ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক শেষ না হতেই নতুন আতঙ্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ইতিমধ্যে  আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৮ হাজারের অধিক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২00  জনেরও বেশি । প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কারণে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ মানুষের মনেও ।

মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে  ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর লক্ষণসমূহ কি ? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিকারে করনীয় কি?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এক ধরণের ছত্রাক ঘটিত রোগ।এর আসল নাম মিউকর মাইকোসিস।Rhizopus sp,Mucor sp ছত্রাক একত্রে  Mucormycosis নামে রোগ তৈরি করে। এই ছত্রাক মাটি,সার,গাছপালা এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায়।এটি কিন্তু ছোঁয়াচে নয়।

এই ছত্রাক কিন্তু নতুন নয়।এর আগেও এমন হয়েছে।আর ভবিষ্যতেও হবে।আমরা যে মাশরুম খাই তাও কিন্তু এক ধরণের ছত্রাক।পাউরুটি বেশিদিন রেখে দিলে সাদা হয়ে যায়,তাও এক ছত্রাকের কারণেই।তাই ভয় পাওয়ার কারণ নেই,আতঙ্কের কিছু নেই।যাদের ব্লাড সুগার,ডায়াবেটিস অনেক হাই,ক্যান্সার,লিভার সিরোসিস,কিডনি ড্যামেজ,যারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই স্টেরয়েড গ্রহণ করে যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়;তাদেরই এই রোগ হতে পারে।সব করোনা রোগীদেরও এই রোগ হয়না।যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু  অবস্থায় আছে,দীর্ঘদিন আইসিইউ তে আছে তাদের স্টেরয়েড নিতে হয় তাই তাদের এই রোগটি হতে পারে।একই মাস্ক অনেকদিন ব্যবহার এর ফলেও এই রোগ হতে পারে।এই রোগ ছোঁয়াচে নয়,এই রোগ সবার হয়না।তাই আতঙ্কের কিছু নেই।

এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে বিদ্যমান।নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর লক্ষণসমূহ কি ?

ব্ল্যাক-ফাঙ্গাস-এর-লক্ষণসমূহ-কি.

নাকে ঘা হওয়া।নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া,নাক দিয়ে কালো/বাদামী রঙের জল পড়া/রক্ত পড়া।

মুখের একপাশে ব্যথা।

চোখের ভিতর থেকে রক্তক্ষরণ,চোখ জ্বালাপোড়া করে।

চোখে ঝাপসা দেখা,দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা ডাবল ভিশন।

চোখের ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া।

চোখের পাতা ঝুলে পড়া

নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়া।

দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যেতে পারে।

কফের সাথে রক্ত,রক্ত বমি হয়,দাঁত ব্যথা,মাথা ব্যথা ও ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়।

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ফলে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিকারে করনীয় কি? 

ব্ল্যাক-ফাঙ্গাস-প্রতিকারে-করনীয়-কি

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,যেসব ছত্রাকের কারণে মিউকোরমাইকোসিস হয় সেটা পরিবেশে থাকা খুবই সাধারণ ঘটনা।
তাও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল তারা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যেতে পারে।

১.যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে,যেসব জায়গায় বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা।সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব নাহলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা

২.প্রাকৃতিক দুর্যোগে  যেসব স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব জায়গার সংস্পর্শে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।তাই এসব জায়গার সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। 

৩.শরীরের চামড়ায় যাতে কোন ইনফরমেশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

৪.কোথাও কেটে গেলে, চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫.স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৬.মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে

৭.রোগীকে অক্সিজেন দেবার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

৮.শরীরকে দূর্বল রাখা যাবেনা।শারীরিক ব্যয়াম করতে হবে।

৯.পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

১০.পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

১১.ভিটামিন  সি,ডি সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

১২.ভেজা / স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালের স্পর্শে না যাওয়া।

১৩.মাটি খনন/ ধূলাবালির কাজে জুতা,মোজা,লম্বা প্যান্ট,লম্বা হাতা কাপড় ও গ্লাভস পরিধান করা।এবং কাজ শেষে সাবান ও পানির সাহায্যে ভালোমতো ত্বক পরিষ্কার করা।

১৪.ব্লাড সুগার,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে ভয় নয়,আতঙ্ক নয়।এটা নতুন কিছু নয়।সাবধানতা মেনে চলুন,সুস্থ থাকুন।

Rate this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *