এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। আমাদের অনেকেই বর্তমানে বাড়িতে এলোভেরার গাছ লাগিয়ে থাকি, কিন্তু এর উপকারিতা সম্বন্ধে অনেকেই জানি না। আবার অনেকেই কিছু জানি কিন্তু তার সঠিক ভাবে ব্যাবহার করতে পারি না ।
এই প্রতিবেদনে এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যাতে আপনি সবকিছু জেনে এলভেরার সপূর্ণ উপকারিতা নিতে পারেন।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা, হার্ট সুস্থ এর জন্য এলোভেরা, ওজন কমাতে এলোভেরা,
রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এলোভেরা সহ আরও বেশ কিছু এলোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।
★পুষ্টি উপাদান :
এলোভেরাতে রয়েছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ও ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। ঘৃতকুমারী উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২ টি এমিনো অ্যাসিড প্রয়োজন তার ৮ টি এও মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E।
এলোভেরার উপকারিতা
চুল সুন্দর করতে এলোভেরা:
এলোভেরার ব্যাবহার মাথার খুশকি দূর করতে কার্যকরি। চুল পড়া বন্ধ করতেও এলোভেরা যথেষ্ট কার্যকরী। এছাড়া ঝলমল চুলের জন্যে এলোভেরা অনেক উপকারী। তাই চুলের যত্নের জন্য এলোভেরা আপনার নিত্যসংগী হতে পারে।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা:
ত্বক যত্নের জন্য এলোভেরার ব্যবহার করা হয়। এলোভেরার মধ্যে যে অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান থাকে তা ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং ব্রণ দূর করতে ও ব্রণের দাগ দূরীকরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধে:
এলোভেরা দেহের মাংসপেশীর ব্যথা বা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এই এলোভেরা জেলের ক্রিম যদি ব্যাথার স্থানে লাগানো হয় তাহলে ব্যাথা কমে যায়।
হার্ট সুস্থ এর জন্য অ্যালোভেরা:
এলোভেরার জুস হার্টকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে খুবই প্রয়োজন। এই এলোভেরা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি আবার ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তের মধ্যে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। আবার এই এলোভেরা দেহের দূষিত রক্ত বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদপিণ্ড বা হৃদযন্ত্র সুস্থ সবল থাকে।
ওজন কমাতে এলোভেরা:
ওজন কমাতে অ্যালভেরা জুস খুবই কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের ফলে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের মধ্যে অ্যাণ্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান থাকে যা এই প্রদাহ রোধ করে ওজন কমাতে করতে সাহায্য করে।
দাঁতের জন্য এলোভেরা:
এলোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথার জন্য খুবই উপকারী উপাদান। যদি দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকে তাহলে তা দূর করে দেয়। নিয়মিত এলোভেরার জুস যদি খাওয়া হয় তাহলে দাঁতের ক্ষয় অনেকাংশে কমে যায়।
ক্লান্তি দূরীকরণে:
দেহের দুর্বলতা দূর করতে এলোভেরার জুস খুবই কার্যকারী।
হজমশক্তি বাড়াবার জন্য এলোভেরা:
হজমশক্তি বাড়াতে এলোভেরা জুসের কোন জুড়ি নেই। এলোভেরার জুস অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূরীকরণে:
এলোভেরার জুসের মধ্যে যে জেল থাকে তার গুন অনেক। এই জেল নিয়মিত খাওয়া হলে পেটের সমস্যা দূর হবে। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ১৯ থেকে ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও বুক জ্বালা রোধ করে। আর যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করা হয় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এলোভেরা:
এলোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে শরীরে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এলোভেরা:
এলোভেরার জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ বজায় রাখে ও শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। যদি ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খাওয়া হয় তাহলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব।
মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে এলোভেরা:
এলোভেরায় মধ্যে আছে প্রচুর ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে।
মুখের ঘা এর জন্য এলোভেরা:
ভিটামিন বি এর অভাবে অনেকের মুখে ঘা হয়,এই ঘা ঠিক করতে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী।
আরো পড়ুন
এলোভেরার অপকারিতা
প্রাকৃতিক উপায়ে যখন এলোভেরার ভেতরের রসালো পদার্থটি বের করা হয় তখন এর সঙ্গে ভুলবশত ‘অ্যালো লেটেক্স’ বের হতে পারে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ল্যাটেক্স এলোভেরার পাতার মধ্যেই থাকে। যার রঙ হলদে।
যদি এলোভেরার শাঁসের সঙ্গে এই ল্যাটেক্স মিশে যায় আর তা যদি খাওয়া হয় তবে এটি শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। অ্যালো ল্যাটেক্স পেট ব্যথা এবং ক্র্যাশ যেমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আর অজান্তেই যদি ল্যাটেক্স এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করা হয় তবে ডায়রিয়া, কিডনি সমস্যা, প্রস্রাবে রক্ত, কম পটাশিয়াম, পেশী দুর্বলতা, ওজন হ্রাস এবং হৃদয় ব্যাঘাত ক্লেইন ল্যাটেক্সের উচ্চমাত্রা এমনকি কিডনি ফেইলিউর ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারে।
এমনকি অ্যালো ল্যাটেক্স ব্যবহারের ফলে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে মায়ের বুকের দুধ সন্তানকে খাওয়ার মাধ্যমেও এর ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও ত্বকে ব্যবহারের জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যালো ল্যাটেক্স খাওয়ানোর মাধমে শিশুর পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।