মালটা খাওয়ার উপকারিতা এবং মালটা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মাল্টা হচ্ছে Citrus × sinensis উদ্ভিদের ফল। এর ইংরেজি নাম হলো Orange বা Sweet orange। তবে অনেকেই একে ভুল করে grapefruit (C. paradisi) বলে থাকেন। এছাড়াও Mandarin orange-কে বাংলায় কমলা বলা হয়ে থাকে যা reticulata উদ্ভিদের ফল।
জাম্বুরা (citrus Maxima) এবং কমলা (citrus reticulata ) এই দুটি ফলের সংকরায়ন এর মাধ্যমে মাল্টা ফল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় একটি ফল তবে এর স্থানীয় উৎপাদন খুব কম। মাল্টা অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। একে উর্দুতেও ‘মাল্টা’ নামে ডাকা হয়। একে হিন্দিতে ‘সন্তারা’ এবং অসমিয়া় ভাষায় ‘সুমাথিবা টেঙ্গা’ বলা হয়।
মাল্টার আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বর্তমান বিশ্বে মাল্টার উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য,ম্যাক্সিকো ও ইতালি। আর বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কুমিল্লা, মেহেরপুর, ও কুষ্টিয়া ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়ও মাল্টা উৎপাদন হচ্ছে বিস্তর পরিসরে।
মাল্টার পুষ্টিগুণ
সাইট্রাস জাতীয় ফল Sweer Orange বা মাল্টা। সহজলভ্য ও পুষ্টি গুণে ভরপুর হওয়ায় রোগীর পথ্য হিসেবে ফলটির চাহিদা তাই বছর জুরেই৷ গবেষণা বলছে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও শর্করা মেলে এই ফলটিতে। আর পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে জ্বর, সর্দি, কাশি সহ ঠান্ডা জনিত রোগ নিরাময়েও কার্যকর এই ফল।
টক মিষ্টি স্বাদের অতুলনীয় এই ফলটি জুস অথবা পুডিং হিসেবেও ভোক্তার পাতে আনে নতুন স্বাদ।
গবেষণা বলছে বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন, অ্যাসকরবিক এসিড, ফোলেট এ পলিকুইননের মত ভিটামিন মেলে মাল্টায়। আর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ উপাদান ছাড়াও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভিনয়েডস ও ফাইবারের মত উপাদান মেলে মাল্টায়৷
মাল্টার ফসফরাস ইনফেকশন প্রতিরোধে কাজ করে। আর ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠনে কাজ করা ছাড়াও পাকস্থলীর আলসার ও কোষ্টকাঠিন্য থেকে দেয় মুক্তি । ফলটির ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। আর সুগারের পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয় এই মাল্টা।
এটি একটি সাইট্রিক জাতীয় ফল। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে৷ যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয় ৷ তবে এসিডিটি সমস্যায় নিয়ম মেনে খেতে হবে ফলটি বলছেন পুষ্টিবিদরা।
মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
বাজারে বছর জুরে মালটা পাওয়া যায়। আমরা মালটা কেন খাবো? এই ফল খেলে শরীরে কি কি উপকার হয়? সে সব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনঃ
১. অনেকে হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন। আপনি যা খান তা সঠিকভাবে হজম হয় না। এই হজম ক্ষমতা বাড়াতে মাল্টা অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্লামনয়েড আছে, যা হজমে।সাহায্যকারী এসিড অধিক মাত্রায় বাইরে বের করতে সাহায্য করে । হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য চিকিৎসকরাও মাল্টা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
২. মাল্টা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি উচ্চ রক্তচাপ দূর করতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এবং ভিটামিন সি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর যখন জ্বর হয়, তখন বমি বমি ভাব হয়। এই বমিভাব বা জ্বর কমাতে মাল্টা খুব উপকারী।
৩. জন্ডিস নিরাময়েও মাল্টা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস লিভারের একটি রোগ। আর মাল্টা হল খুবই সহজপাচ্য একটি ফল । এটি খুব সহজেই হজম করা যায়। এটি লিভারকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করে। লিভারের কার্যক্ষমতা কেও স্বাভাবিকভাবে রাখতে সাহায্য করে মাল্টা ।
৪. ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি বা মাড়িতে রক্তক্ষরণ হয়। প্রায়শই ঠোঁটের পাশে ঘা হয়, ঠোঁট ফেটে যায়, ঠোঁটে ফোঁড়া হয়, এই রোগগুলি ভিটামিন সি -এর অভাবে হয় এবং মাল্টা ভিটামিন সি -এর ঘাটতি পূরণ করে।
৫. প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেই পানিশূণ্যতা কাটাতে বেশিরভাগ সময় আমরা কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে থাকি । এই ঠান্ডা পানীয় না খেয়ে মাল্টা খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের অভাব পূরণ হয়। যা আমাদের শরীরকে ডি-হাইড্রাইড এর হাত থেকেও রক্ষা করে ।
৬.মাল্টায় ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে ফলিক এসিড। যা শরীরের পেশী অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে। ফলস্বরূপ, হাড়ের ঘনত্ব ভাল থাকে। যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এর ফলে বাতের মতো সমস্যা থাকে না। বিশেষত মহিলাদের প্রস্রাব সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা থাকে । এই সমস্যাগুলির বেশিরভাগই কিডনি বা মূত্রাশয়ের দুর্বলতার কারণে হয়। এই দুর্বলতা থেকে মাল্টা রক্ষা করতে পারে।
৭. মাল্টা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। যা কিডনি এবং মূত্রাশয়কে শক্তিশালী করে এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই আপনাকে ঠান্ডা পানীয় বা কোল্ড ড্রিংকস বাদ দিয়ে মাল্টা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবেই বিভিন্ন সমস্যা থেকে শরীর রক্ষা পাবে।
৮. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মাল্টা খুবই ভাল। এতে থাকা ভিটামিন সি গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ককে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।
৯. মাল্টা ত্বকের জন্যও খুব উপকারী। মাল্টার রস পান করলে বা মুখে ঘষলে ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটি ত্বককে নরম করবে, ত্বকের রুক্ষতা দূর করবে। মাল্টা ত্বকের টোন হালকা করার জন্যও খুব ভালো কাজ করে।
মাল্টার রস, দুধ এবং শসার রস এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে লাগান এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
১০.শীতকালে ঠোঁট শুকিয়ে যায়। এর জন্য আপনি মধুর সাথে মাল্টার রস মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। এতে ঠোঁট হবে নরম, গোলাপি এবং ফাটার সমস্যা দূর হবে।
মালটা খাওয়ার নিয়ম
মাল্টা খাওয়ার আগে অবশ্যই তা ২৫-৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কারণ মাল্টায় ফরমালিন দেয়া থাকে যা পুরোপুরি অপসারণ না করলে উপকারের চেয়ে অপকারই হবে বেশি।
তারপর মাল্টা ছুরি বা বটির সাহায্যে কেটে খেতে পারেন।
এছাড়াও মাল্টার জুস খাওয়া শরীরের জন্য যেমন উপকার তেমনই শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। অসম্ভব তৃপ্তি পাওয়া যায়।
মাল্টার তৈরির পুডিং ও স্বাদ ও পুষ্টিগুণে কোনো অংশে কম নয়।
নিয়মিত মাল্টা খান সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকুন।