সয়াবিন বা সয়া একপ্রকার শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদ। সয়া শব্দ টি এসেছে চিনা শব্দ ‘সয়াসস’ থেকে। অতিরিক্ত চর্বিবিহীন সয়াবিন দিয়ে তৈরি খাবার প্রাণী দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রাথমিক উৎস। সয়াবিনের গাছকে অনেকসময় ” গ্রেটার বিন” বলা হয়ে থাকে। সয়াবিন বীজ হতে তেল নিষ্কাশনের পর একধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। যা সয়া গোশত বা সয়া চাংক নামে পরিচিত।
প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে রয়েছে,
– শক্তি ১৪৭ কি.ক্যালরি
– প্রোটিন ১৩ গ্রাম
-কার্বোহাইড্রেট ১১.০৫ গ্রাম
-ফ্যাট ২০ গ্রাম
-ম্যাগনেশিয়াম ২৮০ মিলিগ্রাম
-ক্যালসিয়াম ২৭৭ মিলিগ্রাম
-ফসফরাস ৭০৪ গ্রাম
-ভিটামিন এ ৯ মাইক্রোগ্রাম
এছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম,জিংক সহ আরো পুষ্টিগুণ।
সয়াবিনের উপকারিতা
১. রক্তাল্পতা দূর করে শরীরে রক্তের মাত্রা বৃদ্ধি করে,
২. ঘুমের উৎকর্ষ মাত্রা বৃদ্ধি করে সয়াবিন,
৩. হাড় শক্তিশালি করে ও হাড়কে সুগঠিত করে,
৪.ওজন কমানোয় সাহায্য করে,
৫. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে,
৬. ক্লান্তি অবসাদ দূর করে সয়াবিন,
৭. হার্ট ও লিভারকে চাঙা রাখে ও হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি কমায় সয়াবিন,
৮. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ও হাইপোথ্যালামাস সক্রিয় রাখে,
৯. শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকেও নিয়িন্ত্রণে রাখে সয়াবিন,
১০.অনিদ্রাজনিত অসুখ যেমনঃ ইনসোমনিয়া দূর করে৷
রোগ প্রতিরোধে সয়াবিন
রক্ত চলাচলে সাহায্য করেঃ
সয়াবিনে আইসোফ্ল্যাভেন ও লেসিথীনা নামিক দুটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো লো কোলেস্টেরল মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।
অকালবার্ধক্য রোধ করেঃ
সয়াবিনের আইসোফ্ল্যাভেন অত্যন্ত জোরালো ফাইটো ইস্ট্রোজেনা যৌগ। যা ত্বক ও চুল উজ্জ্বল ও ঝকঝকে রাখতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সয়াবিনঃ
ডায়াবেটিস হল গ্লুকোজ মেটাবলিজম-এ অবনতির কারণে রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার দ্বারা চিহ্নিত একটা ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদী) অবস্থা। মানুষ ডায়াবেটিস রোগগ্রস্ত হন কারণ তাঁদের শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করেনা যা গ্লুকোজ মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী অথবা শরীর প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) দ্বারা উৎপন্ন ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করেনা। পরেরটা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে ঘটে, যা স্থূলতার কারণে সৃষ্ট হয়।
গবেষকরা দেখিয়েছেন যে সয়াবিনের ব্যবহার স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইনসুলিন প্রতিরোধ কমায় সাহায্য করে।
একটা ক্লিনিক্যাল সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে যে কোনও ভোজনের 60 মিনিট আগে সয়াবিন খাওয়া ভোজনের পরে (পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল গ্লুকোজ মাত্রা) গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। এটা সয়াবিনে পিনিটল নামক একটা ডায়াবেটিস-প্রতিরোধী শক্তির বিদ্যমানতার প্রতি আরোপযোগ্য।
ঘুমের জন্যে সয়াবিনঃ
গবেষণা অনুযায়ী, সয়াবিনে বিদ্যমান আইসোফ্লেবোনস ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। আইসোফ্লেবোন যা ফাইটোএস্ট্রোজেন-এর একটা প্রকারভেদ, মানব শরীরে পাওয়া ইস্ট্রোজেন-এর সঙ্গে তুলনায় গঠনবিন্যাসে একই রকম।
পেটের সমস্যা নিরাময়েঃ
ইরিটেব্ল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) বা বিরক্তিকর পেটের সমস্যা হল একটা অবস্থা যা বৃহদন্ত্রকে (লার্জ ইন্টেস্টিন) প্রভাবিত করে। পরিপাক-সংক্রান্ত উপসর্গগুলি যেমন পাকস্থলীর খিঁচুনি, কোষ্ঠকাঠিন্য, উদরাময় এবং পেটফাঁপা এবং সেই সাথে মলত্যাগ ক্রিয়ায় পরিবর্তনগুলি দ্বারা এটা চিহ্নিত হয়। যদিও অবস্থাটা ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদী) , আপনার খাদ্যতালিকা এবং জীবনধারার সঠিক ব্যবস্থাপনার দ্বারা এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
গবেষণা ইঙ্গিত করে যে খাদ্যতালিকায় সয়াবিন সম্পূরক জীবনের গুণমান উন্নত করার দ্বারা আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করায় সাহায্য করতে পারে। যদিও, গবেষণার সময়কালে উপসর্গগুলিতে এটা কোনও উন্নতির নিশ্চয়তা দেয়নি।
গবেষণাটি বিবৃত করেছিল যে আইসোফ্লেবোনস এবং সেগুলোর নির্যাস ডেইডজিন এবং জেনিস্টিন অন্ত্র-সংক্রান্ত বাধার ক্রিয়া উন্নত করে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণগুলির কারণে আইসোফ্লেবোনস অন্ত্রগুলোকে রক্ষাও করে।
এছাড়াও এটা বলা হয়েছিল যে সয়া আইসোফ্লেবোনস প্রদাহমূলক সাইটোকাইনস যা বিরক্তিকর পেটের সমস্যার সূচনার দিকে নিয়ে যায় তার থেকে অন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে।
সাবধানতাঃ
১ যেসমস্ত মানুষ গরুর মাংসে এলার্জিক হন তারা সাধারণত সয়াবিনেও এলার্জিক হন। সুতরাং তাদের যথাসম্ভব সয়াবিন এড়িয়ে চলা উচিত,
২.যাদের পেটফাঁপা বা গ্যাস জনিত সকস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে সয়াবিন যতটা সম্ভব না খাওয়াই ভাল। এতে পেটে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
৩.এছাড়া, অত্যধিক সয়াবিন খাওয়া ওজন বাড়া, উদরাময় এবং পাকস্থলীর খিঁচুনির ঘটাতে পারে। সয়াবিন আইসোফ্লেবোনয়েডস-এর অত্যধিক ব্যবহার এন্ডোমিট্রিয়াল হাইপারপ্লেশিয়া (জরায়ুর এন্ডোমিট্রিয়াল আবরণের পুরুত্ব) ঘটায়।