চায়ের উপকারিতা

গ্রীকদেবী থিয়ার নাম থেকে ইংরেজি Tea শব্দ টি এসেছে। চিনে টি কে “চি” উচ্চারণ করা হয়। চি থেকেই বাংলায় চা’র উৎপত্তি।

১৮৫৫ সালে ব্রিটিশরা সিলেটে চা’য়ের চারা দেখতে পান। তারপর, ১৮৫৮ সালের দিক থেকে বাংলাদেশে প্রথম চায়ের চাষ শুরু হয়। ২০১৮ সালের জরিপ মতে বাংলাদেশে ১৬৬ টি চায়ের বাগান রয়েছে। যা থেকে উৎপাদিত চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

প্রস্তুত প্রক্রিয়া অনুসারে চা কে প্রধান পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 

যথাঃ

১। কালো চা।

২। সবুজ চা ।

৩। ওলং চা ।

৪। প্যারাগুয়ে চা ইষ্টক চা।

তবে বাংলাদেশে মানুষ সাধারণত রং/লাল চা, দুধ চা এবং গ্রীন টি এই ৩ ধরনের চা বেশি পান করে থেকে।

চায়ের উপকারিতা 

১.চা ওজন কমাতে সহায়তা করে।

২.অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা, মানুষিক চাপ কমায়।

৩. ত্বক কে সুস্থ ও ত্বকের কোষকে সতেজ রাখে।

৪.খুশখুশে কাশি মাথা ব্যথা সারায়।

৫. ইনসোমনিয়া প্রতিরোধ করে।

৬. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে ও হার্ট এটাকের ঝুকি কমায়।

চা কি ঘুমনাশক ?

চায়ে কাফেইন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা আমাদের স্নায়ু তে একধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং ট্যানিক এসিড থাকে যা স্নায়ুকে সজাগ রাখতে সাহায্য করে যার ফলে চা খেলে আমাদের ঘুম আসে না। তবে বেশি বেশি চা পান করলে সেক্ষেত্রে ক্যাফেইন-এর প্রভাবের প্রতি সহিষ্ণুতা বেড়ে যায় অর্থাৎ মানবদেহে এর প্রতিক্রিয়া কমে আসে।

চা কি কেবল গরমই খেতে হয় ?

উত্তর হচ্ছে না। গ্রীন টি, ব্লাক টি নামক চা ঠান্ডাবরফ মিশ্রিত করেও খাওয়া হয়ে থাকে।বাংলাদেশে সচারাচর এ ধরনের ঠান্ডা চা প্রচলিত না থাকলেও উন্নত বিশ্বে প্রায়ই ঠান্ডা চা পরিবেশিত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:-

দুধ চা না রং চা ? 

শরীরের জন্য আসলে কোন ধরণের চা বেশি গ্রহণযোগ্য অধিকাংশ মানুষই সে বিষয়ে সঠিক জানেন না। জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এক পরীক্ষায় ১৬ জন নারীকে একবার রঙ চা, আরেকবার দুধ চা পান করতে দেন। তারপর প্রতিবারই আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাঁদের রক্তনালীর প্রসারণ মাপা হয়।

See also  সুস্বাস্থ্যে লেবুর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

এই পরীক্ষায় দেখা যায়, রঙ চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায়। রক্তনালীর প্রসারণ উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রনে অত্যন্ত জরুরি। চায়ে থাকা ক্যাটেচিন রক্তনালীর প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অপরদিকে দুধ চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটাতে ব্যর্থ। কারণ, দুধের মধ্যে থাকে ক্যাসেইন নামক একটি পদার্থ যা চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালী প্রসারণের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার-এর গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন, চায়ের প্রভাবে কোষগুলো থেকে সাধারণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন নির্গত হওয়া জরুরি।

কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। চায়ে যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়, তাহলে ইনসুলিন এর নির্গমন শতকরা ৯০% কমে যায়। তাই যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাঁরা দেখে নিতে পারেন কোন চায়ে কত ক্যালোরি।

দুধ চিনি ছাড়া রঙ চা = ২ ক্যালোরি

১ চামচ চিনিসহ রঙ চা = ১৬ ক্যালোরি

১ চামচ চিনি ও দুধসহ চা = ২৬ ক্যালোরি

সুতরাং, রঙ চা উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী, দুধ চা নয়। তাই চা-খান তবে পরিমাণমত।  চায়ে হোক আড্ডা, চায়ে হোক আনন্দ। চায়ে হোক রোগ নিরাময়।

বেশি চা খেলে ক্ষতি

১.অধিক পরিমানে চা পানে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

২. চা তে ক্যাফেইন থাকে,যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে ক্ষতিকর, চা পানে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি হয়।

৩.পুরুষদের অধিক পরিমাণে চা পানে প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৪. চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাফেইন কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের জন্যে ক্ষতিকারক, তাই হার্টের রোগীদের চা এড়িয়ে চলা উচিত। 

৫. অধিক পরিমানে চা পানে ঘুমার সমস্যাও হতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (13 Reviews)
foodrfitness
foodrfitness
Articles: 234

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *