ক্যালসিয়াম একটি খনিজ উপাদান। শরীরের গড়ন ও গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দাঁত এবং হাড়ের গঠন এর জন্য ক্যালসিয়াম এর গুরুত্ব অপরিসীম।
কোনো মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি দেখা দিলে নানা সমস্যার শুরু হয়। হাটা চলা উঠা বসার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বেশিরভাগ সময় নারীরা খুব কম বয়সেই ক্যালসিয়াম এর ঘাটতির কারণে নানা সমস্যায় পড়ে।
ঘাড়ের ব্যাথা, হাড়ের ব্যাথা, জয়েন্ট এ ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা, কোমরে ব্যথা, হাড় ক্ষয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ঘুম ভালো না হওয়া এমনকি শরীরে প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভব করা ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ক্যালসিয়াম এর অভাবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখা প্রয়োজন। আজকে আমরা জেনে নিবো ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কি কি।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
কমলাঃ প্রতি একটি কমলায় রয়েছে ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। যাদের গ্যাস্ট্রিক এর অনেক বেশি সমস্যা নাই তারা চাইলে দিনে ১-২ টি কমলা খেতে পারেন। কমলা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক জাতীয় খাবার যা আপনার শরীরে মেটাবলিক রেট বাড়াতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
খেজুরঃ প্রতি এক কাপ খেজুরে রয়েছে ৫৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। খেজুরের পুষ্টি গুন অনেক বেশি। এর মধ্যে খনিজ মিনারেলস ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। ছোট বাচ্চা থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সকলেরই প্রতিদিন কমপক্ষে ২ টি খেজুর খাওয়া উচিত।
পালংশাকঃ প্রতি এক কাপ পালংশাকে রয়েছে ২৪৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। পালংশাক এর দাম হাতের নাগালে হওয়ায় আমরা চাইলে তা কিনে খেতে পারি। নতুবা আমরা খুব সহজেই ঘরেও চাষ করতে পারি।
যাদের কিডনির কোনো সমস্যা বা ইউরিক এসিড বাড়তি তারা পালংশাক খাবেন না। এছাড়া যাদের এরকম কোনো সমস্যা নেই তারা চাইলে প্রতিদিন ৭০-১০০ গ্রাম পালংশাক খেতে পারেন।
পালংশাক রান্নার আগে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। রান্নার ১ ঘন্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলুন এবং এই শাক কখনো দ্বিতীয়বার গরম করে খাবেন না।
কাঠ বাদামঃ প্রতি এক কাপ কাঠবাদামের রয়েছে ২৫১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। কাঠ বাদাম যেকোনো বয়সের মানুষ খেতে পারেন। ছোট বাচ্চাদের এই বাদাম গুড়ো আকারে দুধের সাথে মিক্স করে খেতে পারলে এটি তার হাড়ের গঠন এবং শারীরিক নানা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।
কিন্তু কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে এর উপরের বাদামী বর্ণের পাতলা চামড়া কখনোই খাওয়া উচিত নয়। এটি সারারাত ভিজিয়ে রাখলে পরদিন সকালে খুব সহজেই ঘসে তা পরিষ্কার করে ফেলা যায় এবং বাকি বাদাম টুকুই যেকোনো ভাবে চাইলে গ্রহণ করা সম্ভব।
ডিমঃ প্রতি একটি ডিমে রয়েছে ৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য ডিম একটি সাধারণ খাবার। ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন যারা রেগুলার জিম করে তাদের মাসলস গেইন করতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তায় ও মানুষ রুটি পরোটার সাথে ডিম খেতে পছন্দ করে। এছাড়াও ডিম শরীরের নানা ধরনের উপকার করে থাকে।
তিল বীজঃ প্রতি এক কাপ তিল বীজে রয়েছে ১৪০৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। কালো তিলে ক্যালসিয়াম এর পরিমান সবচেয়ে বেশি। সাদা তিল ও খাওয়া যায়। মাত্র এক চা চামচ তিলেই রয়েছে ৮৮-৮৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। তিল সকাল বিকাল যেকোনো সময়ই খাওয়া যাবে। কিন্তু ভারী খাবার এর সাথে তিল খাওয়া যাবেনা। দুধ বা যেকোনো হালকা খাবারের সাথে ভালো ভাবে চিবিয়ে তিল খেতে পারেন।
সজনে পাতাঃ সজনে পাতায় ক্যালসিয়াম এর পরিমান অনেক বেশি থাকে। এতে কমলার তুলনায় প্রায় ৭ গুন বেশি ভিটামিন সি এবং কলা থেকেও ১৫ গুন বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। এতে দুধের চেয়ে বেশি ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং খনিজ উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে। এই পাতা গুড়ো করে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এটি শরীরে অনেক বেশি শক্তি দেয় এবং শরীর থেকে ক্লান্তি দূর করে। তাই একে সোর্স অফ এনার্জি বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ সজিনা পাতার উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি, থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
ঢেঁড়সঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে রয়েছে ৮২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। ঢেঁড়স ভাজি পছন্দ করেন না এমন মানুষ বাংলাদেশে অনেক কম রয়েছে। খুব কড়া ভাজি করার চেয়ে অল্প আচে ঢেকে ঢেঁড়স ভাজি করলে এর মধ্যে পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে থাকে।
কিসমিসঃ প্রতি এক কাপ কিসমিসে রয়েছে ৮৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। এটি হাড় মজবুত করার পাশাপাশি শরীরের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে ও সাহায্য করে। রক্তশূন্যতা যাদের রয়েছে তাদের জন্য কিসমিস এক আদর্শ খাবার।
কারো ডায়েবিটিস এর সমস্যা না থাকলে প্রচুর পরিমাণে কিসমিস খেতে পারেন। রাতে ৭-৮ টি কিসমিস একটি পরিষ্কার বাটিতে ভিজিয়ে সকালে সেই পানিসহ পান করুন। এতে শারীরিক গড়ন ও গঠন বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তস্বল্পতা ও কমতে শুরু করবে।
ছোলাঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় রয়েছে ১০৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। ছোলা সিদ্ধ না করে কাচা খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাই প্রতি রাতে একটি পরিষ্কার বাটিতে ৫-৬ টি ছোলা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে তা চিবিয়ে খেতে পারলে এর পুষ্টিগুন বজায় থাকে। এভাবে খেতে পারলে শরীরের হাড় যেমন মজবুত হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও দূর হয়।
গরুর দুধঃ প্রতি এক কাপ গরুর দুধে রয়েছে ৩০৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। প্রতিদিন এক কাপ গরুর দুধ খেতে পারলে কম বয়সে হাড়ের ক্ষয় বা শরীরে নানা প্রকার ব্যাথা জনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
আরো পড়ুনঃ দুধের উপকারিতা, দুধের পুষ্টি উপাদান কি কি
মসুর ডালঃ প্রতি এক কাপ মসুর ডালের রয়েছে ১০৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। প্রতিদিন খাবার তালিকায় মসুর ডাল রাখতে পারলে তা ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ করতে পারে।
এছাড়াও আরও কিছু সবজি এবং খাবার রয়েছে তা আমরা প্রতিদিনকার জীবনে গ্রহণ করে থাকি।এর তালিকা ও নিচে দেয়া হলো:
পাতাকপিঃ প্রতি এক কাপ বাঁধাকপিতে রয়েছে ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
রসুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে রয়েছে ১৮১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
মুগ ডালঃ প্রতি এক কাপ মুগডালে রয়েছে ২৭৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
সয়াবিনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে রয়েছে ২৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
দইঃ এক কাপ দই এর রয়েছে ২৯৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
আরো পড়ুনঃ দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিয়ম, ওজন কমাতে দই ও তিসি বীজ এইভাবে খান
ছাগলের দুধঃ প্রতি এক কাপ ছাগলের দুধে রয়েছে ৩২৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
ওলকপিঃ এক কাপ ওলকপিতে রয়েছে ২৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
বাঁধাকপিঃ প্রতি এক কাপ বাঁধাকপিতে রয়েছে ৪২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
পনিরঃ প্রতি ১০০ গ্রাম পনিরের রয়েছে ৭২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
প্রতিদিন খাবার তালিকায় উপরোক্ত খাবার এর এক দুইটি উপাদান যোগ করে রাখলে ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ হবে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কম খেলে খুব কম বয়সে হাড়ের নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তখন ক্যালসিয়াম এর ঔষধ গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকেনা।
আরো পড়ুনঃ