খাদ্যের ছয়টি মৌলিক উপাদান রয়েছে। উপাদানগুলো হলো শর্করা, প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও পানি। আমাদের শারীরিক গঠন ও বিকাশের জন্য এসব খাদ্য উপাদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে শর্করা, প্রোটিন এবং স্নেহ পদার্থ হলো খাদ্যের মুখ্য উপাদান এবং ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও পানি হলো সহায়ক উপাদান। দৈনন্দিন খাবার তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। আজকে আমরা খাদ্যের এই মুখ্য উপাদান কার্বোহাইড্রেট নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা জানবো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা, প্রয়োজনীয়তা, উৎস, উপকারিতা, অপকারিতা সম্পর্কে।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট কি?
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হলো খাদ্যের অন্যতম একটি মূখ্য উপাদান। কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এই তিন উপাদান নিয়ে গঠিত এক ধরনের জৈব যৌগকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বলে।
আমাদের এশিয়ানদের জন্য কার্বোহাইডেট জাতীয় খাবার জনপ্রিয় এবং মুখরোচক। আমাদের নিত্যদিনকার খাবার, চাল, গম, ভুট্টা, আলু, বিট, গাজর, আপেল,কমলালেবু, দুধ সবকিছুতে বিদ্যমান শর্করা।
কার্বোহাইড্রেট এর শ্রেনীবিভাগ
যেহেতু কার্বোহাইড্রেট তিন ধরনের অনু দ্বারা গঠিত এর শ্রেণীবিভাগও তিনটি। মনোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড, ও পলিস্যাকারাইড।
মনোস্যাকারাইড এ রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ গ্যালাকটোজ। ডাইস্যাকারাইড এ রয়েছে সুক্রোজ ল্যাকটোজ ও মলটোজ। পলিস্যাকারাইড এ রয়েছে স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও সেলুলোজ।
কার্বোহাইড্রেটের উৎস
কার্বোহাইড্রেট দুই ধরনের উৎস থেকে পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ।
উদ্ভিজ্জ উৎস
- খেজুর, আঙ্গুর, আপেল, ইত্যাদি থেকে গ্লুকোজ পাওয়া যায়।
- চাল, গম, ভুট্টা, আলু, কচু ইত্যাদি থেকে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়।
- পাকা আম, কলা, কমলালেবু ইত্যাদি থেকে ফ্রুক্টোজ পাওয়া যায়।
- মিসরি, চিনি, গুড় থেকে সুক্রোজ পাওয়া যায়।
- শাকসবজি, বেল, তরমুজ, কলার থোড় থেকে সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়।
প্রাণিজ উৎস
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে ল্যাকটোজেন পাওয়া যায়।
- প্রানীর যকৃত, কলিজা ও পেশি থেকে গ্লাইকোজেন পাওয়া যায়।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা
আমরা জানি ফলমূল-শাকসবজি সবকিছুতে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। কিছু খাবারে কার্বোহাইড্রেট তুলনামূলক কম এবং কিছু খাবারে বেশি। এর উপর ভিত্তি করে একটি তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ
- আলো ২ কাপ = ১৮-২০ গ্রাম
- মিষ্টি আলু = ২৪ গ্রাম
- কলা ২৮-৩৫ = গ্রাম
- আপেল ১ টা = ১৮-২৮ গ্রাম
- এপ্রিকোট ৮ টুকরা = ১৪ গ্রাম
- জাম্বুরা ১ টি = ১২ গ্রাম
- ব্ল্যাকবেরি = ১৪ গ্রাম
- তরমুজ তিন টুকরা = ১৫ গ্রাম
- কমলা ১টি = ১৪ গ্রাম
- আঙ্গুর = ১২ গ্রাম
- ভুট্টা ২ কাপ = ১৮ গ্রাম
- মটর হাফ কাপ = ১৪ গ্রাম
- বাদামের মিশ্রণ = ১৮ গ্রাম
- চিনাবাদাম ১ কাপ = ১৪ গ্রাম
- কাঠবাদাম ১ কাপ = ১৪ গ্রাম
- কাজুবাদাম ১ কাপ = ১৩ গ্রাম
- পেস্তা বাদাম ২ কাপ = ১৬ গ্রাম
- আখরোট ১ কাপ = ১৩ গ্রাম
- মাসকলাই ডাল = ১৮ গ্রাম
- মসুর ডাল ২ কাপ = ২০-২২ গ্রাম
- মটরশুঁটির ২ কাপ = ২০-২২ গ্রাম
- গম ১ কাপ = ১৩ গ্রাম
- রুটি ২ টা = ২০ গ্রাম
- ভাত ১ কাপ = ৪০ গ্রাম
- ময়দা ২ চা চামচ = ৯ গ্রাম
- পাস্তা ২ কাপ = ৫২ গ্রাম
- পাউরুটি ১ টুকরা = ১২-১৮ গ্রাম
- আলুর চিপস ১ বাটি = ১৪ গ্রাম
- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ১ বাটি = ২৫ গ্রাম
- জেলি ১ চা চামচ = ১৪.৫ গ্রাম
- চিনাবাদাম এর মাখন ২ চা চামচ = ৭.৫ গ্রাম
- দই ১ কাপ = ১২ গ্রাম
- গরুর দুধ ১ কাপ = ১১ গ্রাম
- বাদাম দুধ ১ কাপ = ১০ গ্রাম
আরো পড়ুন: আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা ও এর অভাবে কি হয়
কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা
১. শর্করা জাতীয় খাবার দেহে তাপ উৎপাদন করে দেহে শক্তি প্রদান করে। এতে দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থেকে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
২. সেলুলোজ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
৩. গ্লাইকোজেন প্রানীদেহের যকৃত ও পেশিতে সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনের সময় শক্তিতে পরিণত হয় এবং দেহে অতিরিক্ত তাপ প্রদান করে যার ফলে সৃষ্টি হয় গ্লুকোজ এর। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
কার্বোহাইড্রেট এর অপকারিতা
অত্যাধিক চর্বি বা ফ্যাট গ্রহণ করলে যেমন শরীরে চর্বি জমে থাকে, তেমনি অনিয়ন্ত্রিতভাবে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলেও তা শরীরে সঞ্চিত শক্তি হিসেবে জমে থাকে। সেই শক্তি যদি কেউ ব্যবহার না করে থাকে তাহলে তা ফ্যাট এ রুপান্তরিত হয়ে যায়।
১. কার্বোহাইড্রেট বেশি গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যায়।
২. অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে থাকলে তা শরীরে ইনসুলিন এর প্রডাকশন এ বাধা দেয়। যার ফলে ডায়বেটিস দেখা দেয়।
৩. কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।
৪. শরীরে ওজন বেড়ে স্থুলতা দেখা দিতে পারে।
৫. এক্সট্রা ফ্যাট জমে থাকার কারণে মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এমনকি PCOD, PCOS জাতীয় সমস্যার আবির্ভাব হয় অধিক ওজনের দরুন।
শেষকথাঃ দৈনন্দিন চলাফেরায় আমরা নানা প্যাকেটজাত বা খোলা খাবার খেয়ে ফেলি। যেগুলোতে অনেক বেশি লবণ মিশ্রিত থাকে এবং যার বেশির ভাগ অংশই ময়দা, আটা দিয়ে বানানো হয়। এসব খাবারগুলো প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট দ্বারা পূর্ণ থাকে। তাই বাহিরের খাবারগুলো যথাসম্ভব বর্জন করে আমাদের পরিমিত পরিমানে কার্বোহাইডেট গ্রহণ করা উচিত। এতে করে আমাদের শারীরিক গঠন যেমন ব্যালেন্সে থাকবে, তেমনি অন্যান্য রোগও বাসা বাঁধতে পারবে না।
আরো পড়ুন: