ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন | ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করতে গিয়ে দেখেন তথ্য ভুল? ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন করার সময় ভুল হলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে দেয়া তথ্যে যদি কোনো ভুল, অর্থাৎ আপনার নাম/আপনার বাবার নাম/আপনার মায়ের নাম কিংবা ঠিকানা ভুল থাকে তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে হবে। নতুন ভোটার হওয়ার পর অনেকেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হন। সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকেই তাদের এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে পারেন না। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে হয়।

এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে এবং পোস্টে উল্লিখিত সকল ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি নিজেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক, এনআইডি কার্ড এর তথ্য ভুল হলে কিভাবে সেগুলো ধাপে ধাপে সংশোধন করবেন। 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড এর তথ্য ভুল হলে অবশ্যই সেগুলো সংশোধন করতে হবে। কারণ, ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার প্রমাণস্বরূপ সবাইকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়। এই কার্ডটি ব্যবহার করে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে হয়। নতুন সিম রেজিস্ট্রেশন করা, পাসপোর্ট করা, ভিসা করা এবং বিভিন্ন আইনি সমস্যায় ভোটার আইডি কার্ড এর প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র হচ্ছে একটি ভোটার আইডি কার্ড। এই ভোটার আইডি কার্ড এর জন্য নিবন্ধন করার পর যদি কোনো ভুল ধরা পরে, তবে সেগুলো অবশ্যই ঠিক করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের যেসব তথ্য সংশোধন করা যাবে

  • ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন
  • আইডি কার্ডে বাবার নাম সংশোধন
  • ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন
  • ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
  • ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন
  • অন্যান্য তথ্য সংশোধন

এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে

এনআইডি কার্ড এর তথ্য ভুল হলে সেগুলো সংশোধন করতে কিছু কাগজ প্রয়োজন হবে। এগুলো হচ্ছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের কপি। যেসব কাগজের কথা বললাম, এগুলোর মাঝে সব কাগজ লাগবে না। তবে, যেকোনো দুইটি কাগজ হলেই আপনি জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। উপরে উল্লিখিত ডকুমেন্টগুলো যদি না থাকে, তবে বিয়ের কাবিন, অফিস প্রধানের প্রত্যয়ন, ওয়ারিশ সনদ, ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয় পত্র ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র এসব ডকুমেন্ট ব্যবহার করলেও হবে। 

এনআইডি কার্ড সংশোধন ফি কত

সংশোধনের ধরণফি’র পরিমাণ
এনআইডির তথ্য সংশোধন – NID Info Correction২৩০ টাকা
অন্যান্য তথ্য সংশোধন – Other Info Correction১১৫ টাকা
উভয় তথ্য সংশোধন – Both Info Correction৩৪৫ টাকা
রিইস্যু – Duplicate Regular৩৪৫ টাকা
রিইস্যু জরুরী – Duplicate Urgent৫৭৫ টাকা

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে – 

  • অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
  • নির্বাচন অফিসে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন

ঘরে বসে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে পারবেন কিংবা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সেখানে থেকে কোনো অফিসারের সহযোগিতা নিয়ে অনেক সহজেই স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন। অনলাইনে কীভাবে এনআইডি সংশোধন করতে হয় এবং নির্বাচন অফিসে গিয়ে কীভাবে আইডি কার্ড সংশোধন করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করেছি।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন

নিম্নে উল্লিখিত ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি অনেক সহজেই এনআইডি কার্ড এর তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। 

ধাপ ১ – প্রথমেই আপনার কাছে যেসব ডকুমেন্ট রয়েছে, সেগুলো স্ক্যান করে নিন কিংবা সুন্দর করে ছবি তুলে নিন। আপনার কাছে যদি একটি কম্পিউটার এবং স্ক্যানার থাকে, তাহলে অবশ্যই স্ক্যান করে নিন। না থাকলে যেকোনো কম্পিউটার এর দোকানে গিয়ে স্ক্যান করে নিতে পারেন। অথবা, আপনার কাছে থাকা মোবাইল দিয়ে সুন্দর করে ছবি তুলে ক্রপ করে নিন। 

ধাপ ২ – https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই লিংকে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। এটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইটে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর বা ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন স্লিপ নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।ভোটার আইডি কার্ড

 এরপর আপনার ঠিকানা দিতে হবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা সঠিকভাবে নির্বাচন করে দিবেন।

ভোটার আইডি কার্ড

ধাপ ৩ – এরপর আপনার দেয়া তথ্য ঠিক থাকলে আপনার সামনে নিচে দেয়া ইমেজ এর মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এখানে আপনার কাছে থাকা একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিবেন। এরপর বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ আসবে।

ভোটার আইডি কার্ডসেই ম্যাসেজে পাওয়া ওটিপি কোডটি দিয়ে বহাল বাটনে ক্লিক করে দিবেন।

ভোটার আইডি কার্ড

ধাপ ৪ – এরপর, একটি পেজ ওপেন হবে। সেখানে একটি QR CODE পাবেন। এই QR CODE টি যে মোবাইলে NID WALLET অ্যাপ ইন্সটল করেছেন, সেই অ্যাপ দিয়ে স্ক্যান করতে হবে। স্ক্যান করার পর ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে। 

ভোটার আইডি কার্ড

এখন আপনার যে মোবাইলে NID Wallet App টি  ইনস্টল করা, সেটি ওপেন করুন। ভাষা সিলেক্ট করে Agree and Continue বাটনে ক্লিক করুন। এরপর QR কোডটি স্ক্যান করুন।

ভোটার আইডি কার্ড

QR CODE স্ক্যান করার পর ফেস ভেরিফিকেশন করার অপশন আসবে। এখানে আপনার ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে। এজন্য আপনার মোবাইলের ক্যামেরা ওপেন হবে। সেখানে সেলফি তোলার মতো করে সঠিক ভাবে ফেস ভেরিফাই করে নিবেন।

ভোটার আইডি কার্ড

অ্যাপ এ একটি ভিডিও দেখাবে, তেমন করে আপনার মুখ বরাবর আপনার ফোনের Selfie Camera ধরুন ও ক্যামেরার দিকে সোজাসুজি তাকান। ঠিক থাকলে ছবিতে OK বা টিক মার্ক নোটিফিকেশন দেখাবে।

তারপর, আবারও সেলফি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ডানে একবার ও বামে একবার আপনার মাথা ঘোরাবেন। OK না দেখালে, আবার চেষ্টা করবেন। OK দেখালে বুঝবেন যে ফেস ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফেস ভেরিফিকেশন সঠিক ভাবে হলে আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে, এখানে আপনাকে পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ড

পাসওয়ার্ড সেট করে নিলে, নিচে দেয়া ইমেজ এর মতো একটি পেজ ওপেন হবে।

ভোটার আইডি কার্ড

এরপর প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করবেন। এরপর আপনার সামনে নিচে দেয়া ইমেজ এর মতো ৩টি অপশন –   ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা পাবেন। এরপর আপনি ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে এডিট বাটনে ক্লিক করে এডিট করতে পারবেন। এভাবে করে যে তথ্য পরিবর্তন করতে চান, সেখানে এডিট বাটনে ক্লিক করে এডিট করে তথ্য পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ড

আপনার এনআইডি কার্ডের যেসব তথ্য ভুল ছিলো, সেগুলো সংশোধন করা শেষে আগেই সেভ করবেন না বা পেজটি ক্লোজ করবেন না। ভুলগুলো সংশোধন করা শেষে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। উপরে ইতোমধ্যে এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধন ফি কত টাকা তা উল্লেখ করে দিয়েছি। 

বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফি প্রদান

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফি প্রদান করার জন্য প্রথমেই আপনার মোবাইলে বিকাশ অ্যাপ ওপেন করে নিবেন। এরপর নিচে দেয়া ধাপগুলো অনুসরণ করবেন।

  1. পে বিল অপশনে যান
  2. সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করুন এবং NID Service অপশনটি বাছাই করুন।
  3. এরপর আবেদনের ধরণ নির্বাচন করুন।
ভোটার আইডি কার্ড
  1. আপনার এনআইডি নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন।
  2. অতঃপর, টাকা পেমেন্ট করে দিন।

ফি জমা দেয়ার পর যেসব ডকুমেন্ট আপনার কাছে আছে সেগুলো আপলোড দিয়ে সেভ করে দিবেন। এরপর, আপনার সংশোধিত এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এভাবে করেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: ভোটার আইডি কার্ড চেক

Rate this post
Subna Islam
Subna Islam
Articles: 78

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *