টক দই রেসিপি কিভাবে ঘরে বসেই খুব সহজে তৈরি করবেন সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত গাইডলাইন নিয়ে এসেছি। পোস্টের শেষে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল ও দেয়া হয়েছে।
টক দই একটি অতি পরিচিত ও সহজলভ্য খাবার। আমরা সবাই কম বেশি এই খাবারের সাথে পরিচিত। টক দই এ এক দিকে যেমন রয়েছে অনেক পুষ্টিগুন৷ আবার অন্যদিকে এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু। অনেকেই মিষ্টি দই এর চেয়ে টক দই খেতে বেশি পছন্দ করে। আবার অনেকে টক দই খেতে পছন্দ করে না।
টক দই এর উপকারীতা অনেক। টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন B2, ভিটামিন B12 থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকার কারণে হাড় ও দাঁতের গঠনে ও মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই অষ্টিওপোরেসিস ও আরথ্রাইটিস বা বাত ব্যথার রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে উপকার পাবেন।
আগের পোস্টে আমরা দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যদি আপনি পোস্টটি না পড়ে থাকেন, তাহলে এখনি পড়ে আসুন।
শারীরিক এতো উপকারের পাশাপাশি টক দই আমাদের দৈনন্দিন রান্না কে আরও সুস্বাদু করে তোলে। মাংস, বিরিয়ানি, রোস্ট সহ আরও অনেক খাবার এর স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় এই টক দই। কিন্তু অনেক সময় দোকান থেকে আমরা টক দই কিনে আনা হয়ে ওঠে না। তাই বলে কি মজাদার রান্না থেমে থাকবে! মোটেও না। সেক্ষেত্রে আমরা খুব সহজেই ঘরে বসে বিভিন্ন পদ্ধতিতে টক দই তৈরি করে নিতে পারি।
আজ আমরা ঘরে বসে কিভাবে এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর টক দই রেসিপি কয়েকটি পদ্ধতি জানবো~
টক দই রেসিপি
গুড়া দুধের টক দই রেসিপিঃ গুড়া দুধের মাধ্যমে টক দই তৈরি করা খুবই সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত।
এই পদ্ধতিতে টক দই তৈরি করতে প্রথমেই নিতে হবে গুড়া দুধ। যদি এক কাপ গুড়া দুধ নেয়া হয় তাহলে তার সাথে কুসুম গরম পানি দিতে হবে সেই কাপ এর ই দের কাপ পরিমাণ। পানি টি অবশ্যই হাল্কা গরম হতে হবে। পানির তাপমাত্রা এমন হতে হবে যেন আঙুল ডুবিয়ে রাখলে ১০-১৫ সেকেন্ড চুবিয়ে রাখা যায়।
কুসুম গরম পানি ও গুড়া দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিয়ে অল্প পরিমাণ টক দই দিতে হবে। আবারও খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে উপাদান গুলি। এরপর এই তরল দুধ একটি মাটির হাড়ি বা বাটি তে ঢেলে দিতে হবে। মাটির হাড়ি তে দই বসালে দই থেকে যেই অতিরিক্ত পানি টা বের হয় তা মাটির হাড়ি বা বাটি শোষণ করে নেয়। ফলে দই একদম পারফেক্ট হয়।
এরপর ভাড়ি কোনো কাপড় যেমন – কম্বল দিয়ে এই দুধের বাটি পেচিয়ে রেখে দিতে হবে সারারাত। সারা রাত রেখে দেয়ার পরে দেখা যাবে যে দুধ জমে টক দই তৈরি হয়ে গেছে। এরপর চাইলে ২-৩ ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে আরো ভালো ভাবে জমবে এবং আপনারা পাবেন একটি পারফেক্ট টক দই।
সারা রাত জমতে দেয়ার মতো সময় যদি হাতে না থাকে তাহলে আমরা চুলায় হিট দিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে টক দই তৈরি করে নিতে পারি। তার জন্য উপরের নিয়মে তরল দুধ তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর চুলায় বসাতে হবে একটি ফ্রাই প্যান। ফ্রাই প্যানের উপর দিতে হবে একটি মোটা কাপড়। তার উপর দুধের হাড়ি বসিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনায় কোনো ছিদ্র থাকলে তাও বন্ধ করে দিতে হবে। এই ভাবে রেখে দিতে হবে ১ ঘন্টা। এক ঘন্টা পরে দেখা যাবে টক দই তৈরি হয়ে গেছে।
গরুর দুধের টক দই রেসিপিঃ প্রথমেই গরুর দুধ জাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। ১ লিটার দুধ নিলে তা জাল দিয়ে ১/২ লিটার করে নিতে হবে। খুব ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন দুধ তলায় লেগে না যায়। এই ভাবে দুধ যখন ঘন হয়ে যাবে তখন চুলা বন্ধ করে দুধকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে।
দুধ যখন হালকা গরম থাকবে তখন এতে টক এর বিজ ঢেলে দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিতে হবে। কম্বল বা ভাড়ি কাপড়ের মধ্যে পেচিয়ে সারা রাত রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে গরুর দুধের টক দই। আরো ঘন করার জন্য ফ্রিজে রাখতে পারেন।
এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে গরুর দুধের পারফেক্ট টক দই।
আরো পড়ুনঃ দুধের উপকারিতা, দুধের পুষ্টি উপাদান কি কি
লেবু দিয়ে টক দই রেসিপিঃ গুঁড়া দুধ হলে পরিমানমত গরম পানি মিশিয়ে তাকে তরল করে নিন। আর গরুর দুধ হলে চুলায় জাল দিয়ে ঘন করে নিন।
এবার পাত্রের গরম দুধে লেবুর রস দিয়ে দিন, ১ কাপ দুধে ২ চামচ লেবুর রসই যথেষ্ট। দুধ এবং লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন।এখন সবশেষে পাত্রটিকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন, ঠান্ডা হয়ে এলেই দেখবেন দুধ জমাট বেঁধে দইয়ের রূপ নিয়েছে। এভাবেই আমরা খুব সহজেই লেবু দিয়ে টক দই তৈরি করে ফেলতে পারি।
তেতুল দিয়ে টক দই রেসিপিঃ টক দই তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু তেতুল দিয়েও যে পারফেক্ট ভাবে টক দই তৈরি করা যায় তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। পদ্ধতিটি খুবই সহজ। তেতুল দিয়ে টক দই তৈরির প্রক্রিয়া জেনে নেয়া যাক-
যেই টুকু দই তৈরি করতে চান সেই পরিমাণ দুধ কিছুক্ষণ জাল দিয়ে নিতে হবে। এরপর দুধ ঠান্ডা করে একটি বাটিতে ঢেলে নিতে হবে। দুধ কতটুকু ঠান্ডা সেই পরিমাণ টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাতের আঙুল ডুবালে ১০-১৫ মিনিট চুবিয়ে রাখা যায়, এই পরিমাণ গরম থাকা অবস্থায় দিয়ে দিতে হবে একটি তেতুল বা তেতুলের রস।
এরপর এটি রেখে দিতে হবে কোনো গরম স্থানে। এই ক্ষেত্রে বাটির উপর কোনো কাগজ বা পেপার দিয়ে তার উপর একটি কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখলে ভালো গরম থাকে। এই ভাবে রেখে দিতে হবে ৭-১০ ঘন্টা।
নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা যাবে দুধ জমে দই হয়ে গেছে। এছাড়াও শুধু ঢাকনা দিয়ে বাটি ঢেকে রাখলেও দুধ জমে দই হয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে জমাট বাধার জন্য দুধ ঢেকে রাখতে হবে ২৪ ঘন্টা। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এই নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে যেন দুধ এর বাটি সংরক্ষিত স্থান থেকে বের করা না হয় বা ঢাকনা খোলা না হয়।
ঠিক একই পদ্ধতিতে আমরা কাচা মরিচ ও শুকনা মরিচ দিয়েও টক দই বানাতে পারি।
ভিনেগার দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে টক দই রেসিপিঃ এক্ষেত্রেও গুড়া দুধ ও গরুর দুধ দুটোই ব্যবহার করা যাবে।
গুঁড়া দুধ হলে পরিমানমত গরম পানি মিশিয়ে তাকে তরল করে নিন। গরুর দুধ হলে চুলায় জাল দিয়ে ঘন করে নিন। কুসুম গরম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার পাত্রের কুসুন গরম দুধে ভিনেগার দিয়ে দিন, ১ কাপ দুধে ২-৩ চামচ ভিনেগার ই যথেষ্ট।
ভিনেগার দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিতে হবে। দেখা যাবে সাথে সাথেই দুধ জমতে শুরু করেছে।এখন সবশেষে পাত্রটিকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন, ঠান্ডা হয়ে এলেই দেখবেন দুধ জমাট বেঁধে দইয়ের রূপ নিয়েছে।
এভাবেই আমরা কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ১০ মিনিটে টক দই তৈরি করে ফেলতে পারি।
ডায়েট ও রুপচর্চার জন্য ১ মিনিটে তৈরি টক দই রেসিপিঃ ডায়েট ও রুপচর্চায় ব্যবহার করার জন্য যে টক দই লাগবে তা অবশ্যই ভিনেগার ছাড়া তৈরি করতে হবে। কারণ ডায়েটের জন্য তৈরি টক দই এ ভিনেগার থাকলে তাতে গ্যাসট্রিক এর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এবং ফেস এ লাগালে চোখ দিয়ে পানি ঝরবে। তাই আজকে গরুর দুধ ও লেবু দিয়ে কিভাবে ১ মিনিট এ টক দই তৈরি করা যায় তা জানবো–
এর জন্য গরুর দুধ আগে থেকেই জাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। যেহেতু ডায়েটের জন্য উপযোগী করতে হবে তাই এটি হবে লো ফ্যাট দই। এর জন্য দুধের উপরের সর সরিয়ে নিতে হবে। তারপর পরিমাণ মতো দুধ পাত্রে ঢেলে নিতে হবে।
দুধ টা অবশ্যই ঠান্ডা করে নিতে হবে। যদি দুধ হালকা গরম থাকে আর তাতে লেবুর রস দিয়ে টক দই তৈরি করলে অনেক সময় ছানা হয়ে যায়। তাই অবশ্যই দুধ পুরোপুরি ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর নিতে হতে লেবুর রস।
এক কাপ দুধের জন্য একটি লেবুর রস নিতে হবে। লেবুর রস দুধে দিয়ে দিতে হবে। তারপর হালকা ভাবে মিক্স করতে হবে। খুব দ্রুত মিক্স করা যাবে না তাহলে ছানার মতো হয়ে যাবে। প্রথম বার চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করার পর কয়েক সেকেন্ড রেখে দিতে হবে তারপর আবার চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় করলেই দেখা যাবে ১ মিনিটের মধ্যেই খুব সুন্দর ভাবে টক দই তৈরি হয়ে গেছে।
ত্বকের যত্নে টক দইয়ের ব্যবহার জানতো আমাদের এই প্রতিবেদনটি পড়ুন:
এই টক দই খালি পেটে খাওয়া যাবে না। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর আগে এই দই খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। মুখের সাথে সাথে চুলেও ব্যবহার করা যাবে এই দই।
সাবধানতাঃ টক দই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সচেতনতা জরুরি। ঘরে বানানো দই খাওয়া সবচেয়ে ভালো। বাইরে থেকে কিনলে মেয়াদ দেখে কিনতে হবে। আর খুব বেশি ঠান্ডা দই না খাওয়াই ভালো।
আরো পড়ুনঃ