মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকের পোস্ট। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের রান্নাঘরের অন্যতম একটি মশলা হলো মেথি। মেথিকে মসলা,খাবার ও পথ্য এই তিনটিই বলা হয়ে থাকে। স্বাদ তিতা ধরণের। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাএা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। মূলত এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়, এর বীজ রূপচর্চায় ও ইউনারী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথির গুণাগুণ :
মেথির পুষ্টিগুণ অনেক।এক টেবিল চামচ বা ১১.১ গ্রাম মেথি বীজে প্রায় ৩৫ক্যাালোরি, ৩ গ্রাম ফাইবার, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ৬গ্রাম কার্বস,১ গ্রাম ফ্যাট। পাশাপাশি এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।
মেথি খাওয়ার নিয়ম :
ভালো ফলাফল পেতে ৪ টি উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। ওজন কমানোর জন্য সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়া যায়। সালাদ এর সাথে খাওয়া যেতে পারে। শুকনো মেথির বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে মাংসে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও একে গ্রাইন্ড করে কারীর সাতে যোগ করতে পারেন ।

মেথির উপকারিতা :
**ওজন কমাতে প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে জন্ম নেয় মেথি। এগুলো চিবিয়ে গিলে খাওয়া যায় এবং পাকস্থলীর ফাঁকা স্থান এরা পূর্ণ করে। এতে ওজন কমানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। খুব বেশি নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সামান্য মেথি চিবিয়ে খান। এতেই স্পষ্ট বুঝবেন উপকার পাচ্ছেন। স্থূলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করতে পারেন। দুটি আলাদা গ্লাসে পানি নিয়ে প্রতিটিতে এক টেবিল চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। এই পানি পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
**জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্য লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি মেলে। আবার এতে রয়েছে মুসিলেজ নামের এক ধরনের যৌগ, যা গলার খুসখুসে ভাব দূর করে। নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়েও এর উপকারিতা রয়েছে। মেথিতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন, যা নারীদেহে প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করে। এ ছাড়া ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় মেথি।
** চুল পড়া রোধে স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয় মেথি। চুল পড়া রোধে বহুকাল ধরে মেথির কদর চলে আসছে। এটি খেতেও পারেন, বা বেটে মাথায় দিতে পারেন। বিস্ময়কর উপকারিতা মিলবে। মেথি বাটা সারা রাত নারিকেল তেলের মধ্যে চুবিয়ে রেখে সকালে চুলে মাখুন। ঘণ্টাখানেক পর গোসল করে ফেলুন।
** হজমে সহায়ক বুকে বা পেটের ওপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেই সঙ্গে বদহজমের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ সবই দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে বের করে দেয়। উপকার পেতে স্রেফ পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে খেলেই হবে। পানিটাও খেতে ভুলবেন না।
**রক্তে গ্লুকোজ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দেহে গ্লুকোজের মাত্রা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি। এর অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে। এতে দেহে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
** উজ্জ্বল ত্বকের জন্য রূপচর্চায়ও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। সারা দেহে বয়ে বেড়ানো নানা ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়। এ ছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সৃষ্টিতেও ওস্তাদ এগুলো। মেথি দেহের সব অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঝেঁটিয়ে বিদায় করে।
** খুশকি দূর করতে বিশেষ ধরনের চুলে প্রচুর খুশকির উত্পাত ঘটে। মাথার শুষ্ক ও মৃত ত্বক থেকে খুশকি হয়। গোটা রাত পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে তা বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এতে ইচ্ছে হলে দই মেশাতে পারেন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগান। মিনিট তিরিশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি চলে যাবে।
** সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ করতে জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির অবদানের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
মেথির অপকারিতা :
সব কিছুরই ক্ষতিকর দিক থাকে। এবার জেনে নেওয়া যাক মেথির অপকারী দিকগুলি কিরকম।
মুখে মেথির গুঁড়ো গেলে তেঁতো বোধ হয়। ফলে অনেকের বমি বমি ভাব লাগে বা মাথা ঘোরার ভাব বোধ হয়।
মেথির ব্যবহারে ব্লাড সুগারের পরিমাণ হঠাৎ কমে যেতে পারে।
মেথি দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার ফলে শরীর থেকে একটা দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় যা অস্বস্তিদায়ক।
কৌমারীন থাকার জন্য মেথির দানা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যাদের রক্ত পাতলা তাদের মেথি রোজ ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া বাঞ্চনীয়।
গর্ভবতী মহিলারা মেথির দানা ভেজানো জল দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে সময়ের আগেই শিশুর জন্ম দেওয়া এমনকি গর্ভপাতের মতন ঘটনাও ঘটতে পারে।