তোকমার বৈজ্ঞানিক নাম Hyptis suaveolens.একে কেউ কেউ বিলাতি তুলসি নামেও চেনে।ছোট কালো রঙের একটি বীজ তোকমা,যা মূলত মিষ্টি পানীয় কিংবা শরবত তৈরীতে ব্যাবহার করা হয়।আমাদের দেশে তোকমা খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি বীজ দানা।এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ, আজ আমরা তা সম্পর্কে জানব।
★★তোকমার পুষ্টিগুণঃ
এক কাপ পরিমাণ তোকমা দানা থেকে প্রতিদিন আমরা ম্যাংগানিজ ৩০%,ক্যালসিয়াম ১৮% পাওয়া যায়।তাছাড়া লৌহ,থায়ামিন, দস্তা,ফসফরাস, ভিটামিন -বি,ফোলেইট এবং রিবোফ্লাভিন রয়েছে।
★★তোকমা দানার উপকারিতা ঃ
√দেহের তাপমাত্রা কমায়ঃ
তোকমা গরমে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই গরম আবহাওয়া দেশগুলোতে অনেক মানুষ তোকমার শরবত পান করে থাকে।
√ঠান্ডা -কাশির সমস্যা দূর করতেঃ
তোকমা বীজে রয়েছে অ্যান্টি-স্পাজমোডিক প্রভাব।যা উক্ত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
√হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ও দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করেঃ
অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক কার্যক্রম কোলেস্টেরল এর সমস্যা কমিয়ে থাকে।তোকমা বীজের তেল লক্ষণীয়ভাবে হাই লিপিড প্রোফাইল এর মাএা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।তাছাড়া দুশ্চিন্তা কমাতে ব্যাবহার হয়ে থাকে।
√মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ
তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল,অ্যান্টি -ভাইরাল এবং অ্যান্টি -ফাংগাল উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতর কোন ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং মুখের দুর্গন্দ তৈরী করতে পারে না।
√কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
√রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহ উপকারী কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে রক্তে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আনে। যা কী না ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, সুস্থ হার্ট এবং হাড় গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
√ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অনেকেই শরীরের ওজন কমাতে চায়। সে জন্য তোমকা অনেক সহায়ক খাদ্য হিসেবে উপকার করে থাকে। এতে কেবল আঁশই থাকে না। তোকমা শরীরে অনেক শক্তিও সরবরাহ করে। আবার যদি তোকমা দানা বাদাম, শুকনো ফলের সাথে মিশ্রণ করে একমুঠো পরিমাণ খাওয়া যায় তাহলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত থাকা যায়। এ জন্য খুব সহজেই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
√খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
তোকমা দানায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে। এটি শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও তোকমা দানায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ, ক্যানসার কোষ প্রতিরোধ এবং বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে। এক চা কাপ পরিমাণ তোমকা দানায় ৩০ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম থাকে। যা শরীরের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪৮ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
√দেহের তাপ কমায়:
তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে। এটি সুস্বাদু করার জন্য চিনি, মধু এবং কোথাও কোথাও নারিকেল দুধ দেওয়া হয়।
√এসিডিটি দূর করে:
তোকমা এসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের এসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে। এ জন্য পানিতে সামান্য তোকমা বীজ ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
√ঠাণ্ডার সমস্যায়:
তোকমা বীজে রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
√সুস্থ ত্বক ও চুল:
ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
★★ব্যবহারের কিছু নিয়ম ও সতর্কতা:
✅তোকমা খাওয়ার পূর্বে তোকমা বীজ পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
✅বীজগুলো একদম বড় হয়ে ফুলে উঠলে এরপর সেটা খাওয়া যাবে।
✅শিশুদের এটা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।যেহেতু এটা বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায় ভেজানোর পর।
✅গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তোকমা গ্রহণ করা উচিৎ।
✅প্রতিদিন তোকমা বীজ খেতে চাইলে এক চা চামচ গ্রহণ করাই কিন্তু যথেস্ট হবে।