ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে। ডাব আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফল। ডাবের পানি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পানীয় বাংলাদেশের মানুষদের জন্য। এই পানীয় পান করেনা এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এই পানীয় এর প্রচলন অনেক বেশি থাকে। গরমের সময়ে ডাবের পানি হলো স্বস্তির অপর নাম।
গ্রামে ঘরে ঘরেই নারিকেল গাছ পাওয়া যায়। শহরেও বাড়ির বাহিরে বের হলেই ডাবের পানির সরবরাহ চোখে পড়ার মতো হয়ে থাকে। এই ডাবের পানির উপকারিতা অনেক বেশি। সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে নিয়মিত ডাবের পানি পানের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ।
ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড, অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান, এবং পটাশিয়াম। পটাশিয়াম থাকার কারণে বমি হলে আমাদের শরীর থেকে যে খনিজ উপাদান বের হয়ে যায় ডাব তার ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
একই কারণে বমি হলে, ডায়রিয়া বা আমাশয় হলেও ডাব বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ডাবের মধ্যে খনিজ উপাদান থাকার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সের মানুষ এই ডাবের পানি গ্রহণ করতে পারে।
ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। চলুন জেনে নেই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে :
ডাবের পানির উপকারিতা – coconut water benefits
• ত্বকের যত্নে ডাবের পানিঃ ডাবের পানি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে যা ত্বকের সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জল করতে সাহায্য করে। এছাড়া ডাবের পানি ব্রণের প্রকোপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডাবে উপস্থিত খনিজ উপাদান বিশেষ করে ক্যালসিয়াম আমাদের ত্বক, নখ এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।
• বিভিন্ন সংক্রমণ রোধে ডাবের পানিঃ ডাবের পানিতে বিদ্যামান অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের নানা সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে থাকে।
• ব্লাড পেশ্রার নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানিঃ বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং খনিজ পদার্থ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং শরীরে ইনফ্লামেশন হতে দেয় না।
যেসব ইনফ্লামেশন থেকে স্ট্রোক, হৃদরোগের এমনকি শরীরে অন্যান্য নানা রোগ হতে পারে সেসব রোগ নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানি ভূমিকা পালন করে। তাই যেসব পরিবারে ব্লাড প্রেসার জনিত সমস্যার ইতিহাস রয়েছে সেসব পরিবারের সদস্যদের ডাবের পানি নিয়মিত পান করা উচিৎ।
আরো পড়ুনঃ পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা, তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহার
• ফ্যাটি লিভার দূর করতে ডাবের পানিঃ লিভার থেকে ফ্যাট দূর করতে ডাবের পানি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে অর্থাৎ যাদের ফ্যাটি লিভার রয়েছে তারা নিয়ম করে ডাবের পানি সেবন করে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে দই ও তিসি বীজ এইভাবে খান, 15 দিনে ওজন কমানোর ডায়েট প্ল্যান
• ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানিঃ ডাবের পানি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য একটি আশীর্বাদ।
২০১২ সালে হওয়া জার্নাল ফুড এন্ড স্টাডিতে দেখা গিয়েছে ডাবের পানিতে বিদ্যমান অ্যামাইনো এসিড ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
এটি HbA1c লেভেল অর্থাৎ হিমোগ্লোবিন A1c হ্রাস করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ ডাবের পানি পান করার মাধ্যমে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানির উপকারিতাঃ ডাবের পানির উপস্থিতিতেই বেশ কিছু উপকারী এনজাইম উজ্জীবিত হয় যা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি শরীরে মেটাবলিক রেইট বাড়ায়। খাবার গ্রহণ এর সাথে সাথে তা হজম হতে শুরু করে যার ফলে শরীরে এক্সট্রা মেদ জমে থাকার সুযোগ পায়না। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়াও ডাবের পানি শরীরে লবণের মাত্রা ঠিক রাখে ফলে শরীরে ওয়াটার রেডিয়েশন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় না।
• হাড়ের গঠনে ডাবের পানিঃ আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি ডাবের পানিতে অনেক খনিজ উপাদান রয়েছে এই খনিজ উপাদান গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
• কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাবের পানিঃ নিয়মিত ডাবের পানি গ্রহণে শরীরে লিপিড প্রফাইল উন্নত হয় অর্থাৎ শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি শরীরে ট্রাই গ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
• অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে ডাবের পানিঃ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর কারণে আমাদের শরীরের ভিতরে নানা ক্ষত বা রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে। যার দরুন মানুষ অকালে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এমনকি অন্যান্য নানা রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
ডাবের পানি শরীরের এই ক্ষতিকারক অক্সিডেটিভ বায়োমার্কাস এর কার্যকারিতা কমিয়ে ইনফ্লেমেশন হ্রাস করে শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
• শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় ডাবের পানির উপকারিতাঃ ডাবের পানি দেহকোষ সতেজ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে। এবং শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন এর সরবরাহ বাড়ায়। কেউ যদি মনের অজান্তেও ডাবের পানি সেবন করে থাকেন তাহলেও তারা সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর ভারসাম্য রক্ষা করে শরীরে ইলেক্ট্রলাইসিস ব্যালেন্স আনতে পারেন। শরীরের পানির ঘাটতি দূর করে এই ডাবের পানি।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
গর্ভবতী মা এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ডাবের পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একে সুপারফুড ও বলা হয়ে থাকে।
ডাবের লিউরিক এসিড গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ এর সঞ্চালন বাড়ায়। ডাবের পানি গর্ভবতী মায়ের জয়েন্ট এর ব্যাথা কমায়। এবং এতে বিদ্যমান ভিটামিন-ডি মায়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান।
সুস্থ একটি বাচ্চা জন্মদান এবং গর্ভকালীন নানা জটিলতা এড়াতে ডাবের পানির ভূমিকা অপরিসীম। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রলাইটিক এনার্জির প্রয়োজন হয়। ডাবের পানিতে থাকা খনিজ উপাদান শরীরে ইলেক্ট্রলাইটিক ব্যালেন্স করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। ডাবের পানি আঁশযুক্ত হওয়ায় এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। অনেকের এই সময় ওজন বৃদ্ধি এবং ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। ডাবের পানি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত একটি করে ডাবের পানি পান করতে পারেন।
কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অত্যাধিক ডাবের পানি পান করা উচিত নয়। এমনকি যদি গর্ভাবস্থায় কারো ডায়বেটিস থাকে বা আগে থেকেই আপনি ডায়বেটিক রোগী হয়ে থাকেন তাহলে ডাবের পানি পান এর পূর্বে ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহণ করে নিন।
সবুজ এবং কচি ডাব সিলেক্ট করুন এবং ডাবের পানি ফ্রেশ থাকতেই পান করার অভ্যাস করুন।বাসি ডাবের পানি বা ফ্রিজে রেখে ডাবের পানি পান করা উচিৎ নয়। গর্ভাবস্থায় সাধারণ পানিই শরীরের পানির প্রধান সোর্স হওয়া উচিৎ। কোনো ভাবেই ডাবের পানিকে সাধারণ পানির পরিপূরক মনে করা যাবেনা।
ডাবের পানি কখন খাবেন, কারা খাবেন?
অনেকের ধারণা ডাব ডায়বেটিস এর রোগীরা খেতে পারবেন না। কিন্তু ডাবে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল না থাকায় ডায়বেটিস, হার্ট এর রোগীরা ও সহজেই ডাবের পানি পান করতে পারবেন।
অপরপক্ষে, যারা কিডনি রোগী বা যাদের অনেকদিন ধরেই কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে তারা ডাবের পানি গ্রহণ করতে পারবেন না। উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকার কারণে কিডনির নেফ্রাইটিস এর উপরে এই পটাশিয়াম একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে যার ফলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ সহজে নির্গত হতে পারেনা। কিন্তু যাদের কিডনির সমস্যা নেই তারা যদি নিয়মিত ডাবের পানি গ্রহণ করেন তাহলে কিডনি স্টোন হবার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
ডাবের পানির উপকারিতা অপরিসীম। এবং আমাদের দেশে এর উৎপাদন ও অনেক বেশি। তাই এর উপকারী দিকগুলো জেনে নিয়মিত সকলেরই ডাবের পানি সেবনের অভ্যাস করা উচিৎ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য।
আরো পড়ুনঃ