চুল ও মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে ভিটামিন ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র চুল এবং ত্বককে সুন্দর করে না বরং শরীরের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রদান করে। ভিটামিন ই জাতীয় খাবার গ্রহনের পাশাপাশি কারো যদি মনে হয় তার শরীর বা ত্বকে ভিটামিন জনিত কোনো ঘাটতি হচ্ছে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বক বা চুলের সমস্যায় ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আজকের পোস্টে আমরা ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা
এখানে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। জেনে নিন ভিটামিন ই ক্যাপসুলের উপকারিতা সমূহঃ
১) ভিটামিন ই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উপকারি: ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার চুলকে করে লম্বা, ঘন, মজবুত এবং চকচকে। ২-৪ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ১ চা চামচ ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করুন। এটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান, এটি আপনার শুষ্ক চুলকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং পাতলা ও বিভক্ত প্রান্ত থেকে মুক্তি দিবে।
২) সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ব্যবহার: সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো চর্মরোগের সমস্যায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে ভিটামিন ই থেকে তৈরি তেল। এই তেল আপনার আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। প্রয়োজন হলে রাতে এই তেল লাগিয়ে আপনি ঘুমাতেও পারবেন।
৩) ফাটা ঠোঁটের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার: এটি শুষ্ক এবং ফাটা ঠোঁটকে নরম করে তোলে। আধা চা চামচ লেবুর রস নিন।এবং এতে ২-৩ ফোঁটা ভিটামিন ই তেল যোগ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে এটি আপনার ঠোঁটে লাগান। এছাড়াও পেট্রোলিয়াম জেলিতে ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে শুকনো ও ফাটা ঠোঁটে লাগাতে পারেন। এতে আপনার ঠোঁট গোলাপি রঙের হয়ে উঠবে।
৪) নখ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল: সারাদিনের বিভিন্ন কাজে নখের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। যেমন: কাপড় ধোয়া বা রান্না করা, থালা-বাসন ধোয়া। অনেক সময় নিয়মিত এসব কাজের ফলে নখ নরম হয়ে যায়, ভেঙে যায়, খোসা ছাড়ে এবং হলুদ হয়ে যায়। ভিটামিন ই তেল দিয়ে নখের কিউটিকল এবং নখের চারপাশের ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার নখ আবারো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
৫) ভিটামিন ই ক্যাপসুল রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে: ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ক্ষত এবং দাগ সারাতে ভিটামিন ই যুক্ত ক্রিমও প্রয়োগ করা হয়। অনেক বিউটি ক্রিমে ভিটামিন ই ব্যবহার করা হয়। ত্বক রোদে পুড়ে গেলে সে জায়গায় ভিটামিন ই তেল লাগালে পোড়াভাব কমে যায়।
৬) নাইট ক্রিম হিসাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: ভিটামিন ই এর ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি রাতে লাগালে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল নাইট ক্রিম হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি প্রতিদিন যে নাইট ক্রিম লাগান তাতে ৩-৪ ফোঁটা ভিটামিন ই তেল যোগ করুন। ক্রিম ব্যবহার এর পূর্বে ভালো ভাবে প্রথমে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর ক্রিম টি ব্যবহার করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
৭) অ্যান্টি রিঙ্কেল ক্রিম হিসেবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: আপনি যদি আপনার ত্বকের বলিরেখা এবং সূক্ষ্ম রেখা বা ফাইন লাইন দূর করতে চান, তাহলে ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করুন। এটি অ্যান্টি-এজিং ক্রিম হিসেবে দারুণ কার্যকরী। ভিটামিন ই তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল দিয়ে আপনার ত্বক ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক থেকে বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করবে।
৮) কালো কনুই পরিষ্কার করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: অনেকের কনুই কালো হয়ে যায় যা হাতের রঙের থেকে আলাদা দেখায়। এ জন্য এক টুকরো লেবু কনুইতে ঘষে নিন। এর পরে, ভিটামিন ই তেল, লোবান তেল, লেবুর রস, শিয়া মাখন দিয়ে তৈরি একটি মাস্ক লাগান। এটি কনুই পরিষ্কার করবে এবং কালোভাব দূর করবে।
৯) ডার্ক সার্কেল কমাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: ভিটামিন ই চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রতিকারের জন্য, আধা চা চামচ বাদাম তেল নিন। এতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করুনল। এই মিশ্রণটি রাতে ডার্ক সার্কেলে লাগান। সেরা ফলাফলের জন্য এই পেস্টটি সারারাত রেখে দিন। এটি মুখের কালো দাগও দূর করে ।
১০) ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফ্রেকলস বা মলিনতা দূর করে: স্কিন টোনে অমসৃণতা মানে ফ্রেকলস বা মলিনতা। এই সমস্যা সমাধান করতে ভিটামিন ই তেল সাহায্য করতে পারে। এর জন্য ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে যেখানে দাগ আছে সেখানে লাগান। আপনি এটি পুরো রাত রেখেও দিতে পারেন। এক মাস ব্যবহার করার পর আপনি ইতিবাচক ফলাফল দেখতে পাবেন।
১১) ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ই যুক্ত তেল, ক্রিম বা ক্যাপসুল গ্রহণ করলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে ।
১২) ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলকানি প্রশমিত করে: ভিটামিন ই এটোপিক ডার্মাটাইটিসের সাথে যুক্ত শুষ্কতা, চুলকানি, একজিমা কমাতে পারে। মৌখিক ভিটামিন ই সম্পূরকগুলি বা ভিটামিন ই ক্যাপসুল সমূহ একজিমার সমস্যা দূর করতে পারে।
১৩) ভিটামিন ই ক্যাপসুল ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর: ভিটামিন ই ক্যাপসুল ক্ষত নিরাময় করে। শরীরে কোথাও ক্ষত হলে তাতে ভিটামিন ই তেল লাগান। এটি ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।
১৪) ভিটামিন ই ক্যাপসুল বার্ধক্যের হার কমিয়ে দেয়: ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা কমায়। যার কারণে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়েনা। এমনকি এটি শরীর এবং ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ হ্রাস করে। এটি প্রোটিন ও কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায় যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।
১৫) ভিটামিন ই ক্যাপসুল স্ট্রেচ মার্ক কমাতে সাহায্য করে: স্ট্রেচ মার্ক দেখতে খুব অদ্ভুত যা কেউ পছন্দ করে না। এটি ত্বকের চামড়া অত্যধিক প্রসারিত হওয়ার কারণে দৃশ্যমান হয়। এটি গর্ভাবস্থা এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে। স্ট্রেচ মার্কগুলিতে ভিটামিন ই তেল লাগালে মার্কগুলো হালকা হতে শুরু করবে।নিয়মিত ব্যবহারে এগুলো সম্পূর্ণরুপে দূর করা সম্ভব।
১৬) ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি ক্লিনজিং এজেন্ট: এটি ত্বকের ময়লা এবং ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস পরিষ্কার করে। এটি ত্বকে তেলের ভারসাম্যও বজায় রাখে। একটি পরিষ্কার তুলা নিন, এতে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই তেল দিন এবং আপনার মুখে আলতো করে ঘষুন। রাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এর পর এটি ব্যবহার করতে পারেন।
১৭) পা ফাটা দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: গোড়ালি ফাটা সমস্যা দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খুবই সহায়ক। ভ্যাসলিনের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন। ফাটা গোড়ালিতে লাগান। এতে আপনার পায়ের গোড়ালি খুব নরম হয়ে যাবে।
১৮) ঠান্ডার দিনে শরীরের ঘা প্রশমিত করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল: অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের কারণে ঠান্ডার সময় শরীরে বিভিন্ন অংশে ঘা হয়। কখনো কখনো এটি একটি বেদনাদায়ক রূপ নেয়, সরাসরি ক্ষতস্থানে ভিটামিন ই ক্যাপসুল লাগান। এটি আপনাকে স্বস্তি দেবয়ে, ঠান্ডাজনিত ঘা থেকেও রক্ষা করবে।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই জাতীয় খাবার তালিকা এবং এর উপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর কিছু অপকারিতা :
ভিটামিন ই এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। আপনি যদি ভিটামিন ই ব্যবহার বা খাওয়ার এর পর শরীরে এলার্জির কোনো লক্ষণ দেখেন তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারকে দেখান।
- ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা
- ক্ষত বা রক্তপাত
- ক্লান্তি
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা
- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা
- হালকা ফুসকুড়ি
- দৃষ্টি পরিবর্তন
- বমি বমি ভাব
শেষকথা:
আপনার চুল ও মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে ভিটামিন ই ক্যাপসুলও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ইতিমধ্যে জানেন কিভাবে মুখে ভিটামিন ই ক্যাপসুল লাগাতে হয়। এই ভিটামিন শরীরের সৌন্দর্য এবং শরীরের স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ