রুপচর্চায় “কলার খোসা”
ত্বকের যত্নে কলার গুণ সম্পর্কে আমার সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু কলার খোসা যে ত্বকের যত্নে কত বড় ভূমিকা পালন করে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। সাধারণত আমারা সবাই কলা খাওয়ার পরে খোসা টা ফেলে দেই। খোসা ফেলে না দিয়ে এর সঠিক ব্যবহারে আমরা পেতে পারি একটি উজ্জ্বল ত্বক। এই ফেলে দেয়া জিনিসটি ই হতে পারে আমাদের ত্বক এর অনেক সমস্যার সমাধান।
তাহলে আসুন কলার খোসার উপকারিতা ও এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই—
১. ব্রণ মুক্ত ত্বক পেতেঃ আমরা প্রায় সবাই কম বেশি ব্রণ এর সমস্যায় ভূগে থাকি। ব্রণ দূর করতে কলার খোসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি কলার খোসা পরিষ্কার করে তা ব্লেন্ডার এ ব্লেন্ড করে এক চামচ বেকিং পাউডার মিক্স করে মিশ্রণ টি তৈরি করতে হবে। তারপর তা মুখে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে ৫ মিনিট । ৫ মিনিট পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো হাতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ দিন আমরা এই ফেস প্যাক টি ব্যবহার করতে পারি।
কলার খোসার এই ফ্যাস প্যাক টি নিয়মিত ব্যবহারে আমরা পেতে পারি ব্রণ মুক্ত একটি ত্বক।
Note :ব্রণ দূর করার উপায় জানতে আমাদের এই প্রতিবেদনটি পড়ুন
২. ত্বক কে ময়েশ্চারাইজ রাখতে ঃ শুষ্ক ত্বকের জন্য কলার খোসা আশীর্বাদ স্বরূপ। কলার খোসায় থাকা এন্টি – অক্সিডন্ট ও নিউট্রিয়েন্ট সমূহ ত্বকে ম্যাজিকের মক কাজ করে। ত্বক কে ময়েশ্চারাইজ করে, ত্বক কে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
৩. উজ্জল ত্বক পেতেঃ কলার খোসা কেটে, ভালোভাবে পরিষ্কার করে তা আলতো হাতে মুখে ঘষে নিতে হবে। এই ভাবে রেখে দিতে হবে ১৫-২০ মিনিট। তারপর হালকা গরম পানি বা নরমাল পানি দিয়ে ফেস ওয়াশ করে নিতে হবে।
এই ভাবে নিয়মিত ব্যবহারে আমাদের ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
৪. দাগ মুক্ত ত্বক পেতেঃ ব্রণ হয়তো চলে যায় সহজেই। কিন্তু রেখে যায় দাগ। এই ব্রণ এর দাগ দূর করতে আমরা ব্যয় করি অনেক টাকা এবং অনেক সময়। কিন্তু কলার খোসার নিয়মিত ব্যবহারে আমরা পেতে পারি একটি দাগ মুক্ত উজ্জ্বল ত্বক।
কলার খোসা ছোট ছোট করে কেটে মুখের যেই স্থানে ব্রণ এর দাগ আছে এই জায়গায় ঘষে নিতে হবে। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য রাত এ ঘষে ঘুমিয়ে যেতে হবে, পরের দিন সকালে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে আস্তে আস্তে ব্রণ এর দাগ চলে যাবে।
৫. চোখের ফোলা ভাব দূর করতে ঃ পরিষ্কার কলার খোসা সমান দুটি অংশে কেটে নিতে হবে। তারপর তা চোখের উপর রেখে দিতে হবে ২০-২৫ মিনিট। এই ভাবে ব্যবহারে চোখের ফোলা ভাব বা ফানেস অনেক টাই কমে আসে।
৬. বলিরেখা বা রিঙ্কেল কমাতে ঃ আমাদের অনেকের ই মুখের চামড়া, চোখের পাশের চামড় কুচকে যায়। যেটাকে আমরা বলি রিঙ্কেল বা বলিরেখা। এই চামড়া কুচকে যাওয়ার কারণে চেহারায় একটি বয়ষ্ক ভাব চলে আসে যা মুখের সৌন্দযর্্য রক্ষায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা দূর করতেও কলার খোসা ভালো ভূমিকা রাখে।
এক্ষেত্রে কলার খোসা আলতো হাতে ত্বকে ঘোসে নিতে হবে। এই ভাবে রেখে দিতে হবে ৩০ মিনিট। ৩০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
নিয়মিত ব্যবহারে আমরা পেতে পারি একটি মসৃন ত্বক।
৭.আচিল কমাতেঃ যাদের ঘন ঘন আচিল হয় তারাও কলার খোসা থেকে উপকার পাবে।আচিলের উপর কলার খোসার সাদা অংশ ঘষুন। এক টুকরো কলার খোসা আচিলের উপর চাপা দিয়ে গজ ব্যান্ডজ দিয়ে মুড়ে দিন। কিছুদিন নিয়মিত করলেই চিরতরে বিদায় নেবে আচিল।
৭. পোকার বিষ দমনে ঃ মশা বা পোকা ত্বকে কামড় দিলে জলে অথবা চুলকায়।এই যন্ত্রনাদায়ক অনুভূতি থেকে তাতক্ষণিক রক্ষা পেতে চাইলে চাইলে কলার খোসার ভেতরের সাদা আক্রান্ত স্থানে ঘষুন। মুহুর্তেই মশা ও পোকামাকড় এর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে।
৮. কলার খোসার পুষ্টিগুন ঃ কলার খোসার মধ্যে ভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুন বিদ্যমান। কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বি-৬, বি-২, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট ও পটাশিয়ামের মত উপাদান রয়েছে যা মেটপলিজম বৃদ্ধিেত সহায়তা করে।
কলার খোসার উপকারিতা আসলেই অবাক করার মত। যা নিয়মিত ব্যবহারে আমরা মুক্তি পেতে পারি হাজারো সমস্যা থেকে।
তাই আজ থেকে কলা খাওয়ার পরে আর একটিও কলার খোসা না ফেলে প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক উপায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা পেতে পারি ব্রণ মুক্ত, দাগ মুক্ত একটি উজ্জ্বল ত্বক।
লিখেছেন : ফারজানা আন্নি