স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাদাম। বাদামে রয়েছে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাংগানিজসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান।বাদামের পুষ্টিগুণ এবং বাদামের উপকারিতার দিক থেকে দেখতে গেলে বাদামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
বাদামের প্রকারভেদ (Types of nuts)
বাদাম অনেক রকমের হয়ে থাকলেও সাধারণত বাদাম চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। নীচে বাদামের প্রকারভেদগুলি দেওয়া হল ঃ
★কাঠ বাদামঃ কাঠ বাদামকে আমন্ড বাদাম বলা হয়। এই বাদাম পৃথিবীতে ভালো জনপ্রিয়। গোলাকার দেখতে এই বাদামটি রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে পাশাপাশি হজমের শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
★চীনা বাদামঃ চীনা বাদাম এ কটু পুষ্টিকর বাদাম। এই বাদামটি অন্যান্য বাদামের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। কারণ এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে চীনা বাদাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি। এছাড়া ত্বক এবং চুলের জন্যও উপকার। এতে ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৫৮ ক্যালরি রয়েছে।
★কাজু বাদামঃ কাজু বাদাম আমরা বিভিন্ন ধরণের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও এই বাদামটি স্বাদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এবং বিভিন্ন ধরণের রোগের জন্য এই বাদাম উপকারি। হার্টের রোগীদের জন্য এই বাদাম খাওয়া ভালো। নিয়মিত এক মুঠো কাজু বাদাম খেলে শরীর যেমন ফিট রাখা যায় ঠিক তেমনি হয়তো এটি আপনাকে ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে রাখতে পারে।
★পেস্তা বাদামঃ-পেস্তা একটি সুস্বাদু বাদাম। এটি আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর। পেস্তা বাদামে ৫.৮ গ্রাম প্রোটিন, ১৫৬ ক্যালরি, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২.৪ গ্রাম ফ্যট সমৃদ্ধ। যা আমদের শরীরের বিভিন্ন অভাব পূরণ করে। এটি রক্তকে শুদ্ধ করে। নিয়মিত পেস্তা বাদাম খেলে রোগমুক্ত জীবন পাওয়া সম্ভব।
বাদামের উপকারিতা
***হাড়ের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই তো প্রতিদিন এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করলে জীবনে কোনও দিন কোনও হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
***ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা কগনিটিভ পাওয়া, সহজ কথায় বললে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
***ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে: বাদামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
***পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়: মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে এদেশে ঝাঁকিয়ে বাসা এই প্রকৃতিক উপাদনটির শরীরে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একাধিক ক্রনিক রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানগুলি সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।
***রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: এটি হল এমন একটি উপাদান যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
***খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখতে পাবেন কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পয়েছে। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি। শরীরে যাতে কোনও ভাবেই বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজটি করবেন কীভাবে? খুব সহজ! প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটান, তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান শরীরে অন্দরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
***ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে: শুধু ডায়াবেটিস নয়, বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর বেশি দিন যদি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দেহে যাতে কোনও সময় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
***ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।
***রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিকদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় থাকতে বাদামকে কাজে লাগাতে শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে।
*** কোষেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যাতে কোনও ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পরে না।
**হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জলে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে দেহের অন্দরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়। এবার বুঝেছেন তো খাদ্যরসিক বাঙালি, আমাদের কেন প্রতিদিন একমুঠো করে বাদাম খাওয়া উচিত!
কাঠ বাদামের উপকারিতা (Benefits of nuts)
#ক্লান্তি দূর করেঃ
বাদাম শক্তির ভালো উৎস। বাদাম খাওয়ার ফলে দেহে এনার্জি দেয়। নিয়মিত এই বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
#মস্তিষ্কে শক্তিশালী করেঃকাজু বাদামে এক প্রকার তেল থাকে যা ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। এর জন্য এটি একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি, যা মেমরি শক্তি বৃদ্ধি করে।
# রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
বাদামে পটাসিয়ামের পরিমাণ উচ্চ মাত্রায় থাকে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে দেহে রক্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উপকারি।
#কলেস্টেরল কমায়ঃনিয়মিত বাদাম খাওয়ার দ্বারা কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাদামে উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী হওয়ার কারণে দ্রুত হজমের শক্তি বাড়ায়। তাই কলেস্টেরলের সমস্যা থেকে ভুগছেন এমন মানুষজনকে নিয়মিত বাদাম খেতে হবে।
#স্বাস্থ্যকর হৃদয়ঃ
বাদামে এক প্রকার অ্যাসিড পাওয়া যায় যা হার্টের পক্ষে খুব ভালো। এছাড়াও দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, তামা এবং লোহার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের সহায়তা করে।
#মেজাজ ভাল রাখেঃ
আপনি যদি দিনে একবার অন্তত বাদাম খান তাহলে আপনাকে ক্যালরির জন্য অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে না। বাদাম খাদ্য মেজাজ হিসাবে পরিচিত। তাই মনের বিষণ্নতা দূর করে মন রিফ্রেশ করে তোলে।
# ক্যান্সার থেকে বাঁচায়ঃকাজু প্রুনোথোসিনিডিন ফ্লাভোনিওাইডের একটি প্রকার যা ক্যান্সার কোষগুলিকে ক্রমবর্ধমান থেকে আটকায়। কাজু বাদাম নিয়মিত ক্যান্সারের কিছু রূপ থেকে রক্ষা রাখে।
বাদামের অপকারিতা
**ওজন বাড়াতে পারেঃ
বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা নিবন্ধে বাদামের উপকারিতায় আমরা আগেই জেনেছি, এতে উচ্চ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। তাই মাত্রাতিরিক্ত বাদাম খেলে আপনি কিন্তু মোটা হয়ে যেতে পারেন। কাঠ বাদাম ওজন কমায় পাশাপাশি বেশি খেলে ওজন বাড়াতেও পারে। এছাড়াও অন্যান্য বাদাম রয়েছে যা সঠিক মাত্রায় না খেলে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় বাদাম যোগ করলে চার ভাগের এক ভাগ রাখুন।
**গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ
আপনার কাজু বাদাম পছন্দ আর আপনি রোজ প্রয়োজনের থেকে ( ২০০ গ্রাম বা তার বেশি ) খেয়ে ফেলেন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। কারণ এটি বাদামে একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
**অ্যালার্জির সমস্যাঃ
বাদামে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে তবু বাদাম খাওয়ার সময় সঠিক পদ্ধতিতে না ব্যবহার করলে কিছু সাইড এফেক্ট দেখা যায়। তার মধ্যে একটি অ্যালার্জির সমস্যা। কারণ বাদামে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই বাদাম খাওয়ার আগে সচেতন হন কোন বাদামে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে।
** ঔষধের কাজকর্মে বাধাঃ
বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ঔষধের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে রোগ নির্মূল হতে দেরি হয়।
আপনারা বাদামের উপকারিতও অপকারিতা গুলি জেনে গেলেন। এবার সঠিক পরিমাণে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন।