প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা – ফল, সবজি ও মাছ

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় কি কি ফল, সবজি, মাছ এবং অন্যান্য খাবার রয়েছে তার সবকিছুই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।

প্রোটিন খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। এই উপাদান শরীরের সার্বজনীন গঠনের জন্য ভূমিকা রেখে থাকে। একটি বাড়ি নির্মাণ করতে যেমন প্রয়োজন হয় ইটের, যা ছাড়া বাড়ির বেইস করা সম্ভব নয়। সেরকমই শরীরের গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় প্রোটিনের।পুরো জীবনে আপনি কার্বোহাইড্রেট না খেয়েও বেচে থাকতে পারবেন এমনকি ফ্যাটযুক্ত খাবার না খেলেও আপনার তেমন কোনো ক্ষতিই হবেনা। কিন্তু প্রোটিন গ্রহণ না করলে আপনি ৭০ দিনের বেশি বাঁচতে পারবেন না।

আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন ধরে রাখার জন্য নিত্যদিন আমরা কতই না ডায়েট ফলো করে থাকি।এসব ডায়েটে অন্য খাবারের তুলনায় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা বেশি জরুরি হয়ে পড়ে। প্রতিদিন আমাদের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের সাথে তাল মিলিয়ে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। তাই যদি আপনার ওজন হয় ৫০ কেজি হয় সেক্ষেত্রে সারাদিন আপনাকে খাদ্যের মাধ্যমে প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। এই নিয়ম মেনে চললে তবে আপনি সুন্দর দৈহিক গঠন ধরে রাখতে পারবেন।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ গ্রাম প্রোটিন অবশ্যই খেতে হবে। আর একজন পুরুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭৫ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে হবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা

ডিম

ডিম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অতি সাধারণ একটি খাবার। এটি প্রোটিনের যোগান দিয়ে থাকে।একটি ডিমে ৬ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও এর মধ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, ফোলেট, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৬, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি থাকে। ডিম হাড়ের গঠন, মস্তিষ্ক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস পছন্দ না এরকম মানুষ কোথাও পাওয়া বিরল। আমাদের খাবার মেনুতে সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন মুরগির মাংস রাখলেই শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেকটাই দূর হয়। মাত্র ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে ২৭ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে ৯ প্রকারের গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো এসিডও বিদ্যমান।

মাছ

১০০ গ্রাম মাছে ২২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। যেহেতু মাছ আমাদের অতি সাধারণ এবং নিত্যদিনকার একটি খাবার, সেহেতু এর মাধ্যমে আমরা সহজেই প্রোটিন এর চাহিদা মেটাতে পারি।এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো এসিড। সপ্তাহে ৩ দিন খাদ্য তালিকায় এই মাছ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

See also  এলার্জি দূর করার উপায়ঃ চিরতরে বিদায় বলুন

ভুট্টা

১ কাপ ভুট্টায় প্রায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার,ম্যাংগানিজ, কপার, ভিটামিন বি ৫ থাকে। এটি চোখের জন্য এবং অন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী। এটি হার্টের রোগ এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকেও রক্ষা করে থাকে।

বাদাম

বাদামে ৬ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে। এছাড়া বাদামের মধ্যে ভিটামিন ই , ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাংগানিজ, কপার, ভিটামিন বি২, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সাইট্রিক এসিড থাকে। এটি শুধুমাত্র প্রোটিনের আধারই নয় এটি নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা দূর হয়। ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এটি ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেসার রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

বাদামের মধ্যে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম ও চিনাবাদামে ও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে প্রোটিনের পরিমাণ ১৮ গ্রাম। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি।

মাত্র ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ১৮ গ্রাম প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এ,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৫ টা করে কাজুবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। এটি গর্ভবতী নারীর ভ্রুনের ব্রেনের গঠনেও সাহায্য করে থাকে।

প্রতি ১০০ গ্রাম চিনাবাদামে প্রোটিনের পরিমাণ ২৬ গ্রাম। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ই, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন খাবার রুটিনের পাশাপাশি অন্তত চার দিন এক মুঠো করে চিনেবাদাম খেতে পারেন।

মাত্র ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে ২৫ গ্রাম প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, কপার ও সেলেনিয়াম থাকে। সপ্তাহে কয়েকদিন যদি দিনে ১০ টি কাঠ বাদাম কেউ খেতে পারে তাহলে প্রোটিন এর চাহিদা পূরন সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ বাদামের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

সয়াবিন

মাত্র ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৫০ গ্রাম প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং উচ্চ মানের ফাইবার পাওয়া যায়। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন সোয়াবিন সিদ্ধ বা রান্না করে খেতে পারেন।

দুধ

দুধ এমন একটি খাবার যার মধ্যে পুষ্টিগুণের কোনো অভাব নেই। সেইসব পুষ্টিগুন নিয়মিত আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে। ১ কাপ দুধে প্রোটিন থাকে ৮ গ্রামের মতো। এছাড়াও এতে ফসফরাস, পটাসিয়াম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি২, ক্যালসিয়াম, এবং কিছু খনিজ উপাদান উপস্থিত থাকে। এটি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সারের ঝুঁকি এবং কিডনিতে স্টোন হবার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও এটি শরীরের হাড় ও দেহের গঠনে ভূমিকা পালন করে থাকে।

See also  প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা

পনির

প্রতি ১০০ গ্রাম পনিরে রয়েছে ২৭ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়া এর মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি২, ভিটামিন ডি এবং জিংক থাকে।

এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং নিয়মিত সেবনে হাড় ও পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয়। গর্ভবতী মহিলা, হার্টের রোগী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। পনির নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।

ডাল

বিভিন্ন ধরনের ডালে বিভিন্ন মাত্রার প্রোটিন বিদ্যমান। আমরা সাধারণ যে ডাল খেয়ে থাকি সে গুলো পরিমাপ করলে ১ কাপ রান্না করা ডালে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার আয়রন ফোলেট এবং আরো অন্য পুষ্টিগুণ ও রয়েছে। ডাল নিয়মিত সেবন করলে তার হার্টের নানা অসুখের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ক্যান্সার, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, প্লাটিলেট ইনসুলিন এবং এইচআইভি রোগীর জন্য ও অনেক উপকারী।

অঙ্কুরিত ছোলা

মাত্র ১০০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলায় ২০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং আয়রন। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে সপ্তাহে তিন দিন এই ছোলা খাওয়া উচিত।

ওটস

অনেকেই ডায়েটের জন্য নিয়মিত ওটস খেয়ে থাকেন। কারণ অর্ধেক কাপ কাচা ওটসে ১৩ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, ফোলেট ভিটামিন বি, ভিটামিন বি৫ ইত্যাদি। এবং কম মাত্রায় ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি ৩ উপস্থিত থাকে।

নিয়মিত ওটস খেলে শরীরের ওজন কম হয়, ব্লাড প্রেসার লেভেল কম হয় এবং হার্টের রোগ হবার সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে কোলেস্টেরল কমে যায় এবং এটি ত্বকের জন্য উপকারী হয়ে ওঠে।এটি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে ও সাহায্য করে।

ব্রকলি

ব্রকলিতে সর্বোচ্চ মানের প্রোটিন পাওয়া যায়। ১ কাপ কাটা ব্রকলিতে ৮ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার এবং ভিটামিন সি-এর ভান্ডার। প্রোটিনের অভাব পূরণ করার জন্য প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্রকলি সিদ্ধ করে খেতে পারেন। এটি শরীরের ইনফেকশন সারাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে, ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করতে, দাঁত মজবুত করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, মনের শক্তি এবং স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

দই

দইয়ের মধ্যে প্রায় ১১ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। দই হজম শক্তি ত্বরান্বিত করে, ত্বক থেকে কালো ভাব দূর করে, হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করে এবং চুলের খুশকি দূর করে থাকে।

See also  সরিষা ফুল নিয়ে ক্যাপশন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সহজ প্রকাশ

আলু

আলু আমাদের অত্যন্ত পরিচিত এবং সাধারন একটি খাবার। একটি মাঝারি সাইজের আলুতে ৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়া এতে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি,ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন থাকে।এটি হার্টের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু যাদের কোলেস্টেরল এবং ডায়বেটিস অনেক বাড়া থাকে তারা আলু এড়িয়ে যাবেন।

এটি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। রক্তের অভাব দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

ফুলকপি

১ টি কাটা হাফ ফুলকপির মধ্যে ২ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে আছে পটাসিয়াম ভিটামিন সি ভিটামিন বি৬, আয়রন ভিটামিন কে, ফলিক এসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এটি ক্যান্সার, হার্টের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

মাশরুম

মাশরুম এমন একটি খাবার যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। দৈহিক গঠন, হাড়ের গঠন, এবং দাঁত মজবুত করতে এই মাশরুম অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। মাশরুম গ্রহণের সময় এটি ভোজ্য মাশরুম কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের উপকারিতা

১. দেহের গঠন ও মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে প্রোটিন।
২. ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল করে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. শরীরে এনার্জির ব্যালেন্স করে শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে প্রোটিন।
৫. মাংসপেশির ক্ষয় রোধ করে প্রোটিন।
৬. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৭. হাড়ের গঠন সুদৃঢ় করে।
৮. দাঁত মজবুত করে।
৯. হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে, হার্টকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখে।
১০. নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় মেদ কমে যায়।যার ফলে আপনার ওজন কমতে শুরু করে।

আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণে শরীরের প্রতিটি কোষে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং মাংসপেশির বৃদ্ধি সুগঠিত হয়। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এর তালিকা থেকে কোন প্রোটিন টি আমাদের জন্য সহজলভ্য তার একটি তালিকা তৈরি করে আমাদের দৈনন্দিন খাবারে এই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান টি যোগ করে নেয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (24 Reviews)
Subna Islam
Subna Islam
Articles: 80