ভালোবাসার গল্প পড়তে ভালো লাগে? সময় পেলেই ফেসবুক কিংবা গুগলে সার্চ করে ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প পড়েন? রোমান্টিক গল্প পড়তে আমাদের সকলেরই ভালো লাগে। অনেকেই গল্প পড়ার জন্য বই কিনে থাকে। আবার অনেকে বই কেনার সামর্থ্য না থাকার কারণে ফেসবুক এবং গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গল্প পড়তে ভালবাসে। বাংলা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পড়তে ভালোবেসে থাকলে, এই পোস্টে আপনাকে স্বাগতম জানাই। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কিছু রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প শেয়ার করবো। আপনি হয়তো এমন অনেক গল্প ইতোমধ্যে পড়েছেন, তবে আজকের গল্পগুলো একটি ভিন্ন।
অনেকেই শুধু প্রেমের গল্প পড়তে ভালবাসে, আবার অনেকে কষ্টের গল্প পড়তে ভালবাসে। এটা আসলে নির্ভর করে মানুষ কোন পরিস্থিতিতে আছে, তার উপর। যেমন, একজন মানুষ যদি নতুন নতুন প্রেমে পড়ে, তাহলে সেই মানুষটি অবশ্যই রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পড়তে চাইবে। কীভাবে একটি মেয়েকে প্রপোজ করতে হয়, কীভাবে একটি মেয়ের সাথে কথা বলতে হয়, এসব বিষয়ে পড়তে চাইবে। অপরদিকে, কেউ যদি কষ্ট পায়, প্রিয় মানুষ যদি ছেড়ে যায়, ধোকা দেয়, তাহলে তারা কষ্টের গল্প পড়তে চাইবে। তাই, আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমি কয়েকটি ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প এবং কষ্টের ভালোবাসার গল্প শেয়ার করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসা মানে কী জানেন? অনেকের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা মানে, প্রেম। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মাঝে যে প্রেমের সম্পর্ক, শুধু সেটাই ভালোবাসা না। ভালোবাসার মানে একেক জনের কাছে একেক রকম। কারও কাছে, নিজের পরিবার এর জন্য কষ্ট করা, উপার্জন করা, পরিবারের জন্য নিজের স্বার্থ বিলিয়ে দেয়া, এ সবকিছুই ভালোবাসা। আবার, কারও কাছে তার প্রেমিকার প্রেমে মত্ত থাকা, প্রেমিকার ইচ্ছে-আবদার পূর্ণ করা, এ সব কিছুই ভালোবাসা। ব্যক্তি ভেদে, ভালোবাসার সংজ্ঞা ভিন্ন হয়ে থাকে। নতুন প্রেমে পড়লে অনেকেই প্রেমের গল্প পড়তে ভালোবাসে। নিচে কিছু ভালোবাসার গল্প উল্লেখ করে দিলাম।
আমার সবটুকু জুড়ে তুমি | ভালোবাসার গল্প
গল্পটা আমার, আমার জীবনের বাস্তব চিত্র। বছর খানেক হলো বিয়ে করেছি, কিন্তু এখন আমার বয়স মাত্র ২০। এক বছর আগে বিয়ে করলে আমার বয়স তখন ছিলো মাত্র ১৯। যাকে বিয়ে করেছি, তার বয়স ছিলো তখন ১৭। এক বছর পেরিয়ে ওর বয়স এখন হয়ে গেছে ১৮। অনেকেই বলতে পারেন, আমি একটি নাবালক মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমার নিজেরও বিয়ের বয়স হয়নি। কিন্তু, কেন করলাম বিয়ে? শখের বসে? নাকি জীবন নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার কারণে। এটা জানতে হলে আপনাকে আমার সাথে ফিরে যেতে হবে ২০২০ সালে। সবেমাত্র এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছি। এরপর অনেকদিনের একটা লম্বা ছুটি। ছুটি কাটাতে অনেক আত্মীয়ের বাসা ঘুরতে গেছি। এরপরেও সময় ঘনিয়ে এলো কলেজে ভর্তি হওয়ার।
জনৈক সরকারী কলেজে ভর্তি হলাম। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হয়েছিলো। এজন্য আমাদের কলেজে ক্লাস করা হয়নি তেমন। কিন্তু কলেজ থেকে আমাদের কাছে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিতো। তাই সদ্য পাওয়া বন্ধুদের নিয়ে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করেছিলাম। সেখানে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করা হতো। বন্ধুরা সবাই আড্ডা দিতাম। এরপর আরেক বন্ধু আমাকে অন্য একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে অ্যাড করে দেয়। সেখানে আমাদের ক্লাসের আরও কয়েকজন ছেলে এবং ২টি মেয়ে ছিলো। এরপর সবার সাথে পরিচিত হই। ২টি মেয়ের মাঝে একজনের নাম ছিলো তাসনিম। গ্রুপে পরিচয়, এরপর আমাকে একদিন ইনবক্সে নক দিলো।
কথা হয়, ধীরে ধীরে রাত জেগে কথা বলা শুরু হয়। এরপর একদিন অ্যাসাইনমেন্ট জমার দেয়ার জন্য কলেজ যাই। তাসনিম ও আসে। ওইদিন ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। এরপর থেকে মাঝে মাঝে কলেজ গেলে দেখা হতো, এবং মেসেঞ্জারে কথা হতো। বন্ধুত্ব হয়ে যায় ওর সাথে। তখন আমার কোনো মেয়ে বন্ধু ছিলো না। কিন্তু তাসনিম আমার শুধু বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হতে চেয়েছিলো। বন্ধু থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল। এর মাঝেই ২০২০ পেরিয়ে ২০২১ এর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। দেশে করোনার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। ক্লাসে প্রথম দিন যাওয়ার পর, তাসনিম ওর বান্ধুবিদের কাছে আমার গল্প করেছে, আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে।
ওর বান্ধুবিরা আমাকে শুধু মেসেঞ্জার গ্রুপে কথা বলতে দেখেছিলো। এরপর সেদিন প্রথম দেখে। তারপর, ওরা তাসনিমকে, আমাকে নিয়ে একটু খোটা মারা শুরু করে। আমার সাথে প্রেম করছে নাকি, আমাদের মাঝে কিছু আছে নাকি, আমি অর বয়ফ্রেন্ড নাকি এসব কিছু নিয়ে অনেক প্রশ্ন করে। এভাবে করে বান্ধুবিদের পাল্লায় পড়ে তাসনিম আমাকে কখন মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সে নিজেও জানে না। আমি ওকে শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখতাম। কিন্তু, ও একদিন আমাকে মেসেঞ্জারে প্রপোজ করে বসে। আমি তো সোজা না করে দিয়েছি। পরদিন কলেজে এসে দেখি একদিকে মাথা নিচু করে কান্না করতেছে।
আমি ওকে ডেকে বলেছিলাম, “দেখ, আমাদের মাঝে শুধু বন্ধুত্বটাই থাকুক। প্রেম করলে আমাদের মাঝে এই বন্ধুত্ব আর থাকবে না। হয় প্রেম নয়তো বন্ধুত্ব। যেকোনো একটা বেঁছে নিতে হবে তোকে। প্রেম করলে আমাকে হারিয়ে ফেলতে পারিস যেকোনো সময়। কিন্তু বন্ধুত্ব, এটা আজীবন থাকবে।” সে নাছোড়বান্দা। তাসনিম এক কথায় বলে দিয়েছিলো, আমাকে অনেক ভালোবাসে, রাত থেকে না খেয়ে আছে আমি রিজেক্ট করে দিয়েছি জন্য। এরপর বাসা চলে যেতে ধরে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর ওকে সঙ্গে নিয়ে একটু বাইরে যাই। পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে দিয়ে, কুলি করিয়ে নেই। এরপর একটু ঘুরাঘুরি করি তাসনিমকে সঙ্গে নিয়ে।
সেদিন বাসা চলে এসেছিলাম ওকে রিকশায় তুলে দিয়ে। পরে আরও অনেক পাগালামী করেছে আমার জন্য। ইভেন ওর হাত কেটে ফেলেছে শুধু আমি ওর প্রেমের প্রস্তাবে সারা না দেয়ার কারণে। পরবর্তীতে অন্য কোনো উপায় না দেখে এবং আমি নিজেও আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারাতে না চাওয়ার কারণে ওর অফার একসেপ্ট করে নেই। শুরু হয় আমাদের মাঝে প্রেম। প্রতিদিন কলেজ যাওয়া আসা, দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, ফুচকা খাওয়া। প্রথমের দিকে একটু অনিচ্ছা থাকা সত্তেও ওর সাথে ঘুরেছি। মাঝখানে আমাদের মাঝে অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে। আমি কিছু ভুল করেছি। কিন্তু এরপর তাসনিম এর প্রতি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারার পর ওর কাছে ফিরে গিয়েছি।
সে আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। আমার জন্য প্রতি রাতে কান্না করতো। আমি তখন উপলদ্ধি করেছিলাম, ওর মতো করে আমি নিজেও কখনো ওকে ভালোবাসতে পারবো না। তারপর থেকে আমার সবটুকু দিয়েই ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছি। একদিন ওর পরিবারে আমাদের কথা জানাজানি হয়ে যায়। এরপর ওর জন্য ছেলে দেখা শুরু করে। বিয়ের বন্দবস্ত চলছিলো, ওকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসা কথা। কিন্তু তাসনিম বিয়েতে রাজি না। সে আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। পরিবার মেনে না নেয়ায় সে নিজের হাত কেটে ফেলে। ওইদিন ওকে অনেক মারামারি করেছে। সে ইভেন ছেলে পক্ষকে কল দিয়ে বলেছে যে আমাকে ভালোবাসে এবং আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।
এরপর তাসনিম এর মা, আমার বর্তমান শাশুরি, উনি আমাকে কল দিয়ে আমার ফ্যামিলি নিয়ে যেতে বলে। আমি কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ, আমি তখন এইচএসসি পরিক্ষা দেইনি। তবু আমি আমার মাকে কল দিয়ে সব বলেছি। এরপর মা আমাকে এবং আমার বাবাকে নিয়ে ওদের পরিবারের সাথে কথা বলতে গেছিলাম। তার কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে দিয়েছে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে। কাউকে ভালোবাসার পর তাকে নিজের করে পাওয়ার মতো আর কোনো সুখ আছে কী না আমার জানা নেই। আমি ওকে ভালোবেসেছিলাম এবং নিজের করে পেয়েছি। এইতো আছি, দিব্বি আছে। আমার মা-বাবা, ছোট ভাই এবং আমার বউকে নিয়ে অনেক ভালোই আছি। ফ্রিল্যান্সিং করছি, নিজের পরিবারকে সাহায্য করার চেস্টা করছি।
আরো পড়ুন: রোমান্টিক প্রেমের ছন্দ