হলুদ চায়ের উপকারিতা ও বানানোর নিয়ম

হলুদের গুঁড়া দিয়ে তৈরি চায়ের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে সবারই জানা উচিৎ। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এক কাপ ফুটানো পানিতে অল্প পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো, মধু এবং আদা মিশিয়ে খেলে শরীর ভিটামিন সি সহ অন্যান্য ভিটামিন শোষণ করে। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ঘাটতি একই সঙ্গে দূর হয়।

ফলে শরীর এতটাই মজবুত হয়ে যায় যে ছোট-বড় অনেক রোগের মোকাবিলা করতে পারে। এর সাথে একাধিক সুবিধা আছে। হলুদ চা ওজনের পাশাপাশি চোখের উপকার করে, এর রয়েছে অনেক উপকারিতা।

হলুদ চায়ের উপকারিতা

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে হলুদের গুঁড়ো নিয়মিত সেবনের মধ্যে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান গ্রহণ করা হয়, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে এবং শরীরের চর্বি কমানোর ক্ষমতাকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে না। তাই আপনি যদি অল্প সময়ের মধ্যে চর্বি কমাতে চান, তাহলে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থার্মিক সারভাইভাল অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না!

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ হলুদ চা চোখের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আসলে, হলুদে থাকা কিছু উপকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে রেটিনাল বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি কমাতে দেখা গেছে, তাই চোখে প্রোটিনের মাত্রা বাড়ায়, যা অন্ধত্বের মতো ভয়ঙ্কর জিনিস সৃষ্টি করে না। তাই যারা দিনে ৮-৯ ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী হলুদের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি চা পান করা উচিৎ।

রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই হৃদপিণ্ডের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। আসলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যত কম হবে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তত কম। এছাড়া হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনাও কমে যায়।

ক্যান্সারঃ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার স্বাভাবিকের কাছাকাছি আসতে পারে না। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন হলুদ চা খাওয়া কতটা জরুরি।

ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ঃ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর হলুদ দিয়ে তৈরি চা পান করলে শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে, যার প্রভাবে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে রোগমুক্ত জীবনের স্বপ্ন হাতের তালুতে পড়ে যায়।

ত্বকের স্বর উন্নত হয়ঃ হলুদ চা নিয়মিত খেলে শরীরে কিছু উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য এতটাই উন্নত হয় যে ছোট-বড় সব ধরনের চর্মরোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, এই বিশেষ পানীয়টি সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো গুরুতর চর্মরোগের চিকিৎসায়ও সাহায্য করে।

হজমশক্তি উন্নত করেঃ হলুদে উপস্থিত অনেক উপকারী উপাদান পাকস্থলীতে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার শক্তি বাড়ায়। ফলে হজম শক্তি এতটাই বেড়ে যায় যে বদহজম এড়ানো যায়।

স্মৃতিশক্তি উন্নত করেঃ হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্ত ​​থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে। অন্যদিকে, কারকিউমিন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অংশের ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে বুদ্ধির শক্তিও বৃদ্ধি পায়।

হার্টের ক্ষমতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত হলুদ চা খেলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত ​​সরবরাহকারী ধমনীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের যেকোনো ধরনের ক্ষতি বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। শুধু তাই নয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই হার্টকে দীর্ঘ সময় মজবুত রাখতে চাইলে হলুদের চা পান করা মাস্ট!

আলঝেইমারের মতো রোগকে দূরে রাখেঃ হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কের কোষগুলো যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখে। তাই আপনি যখন নিয়মিত হলুদ দিয়ে তৈরি চা পান শুরু করেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে মস্তিষ্ক সংক্রান্ত কোনো রোগও হতে পারে না। তাই যাদের এই ভয়াবহ রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের নিয়মিত হলুদ চা পান করা শুরু করা উচিৎ। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন সাধারণ চায়ের বদলে হলুদ চা খেতে হবে কতটা!

হলুদ চা তৈরি নিয়ম

উপকরণঃ

  • কাপ পানি
  • আধা চা-চামচ হলুদগুঁড়া
  • চা-চামচ মধু

প্রস্তুত প্রণালিঃ ১ কাপ হালকা গরম পানিতে পরিমাণমতো হলুদগুঁড়া ও মধু ভালোমতো মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে হলুদ চা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই চা পান করার অভ্যাস করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ

Rate this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *