Saffron শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। যেটি আমাদের বাংলাদেশে জাফরান নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ১ কেজি জাফরানের মূল্য ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এটি যতটা দামী ততটাই উপকারী। দুধের মধ্যে জাফরান দিয়ে পান করলে এটি অনেক উপকারী হয়ে ওঠে।
বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। এমনকি জাফরান ত্বকের সৌন্দর্যের জন্যও খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। এজন্য মায়েরা তার বাচ্চাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিজের খাবারের মধ্যে জাফরানকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন।
শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধনী ব্যাক্তিরা তাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় জাফরান কে অবশ্যই রাখে৷
পৃথিবীতে উৎপাদিত ৮৫ ভাগ জাফরান উৎপাদন হয় ইরানে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে জাফরানের জমি রয়েছে। যেমন: ভারত, আফগানিস্তান, আমেরিকা এবং স্পেনে জাফরান উৎপাদিত হয়। কিন্তু আমাদের সমগ্র পৃথিবীতে জাফরান চাষের জন্যে জমি রয়েছে খুবই কম।
জাফরান উৎপাদন করা অনেক কষ্ট সাধ্য। এগুলো উৎপাদন করতে কোন মেশিন ব্যবহার করা যায় না। জাফরান উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজন হয় মানুষের। যাদের অনেক সময় নিয়ে ফুল থেকে জাফরান বের করতে হয়। তারপর এগুলোকে শুকাতে হয়৷ এরপর এগুলো মার্কেটে বিক্রি হওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে৷
জাফরান ক্রোকাস ফ্লাওয়ার থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই ফুল খুব কম সময়ের জন্যই ফুটে থাকে৷ যেইদিক এই ফুল ফোটে সেই দিনই এই ফুল কাটতে হয়। কারণ খুব কম সময়ের মধ্যে এটি মরে যায়। এছাড়াও একটি ফুলের জাফরান পাওয়া যায় খুবই সামান্য।
১ কেজি শুকনো জাফরান উৎপাদন করতে ৫০ হাজার ফুলের প্রয়োজন হয়। জাফরান উৎপাদন করতে অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। কারণ প্রত্যেকটি জাফরান হয়ে থাকে অনেক সুক্ষ। প্রত্যেক টি জাফরানকে হাত দিয়ে ফুল থেকে আলাদা করতে হয়।
জাফরান উতপাদনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। এছাড়া ফুল থেকে জাফরান আলাদা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা।
জাফরানের উপকারিতাঃ
স্বর্ণের চেয়েও দামী জাফরানের উপকারিতার শেষ নেই। নানা রোগে জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। জাফরানে রয়েছে বিষ্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। মাত্র ১ চিমটি জাফরান আপনাকে প্রায় ১৫ টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক জাফরানের বিষ্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে ~
১. জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সমস্যা জনিত রোগ দূর করে।
২. হজম সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে।
৩. জাফরানের পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
৪. জাফরানের নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে সহায়তা করে, এতে করে মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যাথা এবং মাসিক শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
৬. নিয়মিত জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাসের নানা ধরনের সমস্যা যেমন, অ্যাজমা, পারটুসিস কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে সাহায্য করে।
৭. জাফরানের ক্রোসিন নামক এক ধরনের উপাদান আছে যা জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
৮. জাফরানে রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে।
৯. সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসেজ করলে মাড়ি, দাঁত ও জিহবার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১০. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধে করে জাফরান।
১১. জাফরানের অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যাথা, জয়েন্টের ব্যাথা, মাংস পেশির ব্যাথা এবং দূর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ওষুধ।
১২. অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য একটু জাফরান।
১৩. জাফরানে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।
১৪. জাফরান দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
১৫. মস্তিষ্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাফরান স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করে। এছাড়াও আলজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাচায়।
১৬. কিডনি, যকৃত এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান।
১৭. চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে যষ্টি মধু এবং দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন।
১৮. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে ত্বককে ভেতর থেকে গ্লোয়িং করে তুলতে নিয়মিত দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় 15 টি ঘরোয়া প্রতিকার
- চুলে তেল দেয়ার সঠিক নিয়ম – How To Apply Hair Oil
গর্ভবতী মা এর জন্য জাফরানের উপকারিতাঃ
গর্ভাবস্তায় পরিমাণ মতো জাফরান খেলে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। যেমন :
১. জাফরানের স্বল্পস্থায়ী বৈশিষ্ট্যগুলি হজম উন্নতি, রক্ত প্রবাহ উন্নতি, ক্ষুধা বৃদ্ধি এবং হজম উন্নতি হিসাবে দেখানো হয়েছে।।
২. রক্তচাপ: ইঁদুর নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে জাফরানের ক্রোকিনএবং সাফ্রানাল সহ উপাদানগুলিতে বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রক্তচাপের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর ফলে, গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ কমতে পারে।
৩. ব্যথা এবং বাধা: আপনার মাংসপেশি এবং হাড়গুলি ক্রমবর্ধমান শিশুকে উপস্থাপন করতে প্রসারিত করে। এটি জয়েন্টগুলি এবং পেটে বাধা এবং ব্যথা হতে পারে। অ্যান্টি-স্প্যাসমডিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি এই ক্র্যাম্পগুলিকে প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারে।
৪. ঘুম: কিছু মহিলা, যারা গর্ভাবস্থায় ভাল ঘুম পেতে অসুবিধে হন তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে এবং ভাল ঘুমাতে জাফরান ব্যবহার করেন। জাফরানের শোষক এবং সম্মোহন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি এই জাতীয় ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়।
৫. মেজাজ বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় মিশ্র আবেগগুলির মধ্যে উদ্বেগ সাধারণ। জাফরান একটি এন্টি-ডিপ্রেশন হিসাবে পরিচিত এবং এটি আপনার মেজাজকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
৬. হার্টের স্বাস্থ্য: ইরানে করা একটি পর্যালোচনা অনুযায়ী, জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ধমনী এবং রক্তনালীগুলির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।
৭. শ্রম সহজ করতে পারে: জাফরান জরায়ু সংকোচনের প্রভাবিত হিসাবে পরিচিত। এটি সার্ভিকাল পাকাতে সহায়তা করে বলে মনে করা হয় এবং শ্রমের সময় নেওয়া শ্রম সহজ করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যে ঘুমের উপকারিতা, এন্টি এজিং ফেসপ্যাকঃ বয়সের তুলনায় নিজেকে তরুণ দেখান
চুলের যত্নে জাফরানঃ
জাফরান যেকোন খাবারে রাজকীয় স্বাদ এবং গন্ধ আনতে ব্যবহৃত হয়। আপনি কি জানেন যে এই সুগন্ধযুক্ত মশলাটি আপনার চুলের জন্যও খুব ভাল?
সুতরাং টাক পড়াসহ ও চুলের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি জাফরানের উপর নির্ভর করতে পারেন।
টাক পড়া বন্ধ করতে:
জাফরানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুল পড়া দ্রুত বন্ধ করতে পারে। চুলের গোড়ায় গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুল মজবুত করে তোলে জাফরান, ফলে চুলের বৃদ্ধিও দ্রুত হয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: কয়েকটি জাফরান অল্প দুধে ভিজিয়ে রাখুন। তাতে যোগ করুন অল্প যষ্টিমধু। মিশ্রণটি একটু চটকে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট চুলে আর স্ক্যাল্পে ভালো করে ঘষে মেখে নিন। ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টাক পড়া বন্ধ করার উপায়: পরীক্ষিত সমাধান, 8 টি খাবার যা চুল পড়ার কারণ, চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম
খুশকি কমাতে:
একটানা শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি হ্রাস পায়, তবে চুলও খারাপ করে। খুশকি কমাতে পরিবর্তে জাফরানের উপর নির্ভর করুন।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: এক চিমটি জাফরান পাউডার নিন। এক গ্রাম গোলমরিচ গুঁড়া দিন। এবার এই মিশ্রণটি 50 মিলি ঠাণ্ডা চাপযুক্ত তিলের তেলে মিশ্রিত করুন। মাঝারি আঁচে হালকা গরম করুন এবং চুল এবং মাথার ত্বকে লাগান। নিয়মিত আবেদনের কয়েক দিন পরে খুশকি চলে যাবে।
আরো পড়ুনঃ চুল থেকে খুশকি দূর করার উপায়, চুলে আপেল সিডার ভিনেগার লাগানোর উপকারিতা
চুল ক্ষতিগ্রস্থ হলে:
রোদ, দূষণ, রাসায়নিক চিকিত্সার মতো বিভিন্ন কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। জাফরান ব্যবহার করুন এবং হারিয়ে যাওয়া চুলের স্বাস্থ্য ফিরে পান।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: এক চা চামচ জাফরান পাউডার নিন এবং এতে বাদাম তেল বা জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি 20 মিনিটের জন্য অল্প আঁচে গরম করুন। তারপরে শীতল করুন এবং ঘরের তাপমাত্রা এবং বোতলে রাখুন। জাফরানের মান ধীরে ধীরে তেলের সাথে মিশতে শুরু করবে। এবার এই তেল থেকে কিছুটা নিয়ে চুল ও মাথার ত্বকে নিয়মিত লাগান। একদিকে যেমন এটি ধীরে ধীরে চুল পড়া কমাবে তেমনি চুল পড়াও কমে যাবে। প্রতিবার বোতলটি ব্যবহার করার সময় কাঁপুন।
আপনি যখন আসল জাফরান ব্যবহার করবেন কেবল তখনই আপনি এই গুণাগুণটির সুবিধা পাবেন যা অনেক গুণাবলীতে পূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ