দই অনেক সুস্বাদু একটি খাবার। দুগ্ধজাতীয় এই খাবারটি প্রায় সকলেরই পছন্দের। দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। আজকের এই পোস্টে আমরা টক দই খাওয়ার উপকারিতা, দই খাওয়ার সঠিক নিয়ম, টক দই কেন খাবেন, এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
দই খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। সুস্বাদু এই খাবারটি যেমন মুখরোচক, ঠিক তেমনি শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দই খেলে আমাদের দেহের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। আমরা যদি খাদ্যতালিকায় দুগ্ধজাত এ উপাদানটি নিয়মিত রাখি, তবে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ভোগ করতে পারবো। দই স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য উভয়ের জন্য অনেক কার্যকরী। যেমন : হাড় মজবুত করে, হজমে সহযোগিতা করে, রক্তচাপ কমায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও, আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। এগুলো আমরা ধাপে ধাপে বিস্তারিত জানবো।
দইয়ে রয়েছে দুধের মত পুষ্টিগুণ। দুধের বিকল্প হিসেবে আমরা দই খেতে পারি। তো চলুন, দইয়ের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
Content Highlights
দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
দই আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। দুধ খেলে যেমন দেহের প্রায় সকল চাহিদা পূর্ণ হয়, ঠিক তেমনি দই খেলে দেহের সকল চাহিদা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়। দইয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যেগুলো সরাসরি দেহে প্রভাব ফেলে। এতে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ল্যাকটোজ এবং অন্যান্য উপাদান। নিচে দেয়া টেবিল থেকে দইয়ের মাঝে বিদ্যমান সকল উপাদান এর পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
পুষ্টি উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রাম |
ক্যালোরি | 100-150 |
চর্বি | 2 গ্রাম |
চিনি | 20 গ্রাম |
প্রোটিন | 8-9 গ্রাম |
ভিটামিন ডি | 20 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 20 গ্রাম |
দইয়ে যেসব উপাদান রয়েছে, সেগুলো আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে পরিমিত পরিমাণে দই খান, তবে সারাদিন দেহ ঠাণ্ডা থাকবে, বিভিন্ন উপাদান এর চাহিদা পূরণ হবে। এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কেউ যদি ওজন কমাতে চায়, তবে অবশ্যই তাকে দই খেতে হবে। অনেক ডাক্তার ওজন কমানোর জন্য দই খেতে বলেন।
অনেকের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। দইয়ে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’। এটি আমাদের দেহের সকল হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড় মজবুত করতে সক্ষম। ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং ভিটামিন ‘ডি’ দেহের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। দুধের পরেই দইকে একটি সুষম খাদ্য বলা হয়ে থাকে।
অনেকের খাবার হজম হতে চায় না। আপনি যদি সকালে টক দই খান, তবে এটি আপনাকে হজম করতে সাহায্য করবে। দই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এটিও একটি দই খাওয়ার উপকারিতা। দইয়ে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের দেহের ক্ষতি করে না। বরং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
রাতে টক দই খেলে কি হয়?
হজমে সমস্যা থাকলে রাত্রে দই না খাওয়াই উত্তম। রাতে টক দই খেলে চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। এতে করে হজমের সমস্যা হবে না। তবে, রাতে দই না খাওয়াই উত্তম। কারণ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সন্ধ্যার পর থেকে দই খেলে গলায় মিউকাস জমা হতে থাকে। রাতে দই খেলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। ঠাণ্ডা লাগলে, জ্বর,সর্দি সহ বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। ঠাণ্ডা লাগা ছাড়া, তেমন কোনো সমস্যা নেই। তাই, আপনি ইচ্ছে করলে রাতেও দই খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার উপকারিতা
অনেকের মনেই জল্পনা-কল্পনা থাকে যে, গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে কি না। গর্ভাবস্থায় দই খেলে মা এবং শিশুর কোনো ক্ষতি হবে কি না। দই যেহেতু দুধের বিকল্প একটি খাবার, তাই এটি আমাদের দেহের জন্য তেমন কোনো ক্ষতি করে না। নবজাতক শিশু কিংবা গর্ভাবস্থায় যদি একজন মা দই খায়, তবে তার এবং শিশুর যেসব বাড়তি চাহিদা রয়েছে, সেসব চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। মা এবং শিশুর শারীরিক সুস্থতায় দই খুবই উপকারী একটি খাদ্য। দই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি বাড়ায়। ফলে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার কোনো ক্ষতিকর দিক নেই, বরং অনেক উপকারিতা রয়েছে। দই খেলে যেহেতু রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তাই রোগ হওয়ার পর প্রতিকার করার থেকে প্রতিরোধ করাই উত্তম।
টক দই দিয়ে কি কি খাওয়া যায়?
যেকোনো খাবারের সাথে টক দই মিশিয়ে খেতে পারেন। ভারী কোনো খাবার খাওয়ার পর টক দই খেতে পারেন। এতে করে হজমে সহযোগিতা হবে। বিভিন্ন ধরণের সালাদ, যেমন : গাজর, শশা, টমেটোর সাথে বিট লবণ মিশিয়ে, সঙ্গে টক দই দিয়ে খেতে পারেন। বোরহানি হিসেবে টক দইয়ের সঙ্গে বিট লবন, পুদিনা বাটা, গোল মরিচ গুঁড়া, ইত্যাদি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। বোরহানি বেশ জনপ্রিয় একটি পানীয়। বিভিন্ন তরকারি রান্না করার সময় দই ব্যবহার করা হয়। এতে করে তরকারির পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ বেড়ে যায়।
টক দই খাওয়ার নিয়ম
টক দই খেতে হলে আমাদের নিয়ম মেনেই খাওয়া উচিত। কারণ, নিয়ম না মেনে কোনো কাজ করলে সে কাজ থেকে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। টক দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। তাই, সঠিক নিয়ম মেনে টক দই খেতে হবে। টক দই মূলত সকাল কিংবা দুপুরে খাওয়ার পর খেতে হয়। এতে করে সকল পুষ্টিগুণ আমাদের দেহে কার্যকরী হয়, হজমে সহায়তা করা হয়। আপনি যখনই টক দই খান না কেনো, ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রামের বেশি খাবেন না। কোনো কিছু অতিরিক্ত খাওয়া কখনই দেহের জন্য উপকারী নয়।
দই অনেক উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। তাই দই খেতে হবে সুষম পরিমাণে। অতিরিক্ত পরিমাণে দই খেলে হিতে বিপরিত হবে। দই দিয়ে শরবত কিংবা বোরহানি বানিয়ে খেতে পারেন। উপরে আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি, আপনি কোন কোন খাবারের সাথে দই মিশিয়ে খেতে পারবেন। তবে, শুধু দই খাওয়াই উত্তম। এতে স্বাদ এবং সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
দই খাওয়ার অপকারিতা
দই এর অপকারিতা এর থেকে উপকারিতা অনেক বেশি। অপকারিতা বলতে, তেমন বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না দই খেলে। তবে, আপনি যদি বেশি পরিমাণে দই খান, তখন সেটি দেহে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যাদের বাতের ব্যাথা আছে, তাদের দই না খাওয়াই উত্তম। কারণ, দই খেলে দেহের প্রতিটি জয়েন্ট এ ব্যাথা বেড়ে যায়। তাই, আপনি যদি বাতের ব্যাথা নিয়ে দই খেতে চান, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ডায়াবেটিকস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই দই খাওয়া উচিত। কারণ, দইয়ে মিষ্টির পরিমাণ রয়েছে অনেক। এটি ডায়াবেটিকস এর জন্য ক্ষতিকারক। তাই, আপনি যদি একজন ডায়াবেটিকস হয়ে থাকেন, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। টক দইয়ে তেমন সমস্যা নেই। তবে, মিষ্টি দই এর ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি। মিষ্টি দই অতিরিক্ত না খাওয়াই উত্তম।
অতিরিক্ত পরিমাণে দই না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে দই খেলে আপনার শরীরের বিভিন্ন উপাদানের কমতি থাকলে এগুলো পূরণে দই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। এগুলো তো ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।
সাধারণত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা, কখন দই খেতে হয়, দই এর পুষ্টিগুণ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিচে পেয়ে যাবেন।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা কি?
টক দই খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। টক দই হাড় মজবুত করে, হজমে সহযোগিতা করে, রক্তচাপ কমায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত সুষম পরিমাণে টক দই আমাদের দেহের উন্নতি সাধন করতে সক্ষম।
কোন সময়ে দই খাওয়া ভালো?
সকালে কিংবা দুপুরে দই খাওয়া উত্তম। এতে করে দইয়ে থাকা উপাদান আমাদের দেহে সঠিকভাবে কার্যকরী হয়। রাতে দই খেলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে, তাই দিনে দই খাওয়া উচিত। দুপুরের খাবারের পর দই খেলে এটি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে।
দই খাওয়ার অসুবিধাগুলো কি কি?
দই খাওয়ার উপকারিতা সবথেকে বেশি। অসুবিধা হচ্ছে, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ঠাণ্ডা লেগে বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। যেমন : আর্থ্রাইটিস, গলায় টনসিলের মতো সমস্যা হতে পারে।
Read More: টক দই দিয়ে ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৫টি ফেসপ্যাক