এতে করে কেক ফোলার পরিবর্তে চুপসে যাবে। তাই, পরিমাণ মতো বেকিং পাউডার দিতে হবে।
কেকে বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায় কি?
কেক তৈরি করার সময় বেকিং সোডা ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে কেকের স্বাদ তেঁতো হয়ে যেতে পারে।
বেকিং পাউডার বেশি খেলে কি হয়?
কোনো কিছুর অতিরিক্ত পরিমাণ কখনোই ভালো হয় না। বেকিং পাউডারে রয়েছে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম। যা আমাদের শরীরের পাচনতন্ত্রে লবণের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কেক বানানোর রেসিপি শেয়ার করেছি। এই রেসিপি অনুসরণ করে যেকোনো ধরণের কেক তৈরি করতে পারবেন। তবে, আপনি চাইলে চাহিদামতো পরিমাণ বা উপকরণ পরিবর্তন বা সংযোজন করতে পারেন।
আরো পড়ুন: নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম