আজকাল মেকআপ করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় কমই। মেকআপ যে রেগুলার বাসা থেকে বের হতেই আপনার করতে হবে এমন কিছুনা। আপনার যখন মন চাইলো, যখন আপনি কোনো প্রোগ্রাম এ যাচ্ছেন আপনি চাইলেই নিজেকে আরো একটু পরিপাটি দেখানোর জন্য মেকাপ ব্যবহার করতে পারেন।
মেকআপ মানে এই না যে আপনাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছুতে পরিনত হতে হবে। বরং মেকআপ মানেই হলো আপনার নিজের ত্বক যাকে আরো সুন্দর করে প্রতিস্থাপন করা। এখন এই মেকআপ করতে আমরা কতো রকমের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। বেশিরভাগ প্রোডাক্ট এর নাম আমরা সবাই জানি। মেকআপ এর অন্যতম প্রধান এবং সবচেয়ে কমন যে আইটিম টি সবাই ব্যবহার করে থাকেন অনেক শুরু থেকেই সেটি হলো ফাউন্ডেশন। আজকে এই ফাউন্ডেশন ব্যবহারের নিয়ম এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কথা বলবো।
আরো পড়ুনঃ মেকআপ করার নিয়ম যা আপনাকে আরো সুন্দর দেখাবে, মেকাপের জিনিসের নাম এবং ব্যবহারের নিয়মঃ নতুনদের জন্য 2022
ফাউন্ডেশন কি?
ফাউন্ডেশন হলো এমন একটি প্রোডাক্ট যা ত্বকের উপরিভাগে ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের টেক্সচার কে মসৃণ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করা হয়। এটি সম্পূর্ণই ত্বকের উপরিভাগের প্রোডাক্ট। এটি ক্রিমি ধরনের। ত্বকের প্রকারভেদ অনুযায়ী কখনো এটি তরল জাতীয় বা কখনো ম্যাট জাতীয় হয়ে থাকে।
আমরা যখন ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে নেই তখন আমরা কখনো কখনো নানা সমস্যায় ভুগি।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা নতুন মেকআপ করছেন তারা নানা সমস্যার শিকার হয়ে থাকে। কখনো স্কিন টাইপ অনুযায়ী পারফেক্ট শ্যাড খুঁজে পাচ্ছিনা, কখনো ফাউন্ডেশন এপ্লাই এর এক থেকে দুই ঘন্টা পর তা অক্সিডাইস করছে এরকম নানা বিষয়ে আমাদের প্রবলেম হয়ে থাকে। আসলে সঠিক ভাবে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করার কিছু নিয়ম আছে যা মেনে না চললেই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমরা নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ি।
ফাউন্ডেশন অক্সিডাইস হয় কেনো?
আপনি যত বড় ব্র্যান্ড এর ফাউন্ডেশন ই কিনেন না কেনো তা কারো কারো ত্বকে অক্সিডাইস করতেই পারে। এতে আমরা ধরে নেই ওই ব্র্যান্ড টা ভালো না।
ফাউন্ডেশন অক্সিডাইস এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া যা ফাউন্ডেশন এপ্লাই এর কিছুক্ষণ পর হয়ে থাকে। ত্বকের সিবাম বা তৈল এর সাথে ফাউন্ডেশন এর উপাদান সমূহ একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে অক্সিডাইস হয়ে থাকে। যার ফলে আপনার ব্যবহার করা ফাউন্ডেশন এক দুই শ্যাড মলিন হয়ে যায়। অর্থাৎ অনেকটাই কালো হয়ে যায় আপনার স্কিন টোন থেকে।
যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের ত্বকে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শুষ্ক ত্বকেও এটি হতে পারে যদি আপনি আপনার ত্বক অনুযায়ী পারফেক্ট ফাউন্ডেশন টি খুজে বের করতে না পারেন এবং ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পূর্বে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে না চলেন।
কিভাবে ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করবেন?
আমরা ফাউন্ডেশন অনলাইন অর্ডার করি বা অফলাইনে কিনি, আমাদের অবশ্যই ত্বকের ধরন, আমাদের স্কিন টোন এবং ফাউন্ডেশন টা কোন ধরনের তা বুঝে কিনতে হবে। নিচে এর নিয়ম গুলো লিখে দেয়া হলো :
১. শুরুতেই আপনার ত্বকের ধরন কি তা জেনে নিবেন। তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিক্স বা কম্বিনেশন সব ধরনের ত্বকের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের ফাউন্ডেশন রয়েছে। যেমন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য রয়েছে ম্যাট ফাউন্ডেশন যা ত্বকে তৈলাক্ত ভাব আনবে না, বরং ফাউন্ডেশন এপ্লাই এর পরে অতিরিক্ত তৈল উৎপাদন হতে দিবেনা। এতে করে আপনার ত্বকে ব্রণ হবার সম্ভাবনা ও কমে যাবে।সেরকমই শুষ্ক ত্বকের জন্য রয়েছে অয়েল বেসড ফাউন্ডেশন। যা ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে ত্বকে পারফেক্ট ওয়েল ব্যালেন্স করে ফাউন্ডেশন টাকে মসৃণ রাখে।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ দূর করার উপায়ঃ ঘরোয়া পদ্ধতি, ব্রণের উপর নারিকেল তেল: এটি ভাল না খারাপ?
২. ফাউন্ডেশন এর শ্যাড নির্ধারণ করার সময় অবশ্যই এর শ্যাড টা আপনার হাতের কব্জি বা হাতের উল্টো দিকে লাগিয়ে আপনার স্কিন টোন এর সাথে ম্যাচ করে নিতে হবে। অথবা আপনি আপনার চিন এর একটু উপরের অংশে ফাউন্ডেশন শ্যাড টি ব্যবহার করে ব্লেন্ড করে দেখতে হবে যে তা স্কিন এর সাথে মিশে যাচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
যদি ফাউন্ডেশন টি অত্যাধিক হোয়াইট কাস্ট দেয় তাহলে বুজতে হবে আপনি এক শ্যাড লাইট ফাউন্ডেশন নিয়ে নিয়েছেন। যে ফাউন্ডেশন শ্যাড টি আপনার স্কিন এর সাথে মিশে যাচ্ছে এবং আপনার ফেসিয়াল টেক্সচার অনেকটাই ঢেকে দিচ্ছে সেই ফাউন্ডেশন টাই হবে আপনার জন্য পারফেক্ট শ্যাড।
৩. কোন কারণে যদি আপনার ফাউন্ডেশন অক্সিডাইস করে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফাউন্ডেশন কেনায় অথবা আপনার ব্যবহারকৃত প্রাইমার সিলেকশন এ কোনো না কোনো ভুল আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
শুধু যে একটি পারফেক্ট ফাউন্ডেশন সেট বাছাই করলে আপনার ত্বকে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজ হবে না বা মসৃণ একটি বেইস পাবেন তা নয়। আপনাকে অবশ্যই পারফেক্ট একটি ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমার ও ব্যবহার করতে হবে আপনার স্কিন টাইপ বুঝে।
বাজারে অনেক ধরনের প্রাইমার পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনটি আপনার প্রয়োজন তা অবশ্যই আপনি জেনে নিবেন। যদি আপনার অনেক বেশি ওপেন পোরস থাকে সেক্ষেত্রে পোরস মিনিমাইজিং প্রাইমার আপনার প্রয়োজন হবে। এরকম অতিরিক্ত তৈল যুক্ত ফেইস হলে অয়েল কন্ট্রোল প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে। এরকম ভাবেই আপনার স্কিন টাইপ এবং স্কিন এ থাকা সমস্যা বুঝেই আপনার প্রাইমার কিনা উচিত।
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের নিয়ম How to use Foundation
শুরুতেই আপনার ত্বক ভালো ভাবে ফেইসওয়াস দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। মুখমণ্ডল ড্রাই হওয়ার পর তাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যদি সম্ভব হয় মেকাপ ব্যবহার করার ১০ মিনিট আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিবেন। এতে আপনার ফেইস অনেকটা সেট হয়ে যাবে মেকাপ এর জন্য।
এরপর আপনার ত্বকের সাথে মেচিং একটি প্রাইমার ব্যবহার করুন। প্রাইমার অবশ্যই আপনার স্কিন এর প্রয়োজন বুঝে কিনবেন। প্রাইমার ব্যবহার করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত তা ভালো ভাবে আপনার ত্বকের সাথে মিশে না যাচ্ছে। তারপর চাইলে আপনি কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখবেন কনসিলার ত্বকে এপ্লাই করে সাথে সাথে ব্লেন্ড না করে কিছুক্ষণ পর ব্লেন্ড করলে তা অনেকটা স্মুথ হয়ে বসে আইলিড ও অন্যান্য এরিয়া গুলো তে। এরপর ফাউন্ডেশন এর এক থেকে দুই ড্রপ কোনো কৌটা বা হাতের উল্টো দিকে নিয়ে ডট আকারে প্রথমে গালে তারপর সম্পূর্ণ ফেইসে লাগিয়ে নিন।
তারপর একটি ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে আস্তে আস্তে ব্লেন্ড করবেন। কখনোই টেনে টেনে ব্লেন্ড করার ট্রাই করবেন না। চেপে চেপে ব্লেন্ড করবেন। এতে ফাউন্ডেশন সুন্দর ব্লেন্ড হয়ে যাবে। এরকম ভাবে সম্পূর্ণ ফেইস ব্লেন্ড করার পর প্রয়োজন হলে আরো ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
ফাউন্ডেশন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার না করলে তা ভালো ভাবে ব্লেন্ড হয় না এবং অনেকটাই ভেসে থাকে ত্বকে। তাই পারফেক্ট শ্যাড, প্রাইমার ব্যবহার এবং নিয়ম গুলো মেনে ফাউন্ডেশন ব্যবহারেই একটি স্মুথ ক্যানভাস নিশ্চিত করা যায়।
আরো পড়ুনঃ