গর্ভকালীন সময় টা প্রতিটি মায়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসময় টা মায়ের জীবনে একটি অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে। এ সময় প্রত্যেক মহিলা অত্যন্ত সচেতন হয়ে যান তার খাদ্য তালিকা নিয়ে। সন্তানকে সঠিক ভাবে প্রতিপালন ও পুষ্টি প্রদান করতে প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের উচিত তখন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। গর্ভাবস্থায় মা এবং সন্তানের উপকারিতা জন্য গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় ড্রাই ফ্রুটস, বাদাম থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।
বাদামের পুষ্টিগুন
বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি।
গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখা উচিত। এতে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের বিভিন্ন রকম উপকার হয়ে থাকে। গর্ভকালীন বাদাম খাওয়ার ফলে যে যে উপকার গুলো হয় তা বর্ননা করা হলো:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গর্ভবতী মহিলা প্রতিদিন বাদাম সেবন করলে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তান বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। শরীরের মেটাবলিক রেইট বাড়ে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় নারীদের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এসময় প্রয়োজন অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। বাদাম প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের আর একটি কারণ হলো গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটে। তাই বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। বাদামে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেকটাই এই সমস্যার সমাধান করে থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বাদামে নানা খনিজ উপাদান রয়েছে। পটাশিয়াম এর মধ্যে অন্যতম। পটাশিয়াম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা রক্তচাপের মাত্রা স্থিতিশীল করতে এবং পেশির নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে।গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হলে তা হার্ট এবং কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে যা কিডনি রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই নিয়মিত বাদাম সেবন করলে এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে
বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। বাদাম গর্ভাবস্থায় মায়ের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং গর্ভস্থ সন্তানের হাড়ের বিকাশেও সাহায্য করে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় অনেকের ঠান্ডার সমস্যা লেগেই থাকে।জ্বরভাব ও হয়।প্রথম তিনমাস এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বাদাম খেলে শরীর ভিতর থেকে কিছুটা গরম থাকেবা এবং এর এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টি হাঁপানি এবং ঠান্ডা কাশি হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
জরায়ুর জন্য উপকারী
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার ফলে জরায়ুর পেশি শক্তিশালী হয় যা মসৃণভাবে প্রস্রাব করতে সাহায্য করে।
এছাড়া এটি প্রসব পরবর্তী কালীন রক্তপাতের সম্ভাবনা কমাতে কাজ করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কখন থেকে বাদাম খাওয়া শুরু করবেন?
গর্ভাবস্থায় প্রথম থেকেই চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারেন। যখনই আপনি জানতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী তখন থেকে আপনি বাদাম খাওয়া শুরু করতে পারেন।
সব ধরনের বাদাম ই এসময় খাওয়া যায়। চাইলে সব ধরনের বাদাম গুড়ো করেও খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। সপ্তাহে ২-৩ দিন এক মুঠো করে অর্থাৎ ৫০ গ্রামের মতো বাদাম খাওয়া যাবে। যেহেতু এসময় সব ধরনের বাদাম আপনি খেতে পারছেন তাই যদি পুরো মাসব্যাপী সব ধরনের বাদাম এক এক করে খেলে বাদামের সব ধরনের পুষ্টি আপনার বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারবে।
পরিমাণ বুঝে বাদাম খাবেন না হয় বেশি খেলে গ্যাস বা এসিডিটির সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় এবং করণীয়
গর্ভাবস্থায় কাজু বাদামের উপকারিতা
কাজু বাদাম এর এক আউন্সে আছে ৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৪.৫ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৩ গ্রাম ভালো ফ্যাট বা চর্বি।
কাজু বাদামে সংক্রমণ উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস রয়েছে যা এসময় যথেষ্ট শক্তি দিবে।
গর্ভবতী মহিলাদের ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য এর মতো সমস্যা দেখা দেয় যা এসময় খুব সাধারন।কাজুতে ফাইবার এর উপস্থিতি থাকার কারণে এসব সমস্যার সমাধান হয়।
কাজু বাদাম এ ফ্যাট থাকা স্বত্তেও তা খারাপ ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটেস্টেরোল, স্কাভালেন এবং টোকোফেরল আছে।
এতে ভরপুর ক্যালসিয়াম থাকায় তা শিশুর হাড় ও দাতের বিকাশে সহায়তা করে।কাজুবাদাম খেলে লিপিড প্রোফাইল ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কি কি – সম্পূর্ণ তালিকা, ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
কাজুতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে তা মাংসপেশি, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি এটি দাঁত মজবুত করতে, ক্যাভিটি করতে সাহায্য করে থাকে।
কাজুবাদামে ৯ মি.গ্রা. ভিটামিন থাকার কারণে এটি প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ এ সাহায্য করে থাকে।
এছাড়া আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় তা খাদ্য তালিকায় যোগ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা যাতে করে গর্ভের শিশুর বা মায়ের রক্তের ঘাটতি না দেখা দেয়।
কাজু বাদাম খেতে অনেক সুস্বাদু হওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত হারে কাজু বাদাম খাবেন না। এসময় ওজন অনেক বেড়ে যায়। কাজু বেশি খেলে এর বিরুপ প্রভাব আপনার ভ্রুনের ওপর পড়তে পারে। এটি বেশি খেলে ডায়াবেটিস লেভেলও বাড়তে পারে। এছাড়াও এটি অত্যাধিক খেলে ত্বকে ব্রণের উপদ্রব বাড়তে পারে। তাই অনেক বেশী সুস্বাদু লাগলেও এটি খুব নিয়ম করেই খাওয়া উচিত।
কাঠবাদাম কিভাবে খাবেন
অনেকেই বলে কাঠবাদাম এর উপরের যে বাদামী বর্ণের নরম চামড়া রয়েছে সেটি খাওয়া ঠিক নয়।তাই কাঠ বাদাম খেতে হলে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন। সকালে চামড়া নরম হয়ে যায়। তখন চামড়া ছিলে শুধুমাত্র ভিতরের সাদা অংশ টুকুই খাবেন।
বাদাম খাওয়ার কিছু সাবধানতা
বাদাম অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। বাদাম বেশি খেলে গ্যাসের সমস্যা, এলার্জি, ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি অনুভব হওয়া এবং দাঁত ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এবং এর মধ্যে যেকোনো প্রাকৃতিক শর্করা ও ক্যালরি বেশি থাকে তাই এটি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে বাদাম খাওয়া উচিত। বেশি বা কম খাবেন না। কোনো ডেজার্ট বা মিষ্টান্ন বানালে সেখানেও চাইলে বাদাম মিক্স করে খেতে পারেন। বাদাম অসম্ভব পুষ্টি গুনে ভরপুর। তাই গর্ভাবস্থায় কোনো ভাবেই বাদাম এড়িয়ে যাবেন না।