আপনি সাধারণত ঝাল ঝাল মজাদার কিছু রান্না করতে গোল মরিচ ব্যবহার করেন।কিন্তু আপনি জানেন কি?ছোট ছোট কালো গোল এই মসলা শুধু রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিই করে না পাশাপাশি এর ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। এছাড়া গোলমরিচকে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত মসলা হিসেবে মনে করা হয়।ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে গোলমরিচ চাষ হয়। প্রাচীনকাল থেকে গোলমরিচের গুঁড়া ইউরোপীয় দেশে খাদ্যে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি ঔষধি গুণাগুণের জন্যও বিশ্বখ্যাত।চলুন জেনে নিই গোলমরিচের উপকারিতা।
গোলমরিচ এর উপকারিতা
কফ,ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিরাময় করে।
আবহাওয়া বদলের সময় ও ঠান্ডায় সর্দি-কাশির সমস্যা খুবই সাধারণ। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
গোলমরিচকে দারুণ প্রদাহনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পেটে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে। ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে ভালো হজম হওয়া জরুরি।
পেটের গ্যাস হওয়া ঠেকাতে পারে গোলমরিচ।
ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোমর বা পাঁজরের ব্যথা সারাতে গোলমরিচ চূর্ণ গরম পানিসহ সকাল ও বিকালে একবার করে খেতে হবে।
গোলমরিচ সামান্য পানিসহ বেটে দাঁত ও মাড়িতে প্রলেপ দিলে ব্যাথা দূর হয়।
গোলমরিচে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এ মসলা।
আমরা বাঙ্গালিরা গোলমরিচ বেশিরভাগ সময়ে তরকারির সাথে খেয়ে থাকি তবে এটি নানান ভাবে খাওয়া যায়। আপনি গোলমচির খাওয়ার কিছু নিয়ম জেনে নিতে পারেনঃ
গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম
গোলমরিচের চাঃ পাত্রে এক কাপ পরিমাণ পানি নিয়ে তাতে সামান্য আদা বাটা যোগ করতে হবে। পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে পানিটুকু একটি কাপে ছেঁকে নিতে হবে। এবার তাতে ‘গ্রিন টি’র ‘ব্যাগ’ ডুবিয়ে দিতে হবে এবং মেশাতে হবে আধা চা-চামচ গোলমরিচ। তৈরি হয়ে গেল গোলমরিচের চা।
চিবিয়েঃ মসলার ঝাঁঝ সইতে পারলে গোলমরিচ সরাসরি চিবিয়েও খেতে পারেন। খালি পেটে দু-তিনটি গোলমরিচের দানা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন।
মধুর সঙ্গেঃ একটি পাত্রে এক কাপ পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার তাতে এক চা-চামচ মধু আর আধা চা-চামচ সদ্য পেষা গোলমরিচের গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সকালে পান করলে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান অপসারণে সাহায্য করবে এই পানীয়।
গোল মরিচের তেলঃ ওজন কমাতে গোলমরিচের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধের দোকান থেকে ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ গোলমরিচের তেল কিনতে হবে। এক গ্লাস পানিতে এই তেল এক ফোঁটা মিশিয়ে সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে পান করতে হবে।
সবজি ও ফলের শরবতেঃ আধা চামচ পরিমাণ গোলমরিচ এদের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে “খালি পেটে গোল মরিচ খেলে কি হয় ” এ বিষয়ের ওপর প্রকাশতি প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো,
খালি পেটে গোলমরিচ খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এসময় সরাসরি চিবিয়েও খেতে পারেন।কচি নিমপাতার সঙ্গে তিন চারটি গোলমরিচ সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গোল মরিচ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে থাকে এক কাপ হালকা গরম জলে লেবুর রস আর গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে টানা কদিন খেলে গ্যাস-এর সমস্যা কমে। কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়।
আপনার যদি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থাকে, আপনাকে মৃদু গরম জলের সঙ্গে গোলমরিচ খেতেই হবে। ফলে শরীরে ক্লান্তি জমতে পারে না। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি গোল মরিচের উপকারিতা ত্বকের জন্যেও নানা রকম ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
বার্ধক্যের ছাপ কমায়, ত্বকের রুক্ষভাব দূর করে এবং শ্বেতী দূর করে গোল মরিচ। গোল মরিচের উপকারিতা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও ত্বকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর উপকারিতা চুলের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে দেখা যায়। গোলমরিচ নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলে খুশকির সমস্যা রোধ করতে গোল মরিচ বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও গোল মরিচ দাঁতের উপকারেও আসে। দাঁত আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দাঁত কিছু কিছু টুথপেস্টে গোল মরিচ ব্যবহার করা হয় কারণ এটি দাঁতে ব্যাথা ও মুখের জন্যে খুব উপকারী। গোল মরিচের এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান দাঁত ও মুখের জন্যে বিশেষভাবে উপকারী।
মাড়ির সমস্যা হলে বা ফুলে গেলে এক চিমটি নুনের সাথে একটুখানি গোল মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে মাড়িতে হালকা করে মালিশ করুন। অবশ্যই ভাল ফল পাবেন। তবে এটি করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
সতর্কতাঃ যদিও গোলমরিচ অনেক উপকারী তবুও এটি পরিমাণ মতো খেতে হবে কারণ অতিরিক্ত কোনো কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।আপনি যদি গোলমরিচের পরিমাণটি নিয়ন্ত্রণে রাখেন তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভাল। তবে আপনি এটি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমনঃ প্রাকৃতিকভাবে গোল মরিচ গরম এটির অত্যাধিক গ্রহণ আপনার পেট জ্বালা করে। তবে চিন্তা করবেন না, কারণ এই পোড়া অস্থায়ী এবং কিছু সময়ের পরে নিজেই নিরাময় করে। গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময়কালে গোল মরিচ খাওয়া উচিৎ নয়।
আরো পড়ুনঃ