গ্রীষ্মকালীন ফল আম

আম একটি রসালো, সুস্বাদু ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল।যা গ্রীষ্মকালীন দেশের প্রধান ফল হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে আম প্রথম আসে প্রায় ৬০০ বছর আগে বাংলাদেশর অন্যতম  গ্রীষ্মকালীন ফল আম । মোঘল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগে একলাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম উন্নত জাতের আমবাগান সৃষ্টি করেন। আমগাছ কে বলা হয় বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলারও আমের প্রতি ভালবাসা ছিল। 

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল সম্পর্কে জানতে এই প্রতিবেদনটি পড়ুন :

এই প্রতিবেদন আপনারা গ্রীষ্মকালীন ফল আমের পুষ্টি ও ঔষধিগুণ ,কাঁচা আমের উপকারিতা, পাকা আমের উপকারিতা , আমের উৎপাদন এবং আমের সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন–

আমের উৎপাদন –

পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম রাছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে চাষাবাদ হয় এমন কয়েকটি প্রজাতি হলঃ গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ,লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি,গোলাপখাস,রানিপছন্দ,ল্যাংড়া,হাড়িভাঙা,আম্রপালি,মল্লিকা,ফজলি,আশ্বিনা। 

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমের আবাদ হয় ৫৫ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমিতে। আম উৎপাদিত হয় ৬ লাখ ২ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন।২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমের উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। আবাদ হয় ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে।

বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাপাইনবয়াবগঞ্জ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত।” কানসাট আম বাজার ” বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার হিসেবে পরিচিত। 

আমের পুষ্টি ও ঔষধিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম আমে রয়েছে 
২৫০ কিলোজুল ( ৬০ কিলোক্যালরি) শক্তি, 
১৭ গ্রাম প্রোটিন 
০.৫ গ্রাম চর্বি 
০.২৭ গ্রাম খাদ্যআঁশ
২৭.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-এ 
১.১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন -কে 
০.০৫৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
০.১৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি৬
১৫৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম 
২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
১০ মিলিগ্রাম তামা। 
 এছাড়াও আলফা-ক্যারোটিন,বিটা-ক্যারোটিন, লৌহ,ম্যাংগানিজ, জিংক, ফলেট,নায়াসিনের মত পুষ্টিগুণ রয়েছে। 

ঔষধিগুণ 
১.জ্বর,বহুমূত্র,ও বুকের ব্যথার জন্য আম পাতা-চূর্ণ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়,
২. অন্ধত্ব ও রাতকানা প্রতিরোধে পাকা ও কাঁচা আম
দুইই মহৌষধ, 
৩.আমের কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী, 
৪.আমের শুকনো মুকুল আমাশয়,পাতলা পায়খানা,প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা উপশম করে,
৫.আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা আম ফল ল্যাকজেটিভ, টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। 

কাঁচা আমের উপকারিতা

একটি কাঁচা আমে ৮৪% পানি, ১৫% কার্বোহাইড্রেট, ১% প্রোটিন এবং অল্প পরিমাণে ফ্যাট থাকে। 
১.কাঁচা আম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও মনোবল বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি যক্ষা,কলেরা, অতিসার রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
২. কাঁচা আম মর্নিং সিকনেস চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৩.কাঁচা আম পাকা আমের তুলনায় অধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।
৪.কাঁচা আম পিত্ত এসিড কমায় এবং ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে লিভার কে রক্ষা করে।
৫. যকৃতের রোগের চিকিৎসায় কাঁচা আম বেশ উপকারি।
৬.কাঁচা আমের শুকনো পাউডারকে বলা হয় ” আমচুর”। যা স্কার্ভি চিকিৎসায় অত্যন্ত উপকারি। 
৭.উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিকর পানি থেকে রক্ষা করে কাঁচা আম। লবণ দিয়ে কাঁচা আম খেলে শরীর ঠান্ডা ও তৃষ্ণা মুক্ত থাকে।
৮.গ্রীষ্মকালে কাঁচা আমের জুস অত্যধিক ঘামের কারণে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লোহার অত্যধিক ক্ষতি রোধ করে।
৯.কাঁচা আমের সাথে চিনি, লবণ, জিরা মিশিয়ে জুস করে খেলে ঘামাচি দূর হয় ও গ্রীষ্মকালে স্ট্রোকের ঝুঁকি হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
১০. কাঁচা আম পেক্টিন সমৃদ্ধ। কাঁচা আম মধু ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক রোগের চিকিৎসায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। এটি গ্রীষ্মকালীন ডায়ারিয়া,আমাশয়,পাইলস,বদহজম, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১১.ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঁচা আম।

পাকা আমের উপকারিতা

১. পাকা আম ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে।
২. পাকা আম পুরুষের শুক্রাণুর গুনগত মানকে ভাল রাখে ও যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩.দেহে রক্তপাত রোধ করে, নতুন রক্ত তৈরি করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
৪.পাকা আম মুখের ও নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড দূর করতে সাহায্য করে।
৫.পাকা আমে থাকা খনিজ লবণ দাঁত,নখ ও চুল মজবুত করে।
৬.পাকা আমে থাকা টারটরিক,ম্যালিক,সাইট্রিক এসিড শরীরে এলকোহল ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৭.পাকা আম স্কিন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময় করে, 
৮.মস্তিষ্কের চাপ কমায় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৯.পাকা আমে প্রচুর আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে।
১০.আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। 

আমের সংরক্ষণ পদ্ধতি

বাজারে আজকাল অনেক ব্র‍্যান্ডের আমের জুস পাওয়া যায়। যার প্রায় সবই ক্যামিক্যালযুক্ত। এসব জুস শরীরের পক্ষে উপকার তো নয়ই বরং বেশ ক্ষতিকর। তাই এসব জুস খাওয়া থেকে বিরত থেকে ঘরে বসেই আমের জুস সংরক্ষণ করার চেষ্টা করুন। যেভাবে সসংরক্ষণ করবেনঃ
প্রথমে যে পাকা আমগুলো সংরক্ষণ করবেন তা বেছে নিন। এরপর ভাল করে ধুয়ে আমের খোসা ছাড়িয়ে নিন। খোসা ছাড়ানোর পর আমের আটি বের করে নিয়ে বড় একটা গামলায় রাখুন। এবার আমগুলোকে জুস করে নিন। জুস করা হয়ে গেলে বোতল কিংবা পটে করে জুস ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ব্যাস হয়ে গেল যখন মন চাইবে বের করে খাবেন। এতে পুষ্টিমানও অক্ষুণ্ণ থাকবে তার সাথে ক্যামিক্যাল মুক্ত থাকবেন। 
এছাড়াও পাকা আম  ধুয়ে নিয়ে,খোসা ছাড়িয়ে কেটে এয়ার টাইট বক্সে রেখে ডিপ ফ্রিজে রেখে সারাবছর সংরক্ষণ করা যায়,স্বাদ থাকে অক্ষুণ্ণ।
আমসত্ত্ব বানিয়েও রাখা যায়।যা বাজারে ম্যাংগো বার হিসেবে পরিচিত।বাজারজাত আমসত্ত্ব এর চেয়ে বাড়িতে বানানো খাবার বেশি পুষ্টিকর ও নিরাপদ।
বিভিন্ন রকমের আমের আচার তো রয়েছেই সারাবছর  সংরক্ষণ এর জন্য।
কাঁচা আমের জ্যাম/জেলি,পাকা আমার জ্যাম/জেলিও কিন্তু খুবই মজাদার;যা সারাবছর সংরক্ষণ করা যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাবধানতাঃ 

See also  আদা খাওয়ার উপকারিতা

আমে শর্করা থাকে। পরিমিত পরিমান আম ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমাণের অধিক আম খাওয়া উচিত নয়।

 

Rate this post
foodrfitness
foodrfitness
Articles: 234