ব্রয়লার মুরগি হচ্ছে জেনেটিক্যালি ডেভেলপকৃত একটি উন্নত জাতের মুরগি। ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন শুরু হয় ষাটের দশক থেকে। সে সময়ের ব্রয়লারের বৃদ্ধি ছিলো অনেক শ্লো।
১৯৬৪ সালে “এগ্স্ এ্যান্ড হেন” নামক পোল্ট্রি খামারে সর্ব প্রথম সাভারের কাশেমপুরে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন শুরু হয়। তৎপরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৮০ সনের দিকে বাংলাদেশ বিমানের অধীনস্থ বিমান পোল্ট্রী কমপ্লেক্স নামক বানিজ্যিক পোল্ট্রী খামারে একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি করা শুরু হয়। ১৯৮০ সন থেকে ১৯৮৫ সনের মধ্যে আস্তে আস্তে আমাদের দেশে ব্রয়লার পরিচিত হয় এবং উৎপাদন শুরু হয়।
১৯৯০ সনের দিকে ব্রয়লার শিল্প ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প হিসেবে ফলপ্রসুভাবে প্রসার লাভ করে । বর্তমানে বাংলাদেশের সব জেলা ও উপজেলায় কমবেশী ব্রয়লার উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রতি বৎসর প্রতি খামারে পর্যায়ক্রমে ৫-৬ ব্যাচ ব্রয়লার পালন করা যেতে পারে।ষাট দশকে ব্রলার ১৬ সপ্তাহ বয়স হলে একটি ব্রয়লার দুই কেজি ওজন আসত। তার সাথে তুলনা করলে এখন একটি ব্রয়লারের সে ওজন আসে মাত্র ২৮-৩০ দিনে।
বর্তমানে একটি ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন আসার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে-জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ারিং এবং ক্রমাগত ব্রিডিং(উন্নত মরোগের সাথে উন্নত মুরগির মিলন ঘটানো)।দ্রুতবর্ধনশীল বিশেষ জাতের মোরগ-মুরগির বাচ্চা যা ৫-৬ সপ্তাহে প্রায় ১.৫ থেকে ২.০ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয় এবং যা প্রায় দুই কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয়। ব্রয়লারের বুকের মাংস নরম ও থলথলে।বর্তমানে এটি জনপ্রিয় প্রোটিন উৎস।ব্রয়লার এ স্পেশাল ফরমুলার খাবার দেওয়া হয় যেখানে প্রোটিন খুব বেশি পরিমাণে থাকে। প্রোটিনের পাশাপাশি এতে রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ।
ব্রয়লার মুরগির পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির কাঁচা মাংসে পুষ্টি উপাদান রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রাম |
কিলোক্যালরি | ১১৯ গ্রাম |
প্রোটিন | ২১.৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ৩.১গ্রাম |
কলেস্টেরল | ৭০ মিলিগ্রাম |
প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা ব্রয়লার মুরগির মাংসে পুষ্টি উপাদান রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রাম |
কিলোক্যালরি | ১৬৭ গ্রাম |
প্রোটিন | ২৫ গ্রাম |
ফ্যাট | ৬.৬ গ্রাম |
কলেস্টেরল | ৭০ মিলিগ্রাম |
ব্রয়লার মুরগির ওজন ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই প্রায় দেড় কেজি থেকে দু কেজি হয়। সকল পুষ্টিতে ভরা সব স্তরের মানুষের অতি সুস্বাদু ও হজমযোগ্য সস্তা মূল্যের মাংস। পাশাপাশি এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির মাংসের উপকারিতা
১. ব্রয়লার মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। বর্তমানে এটি সাধারণ জনগনের প্রোটিন পূরণ করার প্রধান উৎস উঠেছে।
যা পেশীকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।
২.মুরগির মাংসে উচ্চ মাত্রায় ট্রাইফটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ফলে এক বাটি চিকেন স্যুপ স্বস্তি এনে দিতে পারে। বিষণ্নবোধ হলে কয়েকটি চিকেন উইংস খাওয়া যেতে পারে। যা মস্তিষ্কে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
৩. বয়স্কদের আর্থ্রাইটিস ও হাড় সংক্রান্ত অন্য রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। প্রতিদিন মুরগির মাংস খাবার তালিকায় রাখলে এর প্রোটিন হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করবে।
৪.অন্য খাবারগুলোর মতো মুরগির মাংসও চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। মুরগির মাংসে রেটিনল, আলফা ও বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন থাকে যার সবগুলোই ভিটামিন ‘এ’ তে পাওয়া যায়। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এগুলো জরুরি উপাদান।
৫. মুরগির মাংস ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া ফসফরাস কিডনি, লিভার ও স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ