ভিটামিন ই জাতীয় খাবার তালিকা এবং এর উপকারিতা

আমাদের মধ্যে এমন কয়জন আছে, যারা ভিটামিন, মিনারেলস বা খাদ্যের ছয়টি উপাদান আমাদের দৈনন্দিন খাবারের যোগ করে একটি খাদ্য তালিকা বানানোর চেষ্টা করে থাকি? এই সংখ্যা খুবই কম। যার জন্য প্রতিনিয়তই আমাদের শরীরে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ভিটামিন, আমিষ, প্রোটিন ইত্যাদির অভাব জনিত সমস্যা। এই জটিলতা থেকে বাচতে আমাদের রেগুলার পোস্ট গুলো ফলো করতে পারেন। যেখানে আমরা খাদ্য ও পুষ্টির পাশাপাশি লাইফস্টাইল নিয়েও আলোচনা করে থাকি। আজকের পোস্টে আমরা ভিটামিন ই জাতীয় খাবার তালিকা ও এর উপকারিতা এবং এর অভাবে সংঘটিত রোগ বা সমস্যা সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।

ভিটামিন ই জাতীয় খাবার তালিকা

আমাদের দেশের কিছু সাধারণ খাদ্য দিয়েই শুরু করছি। কলিজা, দুধ, ডিমের কুসুম, গরুর মাংস, মাছ, শাকসবজি, ভুট্টা, গাজর, সয়া, অলিভ ওয়েল এই খাবার গুলো আমাদের জন্য অনেক সাধারণ কিছু খাবার যা নিত্যদিন নানাভাবে আমরা গ্রহণ করে আসছি। এসব খাবারে ভিটামিন ই পরিমাণ অনেক বেশি। নিচে বিভিন্ন খাদ্যে প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন ই এর পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাই এ আছে ১১.৬৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। জলপাই এর আচার ভিটামিন ই এর উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। কাঁচা জলপাই আচার জলপাই এর আচার হলো ভিটামিন ই এর অন্যতম একটি ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাই আচারে রয়েছে ৩.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

২. প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে ২.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই রয়েছে। এছাড়াও এটি আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের আধার। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা পালংশাকে ভিটামিন ই রয়েছে ৩.৫৪ মিলিগ্রাম। কিন্তু পালংশাক কখনোই একবার রান্না করে আবার গরম করে খাবেন না।

৩. কিছু কিছু ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে ভিটামিন ই এর পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় যেমন বেসিল পাতা এবং অরিগানো। এগুলোর প্রতি ১০০ গ্রাম রয়েছে ৭.৪৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই। পাস্তা ও নানা নাস্তা তৈরির উপকরণ হিসেবে এই দুইটি উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪. কচুর মূল ও কচুর মুখী এই দুইটি শুধু আয়রন ও ক্যালসিয়াম এর সর্বোৎকৃষ্ট উৎস নয় বরং এগুলো ভিটামিন ই এর ও ভালো উৎস। কচুর মূল হয়ে থাকে শক্ত ও কচুর মুখী হয়ে থাকে নরম প্রকারের। এগুলো আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য এবং এগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মূলে রয়েছে ২.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন। এবং প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মুখীতে রয়েছে ২.৩৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

See also  মালটা খাওয়ার উপকারিতা

৫. বাদাম ছোট থেকে বড় প্রতিটি মানুষেরই অনেক পছন্দের একটি খাবার। এবং বাদাম ভিটামিন ই এর অনেক ভালো একটি উৎস।বিভিন্ন ধরনের বাদামে বিভিন্ন মানের ভিটামিন ই পাওয়া যায়।

চিনাবাদাম
প্রতি ১০০ গ্রাম চিনাবাদামে রয়েছে ১০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই। চিনাবাদাম নানা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।চিনাবাদাম এর মাখন এ ও ভিটামিন ই বিদ্যমান থাকে।

পেস্তা বাদাম
পেস্তাবাদামে প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৯.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এটিও বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার হয়ে থাকে।

কাঠবাদাম
প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে রয়েছে ২৬.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এটি সবচেয়ে বেশি দামি বাদাম হওয়ায় সচরাচর খাবারে ব্যবহার হয়না এবং এটি খালি খেতে হলে আগের রাতে ভিজিয়ে উপরের বাদামী বর্ণের আবরণ পরিষ্কার করে খাওয়া উচিত। এটি নানা মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহার হয়।

৬. প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজ এ রয়েছে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। অর্থাৎ কারো শরীরে যদি ভিটামিন ই এর অনেক বেশি কমতি দেখা দেয়, তারা একটানা দুই মাস যদি এই সূর্যমুখী বীজ খেতে পারেন তাহলে ভিটামিন ই এর চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। এমনকি সূর্যমুখী তেলেও ভিটামিন ই এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এসব তেল রান্নার কাজে এবং সালাদ, স্যুপ, গার্নিশে ব্যবহার করা হয়। এসব তেল হৃদরোগী এবং যাদের রক্তের চাপ বেশী বা কোলেস্টেরল বেশি তারা নিয়মিত খেতে পারেন। যদিও এর দাম তূলনামূলক বেশি হওয়ায় এর ব্যবহার কিছুটা কম হয় বাংলাদেশে।

৭. এপ্রিকোটকে বলা হয় খাদ্যআঁশ। এটি নানা ভিটামিন এর উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে পরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রামে শুকনো এপ্রিকোটে রয়েছে ৪.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই।

৮. আপনারা জেনে অবাক হবেন লাল মরিচের গুঁড়ায় সর্বোচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মরিচের গুঁড়াতে রয়েছে ২৯.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই এবং এশিয়ান হিসেবে আমাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো আমরা আমাদের রোজকার খাবারে এই মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। যার ফলে যারা জ্বাল কিছুটা বেশি খান তাদের শরীরে ভিটামিন ই এর অভাব সহজেই ঘটে না।

এছাড়াও আরো কিছু খাদ্যের তালিকা রয়েছে।যেমন :

  • মাসকলাই ডাল ১.৯ মিলিগ্রাম
  • মুগ ডাল ১.৯ মিলিগ্রাম
  • তিল ২ মিলিগ্রাম
  • সবুজ কচুশাক ২.০২ মিলিগ্রাম
  • পেস্তা ২.৩ মিলিগ্রাম
  • দারচিনি গুঁড়া ২.৩২ মিলিগ্রাম
  • ছোলার ডাল ২.৮৮ মিলিগ্রাম
  • হলুদ ৩.১ মিলিগ্রাম
  • গরুর দুধ ৩.৩১ মিলিগ্রাম
  • কালো কচু শাক ৩.৩৬ মিলিগ্রাম
  • মুরগির মাংস ৪.১৬ মিলিগ্রাম
  • সরিষা ৫.০৭ মিলিগ্রাম
  • সয়াবিন তেল ১৬.০৬ মিলিগ্রাম
  • মেয়োনিজ নোনতা ১৬.১৭ মিলিগ্রাম
  • শুকনা মরিচ ১৯.৭১ মিলিগ্রাম
  • কটলিভার ৩৩ মিলিগ্রাম
  • পাম তেল ৩০.১২ মিলিগ্রাম
See also  Best Food for Rottweiler Puppy: Top Nutrition Choices

আরো পড়ুনঃ বাদামের উপকারিতা, দুধের পুষ্টি উপাদান কি কি

ভিটামিন ই এর উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে: ভিটামিন ই শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ব্যালেন্স করে এবং শরীরের এই সকল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিকেল এর সাথে লড়াই করে, শরীরে একটি শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরি করে।

কোলেস্টরল সমতা বজায় রাখা: আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের সমতা বজায় থাকার উপর নির্ভর করে হরমোনের সমতা বজায় থাকা। ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন কোষ এমনকি স্নায়ু গুলো ও ঠিকমতো কাজ করে। কিন্তু কোন কারণে যদি কোলেস্টেরলের সমতা বজায় না থাকে অর্থাৎ শরীর থেকে ভালো করে কমে যায় এবং খারাপ খারাপ কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ই আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে: বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চোখের নানা সমস্যা দেখা দেয়। সেইসব সমস্যা কখনো কখনো অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। তাই তখন বেশি বেশি ভিটামিন ই খাওয়া উচিত। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন ই তে রয়েছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস। ভিটামিন ই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এর সাথে মোকাবিলা করার মতো কোষ তৈরি করে থাকে। যা শরীরে একটা শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরি করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ক্ষত সারাতে সাহায্য করে: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ থাকার কারণে ভিটামিন ই খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। এই একই কারণে শরীরের কোথাও ক্ষত হলে তা সহজেই শুকিয়ে যায়। বাজারে এরকম অনেক তেল ও পাওয়া যায় যা ক্ষতস্থানে লাগালে তা শুকিয়ে যায়। সেসব তেল বা ঔষধ অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ মতোই ব্যবহার করা উচিত।

ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই: ভিটামিন ই ত্বকের জন্য অনেক ভালো তা আমরা জানি। নিত্যদিন আমরা ত্বকে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। এইসব প্রসাধনী কখনো কখনো ক্যামিকেল দিয়ে মিশ্রিত থাকে। দীর্ঘদিন এসব প্রসাধনী ব্যবহার এর ফলে একটা প্রভাব ত্বকে পড়ে। যার ফলে ত্বকে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সেই অবস্থায় ত্বকে ভিটামিন ই যুক্ত অয়েল বা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত সেবন করলে ত্বকের অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং ত্বকের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে দূর হয়। ভিটামিন ই ট্যাবলেট খাওয়ার আগে যে কারোই অবশ্যই ত্বকের একজন চিকিৎসক দেখানো উচিত এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত।

See also  বাদামের উপকারিতা

চুলের যত্নে ভিটামিন ই: অনেক সময় আমাদের চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। চুল ঝড়ে পড়ে। চুলের যেকোনো সমস্যায় ভিটামিন ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভিটামিন ই তে এমন কিছু উপাদান আছে যা চুলের গোড়া মজবুত থেকে শুরু করে খুসকি দূর করা পর্যন্ত যেকোনো সমস্যা সমাধান করে থাকে।

বার্ধক্যের চাপ কমায়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দেখা দেয়। আবার কখনো কখনো শুধু বয়স বাড়ার ফলেই নয় বরং বিভিন্ন প্রসাধনী নিয়ম না মেনে ব্যবহার করার ফলেও বয়সের আগেই আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হয়। তখন এই ছাপ কমাতে এবং আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গুলো অনেক বেশি সাহায্য করে। এর পাশাপাশি যদি আপনি কোনো ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন তিনিও আপনাকে ভিটামিন ই কত মাস পর্যন্ত এবং কীভাবে খাবেন তার একটি গাইডলাইন দিতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: ভিটামিন ই তে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিস যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেয়। এসব কারণেই ছোট থেকে বড় রোগজীবাণু সহজে শরীরে প্রবেশ এবং শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। ভিটামিন-ই শরীরকে একটি শক্তিশালী এন্টি বডি তে পরিণত করে তাই সহজেই ক্যান্সারের জীবাণু প্রবেশ করে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন, শর্করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। সব ধরনের ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ই এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের ত্বক চুল এবং শারীরিক নানা গঠনের জন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার এর তালিকা জেনে নিত্যদিনের খাবার মেনুতে আমরা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে পারি। এই ভিটামিন ই আমাদের শারীরিক সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে।কিন্তু ভিটামিন-ই ক্যাপসুল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার আগে এবং পরে বেশ কয়েক মাস বিরতি নিয়ে খেতে হয়। সেসব নিয়ম-কানুন জেনে তবেই ভিটামিন-ই খাওয়া শুরু করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ

4.5/5 - (39 Reviews)
Subna Islam
Subna Islam
Articles: 80