প্রাণীদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি (Endocrine Glands) হতে নিঃসৃত রস জাতীয় বিশেষ পদার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রস রক্তস্রোতের সাহায্যে প্রবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট কর্মকেন্দ্রে উপনীত হয় এবং সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়াকে তৎপর হয়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত জৈবরাসায়নিক পদার্থকে হরমোন বলে। ১৯০২ সালে দুই ব্রিটিশ শারীরতত্ত্ববিদ william Bayliss এবং Ernest Starling হরমোন শনাক্ত করেন।তারা ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে এ রাসায়নিককে হরমোন নামে অভিহিত করেন।
অর্থাৎ প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড বা স্টেরয়েডধর্মী যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ, জীবদেহের কোনও বিশেষ কোষগুচ্ছ অথবা অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি থেকে স্বল্পমাত্রায় ক্ষরিত হয়ে সাধারণত রক্ত, লসিকা ইত্যাদির মাধ্যমে উৎপত্তি স্থল থেকে দূরে শরীরের কোনও বিশেষ জায়গায় পরিবাহিত হয় এবং সেখানকার কলা-কোষের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে, এবং কাজের শেষে নষ্ট হয়ে যায়, তাকেই হরমোন বলে।
গ্রোথ হরমোনের বৈশিষ্ট্যঃ
▪️হরমোন একধরণের ক্ষুদ্র ও জৈব অনু।
▪️হরমোন রক্তে বাহিত হয়।
▪️উৎপওিস্হল থেকে (নির্দিষ্ট কোষ বা কোষগুচ্ছ বা গ্রন্থি থেকে) সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের দূরবর্তীস্হানে পরিবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট অংশে(target)কাজ করে।
▪️হরমোন এক ধরনের দ্রবণীয় জৈব অনুঘটকের কাজ করে কিন্তু কাজ শেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
▪️হরমোন সল্প মাএায় বা ঘনত্বে কার্যকরী হয় এবং ক্রিয়ার স্হায়িত্বকাল অনেকদিন বজায় থাকে।
▪️হরমোন সাধারণত ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকে না।
▪️অধিকাংশ হরমোনের ক্রিয়া ধীরে সংঘটিত হয়।
▪️একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে একাধিক হরমোন ক্ষরিত হতে পারে কিন্তু এগুলোর কাজ বা ক্ষরণ পরস্পর নির্ভরশীল নয়।
▪️স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক রেখে হরমোন বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
▪️হরমোন জীবদেহের কোষে কোষে রাসায়নিক সংযোগ সাধন করে এবং রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে।
নারী-পুরুষ উভয়েরই বিভিন্ন সময় শরীরে হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্য হয়। হরমোন জনিত সমস্যা হলে কোন কাজে মন বসে না। কেমন যেন অবসাদ এসে যায়। তাছাড়া মাঝে মাঝে দেখা যায় অকারণেই অনেক বিভিন্ন অসুখের উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যেতেও দেখা যায়।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য এভাবে ব্যহত হবার পেছনে থাকতে পারে গুরুতর কোনো শারীরিক সমস্যা।বিভিন্ন হরমোনের মতো গ্রোথ হরমোনের আভাবে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
গ্রোথ হরমোনের অভাব হল একটি ব্যাধি যেখানে অগ্রবর্তী পিটুইটারি (মস্তিষ্কতলে অবস্থিত একটি ছোট গ্রন্থি যা বিভিন্ন হরমোন উৎপাদন করে) স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রোথ হরমোনের (জিএইচ/GH) ক্ষরণ করে না।
গ্রোথ হরমোনের অভাবজনিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি
▪️বৃদ্ধির মাত্রা লক্ষণীয়ভাবে কমে যাওয়া।
▪️লম্বা হাড়ের দীর্ঘ হওয়ায় বিলম্ব।
▪️মাথার খুলির সন্ধি এবং ফন্টানেলসের বিলম্বিত অবসান।
▪️মুখের হাড়ের বিকাশের বিলম্বিত হার।
▪️দাঁত উঠতে দেরি হওয়া।
▪️নখের কম বৃদ্ধি হওয়া।
▪️চুল পাতলা হওয়া।
▪️নবজাতকের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কম)।
▪️উচ্চ মাত্রায় গলার স্বর।
▪️চর্বির বৃদ্ধি (পেটে এবং অন্ত্রে)।
▪️পেশীর ভর এবং কর্মশক্তির মাত্রা কমে যাওয়া।
▪️উদ্বেগ এবং/অথবা বিষণ্নতা।
▪️লিপিডের মাত্রা বৃদ্ধি (এলডিএল-কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর)।
আরো পড়ুনঃ