কিসমিস এর উপকারিতা সম্পর্কে আজকের পোস্টে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আঙ্গুর তাপদগ্ধ করে কিসমিস তৈরি করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে পারস্য ও মিশরে কিসমিস উত্থাপিত হয়। কিসমিস তৈরি করা হয় সূর্যের তাপে শুকিয়ে অথবা মাইক্রোওভেন ব্যবহার করে। সূর্যতাপে অথবা মাইক্রোওভেনে তাপে ফ্রুক্টোজ গুলো জমাট বেঁধে যায় এবং পরিণত হয় কিসমিস। কিসমিস প্রাচীনকাল থেকেই শক্তি বা ক্যালোরির উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিসমিস এর পুষ্টিগুণঃ
প্রতি 100 গ্রাম কিসমিসে রয়েছেঃ
উপাদান | প্রতি 100 গ্রাম |
শক্তি | 304 কিলোক্যালরি |
শর্করা | 74৪..6 গ্রাম |
ডায়েটারি ফাইবার | ১.১ গ্রাম |
চর্বি | ১.৮ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৮ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
লোহা | 8.৮ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | 20.4 মিলিগ্রাম |
কিসমিস এর উপকারিতা
১.কিসমিস শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি রক্তে কোষের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
২.কিসমিসেপ্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) থাকায় শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সমস্যা থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
৩.স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে কারণ এতে প্রচুর ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ ও পোটেনশিয়াল আছে।
৪.কিসমিসে ক্যাটেচিন নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা দেহের মধ্যে ভাসমান ফ্রি র্যাডিকলগুলিকে লড়াই করে এবং নির্মূল করে।
৫.কিসমিসে থাকা বোরন মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। বোরন ধ্যান বাড়াতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ, এটি কাজের প্রতি একাগ্রতা বাড়ে। এটি শিশুদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে।
৬.কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তাল্পতা হ্রাস করতে সরাসরি সহায়তা করে।
৭.কিসমিস চোখের জন্য আদর্শ খাবার। কিসমিস দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। কিসমিসে বিটা ক্যারোটিন থাকে ।
৮.কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরকে দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে। এটি খাদ্য হজম করা সহজ করে এবং দেহে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলি দূর করে।
৯.কিসমিসে আরও একটি উপাদান রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড় এবং দাঁতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও কিসমিসে বোরন নামে একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা হাড়ের সঠিক গঠনে সহায়তা করে।
১০.কিসমিসে ফেনল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে, এতে অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাল সংক্রমণের ফলে জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
কিসমিস বহু গুণাবলী একটি খাবার। এমনকি কিসমিসে ভেজানো জল শরীরের জন্য খুব উপকারী, কিসমিস খাওয়া রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। শরীরে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। কিসমিস শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
যারা ভাল ঘুমতে পারেন না এবংপাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতাও দেখা দেয়। কিসমিস তাদের ক্ষেত্রে একটি যাদুকর ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে থাকা আয়রন আপনাকে ভাল ঘুমাতে সহায়তা করে। যেমনটি আমরা সবাই জানি, আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা কেবলমাত্র হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে না, বিপাককেও উন্নত করে।।
মানসিক অবসাদ দূর করতে কিসমিসের ভূমিকা এখানে আলোচনা করা হয়নি, তবে কিসমিস ভালো ঘুমে সাহায্য করে এবং দেহ ও মনকে শান্ত করে। আপনি বাড়িতে ড্রাই ফ্রুটটি তৈরি করতে পারেন।
বাড়িতে কিসমিস তৈরির পদ্ধতি
উপকরণঃ আঙ্গুর বড় লম্বা আকৃতির ১ কেজি, পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ।
প্রনালীঃ চুলায় প্যান বসিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। এবার আঙ্গুরগুলো পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করুন। আঙ্গুরগুলো পানির ওপরে উঠে আসলে এবং একপাশে ফেটে গেলে বুঝতে হবে আঙ্গুর সিদ্ধ হয়ে গেছে। নামিয়ে পানি ঝড়িয়ে রাখুন।
একটি ঝাঁঝরিতে সুতি কাপড় দিয়ে তার ওপর আঙ্গুরগুলো বিছিয়ে রোদে দিন। টানা ২ থেকে ৩ দিন রোদে দিন। শুকিয়ে গেলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর কিসমিস।এরপর কাঁচের বোয়ামে সংরক্ষণ করুন।
কিসমিস অনেকে খাবারের পরে খেয়ে থাকেন।কিন্তু আপনি জানেন কি?খালি পেটে ভেজানো কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
▪️কিসমিস ভেজানো পানি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
▪️প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন।
▪️কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় সারারাত কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভোরে সেটা খান। ভেজানো কিসমিসে থাকে আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার।
▪️যাঁরা প্রায়শই পেটের গণ্ডগোলে ভোগেন তাঁদের জন্য এই টনিক বিশেষ উপকারি।
▪️কিসমিস থেকে পাওয়া যায় ভরপুর এনার্জি, যা সারাদিন আপনাকে রাখবে প্রাণবন্ত।
▪️কিসমিস ভেজানো পানি খেলে লিভারের পাশাপাশি কিডনিও খুব ভাল থাকে। আর কিডনি ও লিভার যদি ভাল থাকে তাহলে তা পরোক্ষভাবে হজমে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ