করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে।
করলা তেতো স্বাদযুক্ত। পরিণত ফল লম্বাটে, রঙ কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে কমলা বা লাল, দৈর্ঘ্য ১২-২৫ সেন্টিমিটার (৫-১০ ইঞ্চি), প্রস্থ ৫-৭ সেমি হয়ে থাকে। করলা কেটে লবন জলে ডুবিয়ে রাখলে তিক্ততা কমে। দক্ষিণ এশীয় এই সবজি এখন সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। যেকোন কিছুর সম্পুর্ণ উপকারিতা নিতে হলে প্রথমে আপনাকে এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জেনে নিতে হবে। প্রথমে এর উপকারিতা গুলো জেনে নিন।
করলা খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিগুণের বিবেচনায় করলা অনেক সমৃদ্ধ। বড় ধরনের রোগ সারাতে করলায় লুকিয়ে আছে অসাধারণ গুণ। আজ জেনে নেব, তিতা করলার গুণ সম্পর্কে।
★করলা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।
★করলায় আছে যথেষ্ট লৌহ, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এন্টি অক্সিডেন্ট-ভিটামিন এ এবং সি বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এছাড়া করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন। করলায় আছে ‘ই কোলাই’ নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে জীবাণুনাশী ক্ষমতা।
★করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল। এতে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালিতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা।
★খাবারে অরুচি দেখা দিলে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে করলা ফলের রস সকাল ও বিকেলে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
★ম্যালেরিয়ায় করলা পাতার রস খেলে খুব উপকার মেলে। এছাড়া ম্যালেরিয়ার রোগীকে দিনে তিনটে করলার পাতা ও তিনটি আস্ত গোলমরিচ এক সঙ্গে থেঁতো করে নিয়ম করে ৭ দিন খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। করলার পাতার রস খেলে জ্বর সেরে যায়। এছাড়া শিশুদের শরীর থেকে কৃমিও দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ কালো গোল মরিচের উপকারিতা, কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
★দেহ থেকে বাতব্যথা তাড়াতে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে। এভাবে কিছুদিন খেলে সুস্থ হবেন সহজেই।
★শরীর কামড়ানি, পানি পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমিভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছে বা করলার পাতার রস উপকারী। এক চা চামচ করলা পাতর রস একটু গরম করে অথবা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খেলে উপকার পাবেন।
★চোখের স্বাস্থ্যেঃ করলায় উচ্চমাত্রার বিটা-ক্যারোটিন থাকায় আমাদের চোখের যে কোনো সমস্যা সমাধানে ও চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে করলার জুড়ি নেই।
★ত্বকের যত্নেঃ নিয়মিত করলার রস গ্রহণে সোরায়াসিস ও ত্বকের অন্যান্য ফাংগাল ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য্যবর্ধন ও রক্ষা অনেকাংশে নির্ভর করে করলা গ্রহণের মাত্রার ওপর।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে বাদাম তেলের উপকারিতা, টক দই দিয়ে ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৫টি ফেসপ্যাক, চন্দন দিয়ে রূপচর্চাঃ ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করুন
★চুলের সৌন্দর্যেঃ ত্বক ও স্বাস্থ্যের সুস্থতা রক্ষা করা ছাড়াও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় করলার বিশেষ ভূমিকা আছে। করলার অন্তর্নিহিত গুণ চুলের যে কোনো সমস্যার সমাধানে সক্ষম।
চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে এক কাপ করলার রসের সঙ্গে দই মিশিয়ে চুলে লাগানোর কিছু সময় পর ধুয়ে নিলে চুল চকচকে হয়।
চুলের ডগা ফেটে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এ থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে দুদিন ফেটে যাওয়া চুলের ডগায় কাঁচা করলার রসের প্রলেপ দিলে সুফল পাওয়া যায়।
করলা প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করে। এক চিমটি চিনির সঙ্গে করলার রস মিশ্রিত করে চুলে প্রলেপ দেওয়া হলে চুল পড়ার হার হ্রাস পায়।
আরো পড়ুনঃ চুল থেকে খুশকি দূর করার উপায়, চুলে আপেল সিডার ভিনেগার লাগানোর উপকারিতা, তৈলাক্ত চুলের যত্ন
প্রতি ১০ দিনে একদিন পাকা চুলে করলার রস ব্যবহার করলে চুলের অকালপক্বতা ধীরে ধীরে কমে আসে।
চুলের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করতে করলার রস ও এপেল সিডার ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়।
করলা খাওয়ার অপকারিতা
অনিয়মিত হার্ট বিট কারণ হতে পারে তিতা করলা আমাদের হৃদয়ের জন্য উপকারজনক কারণ এটি ধমনীতে ক্লোজিং প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যাইহোক ২০১০ সালের একটি গবেষণায় “দ্য অ্যানালস অফ সৌদি মেডিসিন” প্রকাশিত হয় ।
শিশুরা খেলে শিশু পেটে ব্যথা, বমি ও পেট ফাপা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের জন্য বিষ ক্রিয়া করে।
হিপগ্লিসেমিক কোমা হতে পারে, আমাদের দেহে অত্যন্ত কম রক্তের শর্করার মাত্রা দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি ধরনের কোমা তৈরি করে এবং অনিয়মিত হৃদপিন্ডের জন্ম দেয়।
লিভার ইনফ্লেমেশন হতে পারে। আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খরচ কম। যাইহোক, গবেষণায় দেখা যায় যে, তিতা করলা বেশী খেলে লিভার এনজাইমকে উন্নত করে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে ।
★★সব খাবারের একটি ভালো খারাপ দিক আছে। এ হচ্ছে প্রকৃতির ঋনাত্বক ও ধনাত্বক বা আকষর্ন বা বিকর্ষন ক্রিয়া। তাই জানা থাকলে আপনার জন্য সুবিধা হবে। এজন্য আমরা আপনাকে করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছি।
আরো পড়ুনঃ