ব্রকলির উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

আমাদের দেশে বর্তমানে ব্রকলি খুব পরিচিত একটি সবজি। দেখতে হুবহু ফুলকপির মতো, রঙটাই যা শুধু আলাদা। ব্রকলি দেখতে অনেকটা বাঁধাকপির মতোই। ব্রকলি খুব একটা জনপ্রিয় সবজি নয় কিন্তু এটা অস্বীকার করা যায় না যে এটি গুণের ভান্ডার। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ভিটামিন রয়েছে, সি এবং অন্যান্য অনেক পুষ্টিগুণ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এতে অনেক ধরনের লবণও পাওয়া যায়, যা সুগার লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

আপনি চাইলে সালাদ হিসেবে, স্যুপে বা সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কেউ কেউ এটাকে ভাপ দিয়ে রান্না করে খেতেও পছন্দ করেন। শীতকাল হলেই মিষ্টি সবুজ রঙের এই সবজিটির দেখা মেলে বাজারে, নাম ব্রকলি। শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এই সবজিটি খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই উপকারি। অনেকেই এর গুণাগুণ সম্পর্কে জানেন না বা কম জানেন। অথচ এই খাবার পুষ্টিগত কারণে নিজের স্থান করে নিয়েছে।

ব্রকলির উপকারিতা

আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ব্রকলির গুরুত্ব রয়েছে এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। যার মধ্যে ভিটামিন সি, বি-১ এবং বি-৩ রয়েছে। শুধু তাই নয় এক বাটি ব্রকলিতে এক বাটি ভাতের সমান প্রোটিন থাকে। কিন্তু ক্যালোরি থাকে তার অর্ধেক। তাই ভাত খাওয়ার ফলে ভুঁড়ি হলেও ব্রকলি খেতে ভুলবেন না ।

হৃদরোগ প্রতিরোধ করতেঃ ব্রকলিতে ক্যারোটিনয়েড লুটেইন পাওয়া যায়। এটি হার্টের ধমনীকে সুস্থ রাখে। এর সেবন হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়।এতে উপস্থিত পটাশিয়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে দেয় না।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ কম ব্রকলি খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কমে। ব্রকলিতে ফাইটোকেমিক্যাল বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। ব্রকলিতে উপস্থিত উপাদানগুলো শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতেও কাজ করে। এটা সম্ভবত মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ব্রকলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা। ব্রকলিকে অন্যতম শক্তিশালী ক্যান্সার বিরোধী খাদ্য বলা যেতে পারে এর খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টির বৈশিষ্ট্যের জন্য।

See also  রোমান্টিক পিকচার ডাউনলোড করুন - ভালবাসার রোমান্টিক পিক

বিষণ্নতা প্রতিরোধঃ ফোলেট কম খাওয়া বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ায়। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট থাকে। একটি ভাল মেজাজ বজায় রাখার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়াও, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজনীয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়কঃ ব্রকলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া খুবই উপকারীঃ গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত ব্রকলি খাওয়া উচিৎ। এতে উপস্থিত উপাদান শুধু শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্যই উপকারী নয় মাকে অনেক ধরনের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে।

সুস্থ ত্বকঃ ব্রকলিতে থাকা গ্লুকোরাফানিন বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ত্বক উন্নত করে|

স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণঃ ব্রকলি পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা সুস্থ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ|

হাড়ের শক্তি যোগায়ঃ অনেক পরিচিত সবজির চেয়ে ব্রকলিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি, যা অন্য অনেক সবজিতে এতো বেশি মাত্রায় পাওয়া যায় না। ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান|

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ ব্রকলির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য অন্য খাবারের থেকে একে উচ্চতম স্থানে রাখে। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমানে ফ্ল্যাভোনয়েড, লিউটেনের সঙ্গে ক্যারটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন এবং জিক্সানথিন- সব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা অনেক গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করে।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন খাদ্যের মধ্যে ব্রকলি অন্যতম। এটা চিনির প্রভাব রোধ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখে। কেননা ব্রকলি ভালো কার্ব যা ফাইবার সমৃদ্ধ বলে পরিচিত।

কোলেস্টেরল কমায়ঃ ব্রকলিতে প্রচুর পরিমানে দ্রবণীয় ফাইবার আছে যা শরীর থেকে কোলেস্টেরল বের করে দেয়।

পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখেঃ ব্রকলি একটি প্রাকৃতিক ডেটক্স যা পেট এবং পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। ব্রকলিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি বলেই এটা সম্ভব হয়।

আন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ ব্রকোলিতে আন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং আন্টি-এলার্জির বৈশিষ্ট্য আছে। এর ওমেগা -3 ফ্যাটি এসিড এবং একটি শক্তিশালী যৌগ কেমফেরোল বৈশিষ্ট্য শরীরের এলার্জি রোধ করতে সাহায্য করে।

See also  কদম ফুলের ছবি ডাউনলোড, বর্ষার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জন্যঃ ব্রকোলি পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা একটি সুস্থ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন উপায়ে হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রকলি হৃদপিন্ডের জন্য খুব ভাল।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে গুড়ো ব্রকলি স্প্রাউটের চিকিত্‍সার ফলে কিছু মানুষের ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরল (LDL cholesterol) কমে এবং ভাল কোলেস্টেরল (cholesterol levels) বৃদ্ধি পায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ব্রকলির এন্টি অক্সিডেন্টের কারণে এটা হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায়।

হজমে সহায়তা করেঃ ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও এন্টি অক্সডেন্ট থাকার ফলে তা উভয়ই হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা ব্রকলি খেয়েছেন তাঁদের মলত্যাগের সমস্যা দূর হয়।

মস্থিষ্কের কার্যকারিতার উন্নয়ন করেঃ ৯৬০ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ব্রকলি খেলে তা বয়োঃবৃদ্ধির ফলে হওয়া স্মৃতিভ্রম রোধ করে। ব্রকলির সালফোর‍্যাফেইন হচ্ছে একটি বায়ো এক্টিভ কম্পাউন্ড যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি করে।

ব্রকলি বয়োঃবৃদ্ধির গতি কমায়ঃ আমাদের বয়োঃবৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (oxidative stress) মেটাবলিক ফাংশান (metabolic function) কমে যাওয়া। যদিও বয়োঃবৃদ্ধি (aging) একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, গবেষণায় দেখা গেছে স্বাস্থ্যকর খাদ্য বার্ধ্যক্যজনিত রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে ব্রকলির বায়ো এক্টিভ কম্পাউন্ড সালফোর‍্যাফেইন বয়োঃবৃদ্ধির গতি কমাতে পারে।

ব্রকলি রক্তশূন্যতা (anemia) দূর করেঃ এক কাপ (১৫৬) গ্র্যাম রান্না করা ব্রকলিতে আছে ১ মিলিগ্র্যাম আয়রন, যা আপনাকে দিবে প্রতিদিনের প্রয়োজনের (RDI) ৬% আয়রন। আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করতে খুব প্রয়োজনীয়। এছাড়া ব্রকলিতে আছে প্রচুর ভাইটামিন সি যা আয়রন শুষে নিতে শরীরকে সাহায্য করে।

ব্রকলির ভাইটামিন সি ইমিউন সিস্টেম সুস্থ্য রাখেঃ ভাইটামিন সি ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি এবং ব্রকলিতে আছে প্রচুর ভাইটামিন সি। গবেষণায় দেখা গেছে ভাইটামিন সি বিভিন্ন রোগের চিকিত্‍সা এবং বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। প্রতিদিন ১১০-২০০ মিলিগ্র্যাম ভাইটামিন সি খেলে তা যে কোন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।

See also  মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়, মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্রকলি দাঁত ও মুখের রোগ থেকে রক্ষা করেঃ ব্রকলিতে থাকা ভাইটামিন সি ও ক্যালসিয়াম উভয়ই দন্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। ব্রকলির ক্যামফেরল নামক ফ্ল্যাভনয়েড পেরিওডন্টাইটিস রোধ করে। আরো গবেষণায় দেখা গেছে ব্রকলির সালফোর‍্যাফেইন মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ব্রকলি হাড় ও জয়েন্ট সুস্থ্য রাখেঃ ব্রকলিতে আছে প্রচুর ভাইটামিন কে এবং ক্যালশিয়াম এবং এই দু’টি পরিপোষকই শক্ত ও সুস্থ্য হাড়ের জন্য জরুরি।
এছাড়া ব্রকলিতে থাকা জিঙ্ক, ভাইটামিন এ এবং ভাইটামিন সি হাড় সুস্থ্য রাখতে সহায়ত করে ।

5/5 - (14 Reviews)
foodrfitness
foodrfitness
Articles: 234