মাশরুম হলো একধরনের ভক্ষণযোগ্য অপুষ্পক মৃতজীবী ছত্রাক যা ফলত আয়স্কমাইসেটিস প্রজাতির অন্তর্গত। মাশরুমকে ব্যাঙের ছাতার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না । মাশরুম টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে।মাশরুম যে কেবল খেতেই সুস্বাদু তাই নয়,এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাশরুম রাখা উচিত।
★মাশরুমের পুষ্টিমূল্য:
মাশরুম খুবই নির্ভরযোগ্য ও পুষ্টিকর খাবার যা নানা উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের খাবারের টেবিলের বিভিন্ন পদের শোভা ও স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এই মাশরুমই। প্রতি ১০০গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন থাকে ২৫-৩৫গ্রাম, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে ৫৭-৬০গ্রাম, শর্করা ৫-৬গ্রাম ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর পরিমাণ থাকে ৪-৬ গ্রাম।

★মাশরুমের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতাঃ
## রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
## রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃমাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এতে উচ্চমাত্রার আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। এছাড়া এতে সোডিয়ামের পরিমাণও খুবই কম থাকে যার ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ হৃদপিণ্ডের অন্যান্য কাজেও সহায়তা করে থাকে।
##ওজন নিয়ন্ত্রনঃওজন কমিয়ে পেশীবহুল শরীর তৈরি করতে সাহায্য করে মাশরুম। মাশরুমের ফাইবার বা আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। অধিক ফ্যাট সমৃদ্ধ লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমানো সহজ।
##হজমে সাহায্য করেঃমাশরুমে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ রয়েছে। এই ফাইবার ও এনজাইম হজমে সহায়তা করে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে।
##ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ঃপ্রোটিন,ফাইবার,ভিটামিন এবং মিনারেল এ মাশরুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনতে পারে।নিয়মিত মাশরুম খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এ থাকে। এছাড়া মাশরুমে বিদ্যমান এনজাইম ও প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকায় এটি খেলে দেহের অতিরিক্ত চিনি ভেঙে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
##অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ
মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
##রক্তশূন্যতা দূর করেঃ
রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং যার ফলে মানসিক অবসাদ, মাথার যন্ত্রণা এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। তাই নিয়মিত মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
## হাড়ের শক্তি বাড়ায়ঃসব্জিতে ভিটামিন ডি না পাওয়া গেলেও মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকায় আমাদের হাড়ের শক্তি বাড়াতেও এটি সাহায্য করে। তাই গাঁটের ব্যথা কমানো ও হাড়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে মাশরুমের তুলনা নেই।
##ত্বক সুস্থ রাখাঃ
মাশরুমে ভিটামিনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকায় তা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া এর মধ্যে প্রায় ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে বলে ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
##ভিটামিন ডি থাকেঃ
সব্জিতে ভিটামিন ডি পাওয়া খুবই দুষ্কর। কিন্তু মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
##ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
মাশরুমের ফাইটোকেমিক্যাল টিউমারের বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন রকম ক্যানসার যেমন স্তন এবং প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে মাশরুমের তুলনা নেই।
★তাছাড়া মাশরুমের ভিটামিন বি স্নায়ুর জন্য উপকারী এবং বয়সজনিত রোগ যেমন- আলঝেইমার্স রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী। হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধ করতেও মাশরুম খুবই উপকারী। মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও এন্টি এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক।
★সাইড এফেক্ট: :
আপাতত মাশরুম এর কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধরা পড়েনি।
তবে কাঁচা খেলে তার মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও জার্ম নানা সমস্যার উদ্ভাবন করে।
যেমন – বমি, পেটব্যথা, মাথাঘোরা, অস্বভাবিক হৃদস্পন্দন ও উচ্চরক্তচাপতাই মাশরুম ভালো করে ধুয়ে ও সঠিক উত্তাপে রান্না করে খাওয়া উচিত।