আমাদের মাঝে অনেকেই আছে, যারা এখনো জানাজার নামাজের নিয়ম জানেন না। আপনিও যদি জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম না জেনে থাকেন, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে জানাজার নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, জানাজার নামাজের দোয়া, জানাজার নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। জানাজার নামাজ হচ্ছে ফরজে কিফায়া। জানাজার নামাজ মুসল্লিদের জন্য সওয়াব বৃদ্ধি করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থীর সুপারিশ। জানাজার নামাজে মুসল্লি সংখ্যা যত বেশি হবে, সে নামাজের ফজিলত তত বেশি হবে। জানাজায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই ভালো। এ নামাজে কাতার সংখ্যা বেজোড় হওয়া উত্তম।
প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহন করে এবং মৃত্যুবরণ করে। জন্ম আছে যে প্রাণীর, তার মৃত্যুও আছে। একজন মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজার নামাজ আদায় করতে হয়। অনেকেই জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। তাই, নিচে আমি জানাজার নামাজের নিয়ম উল্লেখ করে দিয়েছি। এ নিয়মগুলো অনুসরণ করে জানাজার নামাজ আদায় করলে আপনি যেমন সাওয়াব পাবেন, ঠিক তেমনি মৃত ব্যক্তি তার বেঁচে থাকা কালিন যেসব পাপ করেছে, সেগুলো থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য সুপারিশ পেয়ে যাবে। তো চলুন, জানাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম দেখে নেয়া যাক।
জানাজার নামাজের নিয়ম
প্রতিটি নামাজ আদায় করার সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। ঠিক তেমনি, জানাজার নামাজ আদায় করার কিছু নিয়ম রয়েছে। আমরা যদি এসব নিয়ম মেনে জানাজার নামাজ আদায় করি, তবেই আমাদের নামাজ আল্লাহ্র কাছে কবুল হবে। কিন্তু, এ নিয়ম লঙ্ঘন করে নামাজ আদায় করলে আমাদের নামাজ আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ্ আমাদের মাঝে কার দোয়া-আমল কখন কবুল করেন, সেটা বলার সাধ্য আমাদের কারও নেই। কিন্তু, নবী কারিম (স.) আমাদের যেভাবে করে নামাজ আদায় করতে বলে গেছেন, সেভাবে করেই আমরা নামাজ আদায় করবো। তো চলুন, জানাজার নামাজের নিয়মগুলো দেখে নেয়া যাক।
- জানাজার নামাজে ইমাম মৃতের বুক বরাবর দাঁড়াবে। (বুখারি, হাদিস: ১২৪৬)
- ইমামের পেছনে মুক্তাদিরা কাতার হবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩১০২)
- সবাই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে জানাজা আদায়ের নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস: ১)
- নিয়ত : মনে মনে নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মুখে পড়া ফরজ নয়। তাই মনে মনে শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে — ‘জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়াহ, চার তাকবিরের সহিত এই ইমামের পেছনে আদায় করছি। নামাজ আল্লাহর জন্য দোয়া মাইয়্যেতের জন্য।
- অতঃপর, তাকবিরে তাহরিমা (اَللهُ اَكْبَر) বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত ওঠাবে।
- অতঃপর, ছানা পড়বে-
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ-
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
- এরপর (দ্বিতীয়) তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবে। এই তাকবিরে হাত ওঠাবে না–
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।’ (নাসাঈ ১২৯১)
- তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না।
- তারপর ৪র্থ তাকবির বলবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনী ১৮৫৩, ইবনে আবি শায়বা ৩/২৯৫)।
- এরপর ডান এবং বাম দিকে সালাম ফেরাবে। (সুনানে কুবরা ৭২৩৮)
- ইমাম তাকবির উচ্চ স্বরে বলবে এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চ স্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চ স্বরে তাকবির ও দোয়া-দরুদ পড়বে। (আবু দাউদ ২৭৮৪, সুনানে কুবরা ৭৪৩৩)
বালেগ পুরুষ বা নারীর জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া –
বালেগ পুরুষ কিংবা নারী যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার জানাজার নামাজের নিয়ম অন্যান্য জানাজার মতই। কিন্তু, জানাজার নামাজের দোয়া ভিন্ন। বালেগ পুরুষ বা নারীর জানাজার নামাজে আলাদা একটি দোয়া পড়তে হয়। নিচে আমি বালেগ পুরুষ বা নারীর জানাজার নামাজের দোয়া উল্লেখ করে দিয়েছি। এখানে থেকে এই দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا، وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيرِنَا، وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ، اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া ছগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহু ওয়া লা তুদিল্লানা বাদাহু।’
অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ইমানের সাঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সাওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।’ (আবু দাউদ ৩২০১, তিরমিজি ১০২৪)
ছেলে শিশুর জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া –
ছেলে শিশু যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার জানাজার নামাজের নিয়ম অন্যান্য জানাজার মতই। কিন্তু, জানাজার নামাজের দোয়া ভিন্ন। ছেলে শিশুর জানাজার নামাজে আলাদা একটি দোয়া পড়তে হয়। নিচে আমি ছেলে শিশুর জানাজার নামাজের দোয়া উল্লেখ করে দিয়েছি। এখানে থেকে এই দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন।
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعًا وَّمُشَفَّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
মেয়ে শিশুর জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া –
মেয়ে শিশু যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার জানাজার নামাজের নিয়ম অন্যান্য জানাজার মতই। কিন্তু, জানাজার নামাজের দোয়া ভিন্ন। মেয়ে শিশুর জানাজার নামাজে আলাদা একটি দোয়া পড়তে হয়। নিচে আমি মেয়ে শিশুর জানাজার নামাজের দোয়া উল্লেখ করে দিয়েছি। এখানে থেকে এই দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন।
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعَةً وَّمُشَفَّعَة
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে জানাজার নামাজের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। জানাজার নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারবেন যদি এই পোস্টটি থেকে জানাজার নামাজ আদায় করার নিয়মগুলো মেনে চলেন এবং জানাজার নামাজের দোয়াগুলো মুখস্ত করে রাখেন।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম