চুল পড়া পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই জন্য খুব সাধারণ। চুল পড়ার প্রধান কারণ হল জেনেটিক্স বা হরমোনাল ইমব্যালেন্স। এছাড়া অন্যান্য কারণেও চুল পড়তে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এখানে আমরা আপনাকে এমন ১৯ টি প্রতিকার সম্পর্কে বলবো।
বর্তমান সময়ে চুল পড়ার সমস্যা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আরেকটি বিষয় যা খুবই সাধারণ তা হল সঠিক তথ্যের অভাব। সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অনেক প্রতিকার ব্যবহার করি, কিন্তু কোন চিকিৎসা ব্যবহার করতে হবে, এর প্রভাব কী হবে ইত্যাদি সম্পর্কে সবসময়ই তথ্যের অভাব থেকে থাকে।
তো চলুন জেনে নিই চুল পড়া রোধ করার ঘরোয়া প্রতিকার, যেগুলো ব্যবহার করে আপনার চুল লম্বা ও ঘন দেখাবে, সেই সাথে এই প্রতিকারগুলো কখন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং এর উপকারিতাগুলো কী কী।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে নারকেলের দুধ
উপাদান:
- ১ কাপ নারকেল দুধ
পদ্ধতি:
- ঘরেও নারকেলের দুধ তৈরি করতে পারেন। এক দুইটি নারকেল গ্রেট করে ছেঁকে নিয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে নিন ।
- এবার হেয়ার ব্রাশ দিয়ে চুলের গোড়ায় নারকেলের দুধ লাগান।
- এবার তোয়ালে দিয়ে ২০ মিনিট মাথা ঢেকে রাখুন।
- ২০ মিনিট পর তোয়ালেটি সরিয়ে ফেলুন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন।
- পানি দিয়ে ধোয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
নারকেল দুধ কখন ব্যবহার করবেন?
এই প্রক্রিয়াটি আপনাকে সপ্তাহে একবার করতে হবে।
চুল পড়া রোধে নারকেল দুধের উপকারিতা
নারকেলের দুধ ভিটামিন ই এবং চর্বি সমৃদ্ধ যা আপনার চুলকে ময়েশ্চারাইজড এবং স্বাস্থ্যকর রাখে। দুধে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধ করতে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া নারকেল তেলে থাকা পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের আগা ফাটা থেকে বিরত রাখে।
এইভাবে, আপনি নারকেল দুধ দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন এবং চুল পড়া রোধ করতে পারেন। অনুরূপ এই তেল দিয়ে নিয়মিত চুলে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া রোধ হয়।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা
উপাদান:
- অ্যালোভেরা গাছের পাতা
পদ্ধতি:
- চুল পড়া বন্ধ এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরা অনেক কার্যকরী। অ্যালোভেরার কান্ড থেকে বের করা রসালো লিকুইড বা পাল্প দিয়ে চুলের গোড়া ম্যাসাজ করুন।
- প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- পাল্প লাগানোর আগে অবশ্যই চুল এবং চুলের স্কাল্প একদম পরিষ্কার রাখুন।
অ্যালোভেরা কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে তিনবার সকালে চুলে অ্যালোভেরার পাল্প লাগাতে পারেন।
চুল পড়া রোধে অ্যালোভেরার উপকারিতা
অ্যালোভেরা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চুলের গোড়ার গভীরে গিয়ে চুল পড়া বন্ধ করে।
সতর্কতা
অ্যালোভেরা ভেঙ্গে যে হলুদ রঙের পদার্থ বের হয় তাতে টক্সিন পাওয়া যায়। হলুদ পদার্থটি ত্বকে লাগালে ত্বকে চুলকানি হতে পারে । অ্যালোভেরার ভিতরের লিকুইড বের করার আগে, আপনি গাছটিকে সিদ্ধ করুন যাতে সমস্ত টক্সিন নির্মূল হয়। অথবা হলুদ পদার্থ টি বের করে বা পরিষ্কার ভাবে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা, এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার ব্যবহার
উপকরণঃ
- ১০-১২ টি শুকনো নিম পাতা।
- আর এক পাত্র পানি।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে একটি প্যান বা পাত্র নিন এবং তাতে ৩ কাপ পানি দিন। এবার ১০-১২ টি শুকনো নিম পাতা পানিতে দিন।
- নিম পাতা পানিতে ফুটতে দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত জলের স্তর অর্ধেকে নেমে আসে।
- জলের স্তর অর্ধেক হয়ে যাওয়ার পরে, মিশ্রণটি ঠান্ডা করার জন্য পাত্রটি চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন।
- এবার এই মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
নিম পাতা কখন ব্যবহার করবেন?
প্রতিবার চুল ধোয়ার সময় এই পানি ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করলেও অসম্ভব ভালো ফলাফল পাবেন।
চুল পড়া রোধে নিম পাতার উপকারিতা
নিমের চমৎকার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা আপনার চুলের খুশকি দূর করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এটি ত্বকে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, যার ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। নিম উকুন ও নিট দূর করার পাশাপাশি চুল পড়া রোধেও সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ উকুন দূর করার উপায়
সতর্কতাঃ
চুলের জন্য নিম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে (বিশেষ করে খুশকির ক্ষেত্রে) আপনার চোখের অংশ এড়িয়ে চলুন। অনেকের নিমের পানি সরাসরি ব্যবহার এ ইচিং বা চুলকানি হয়ে থাকে তাই নিমের পানি দিয়ে চুল ধোয়ার সময় সতর্ক থাকুন এবং চেষ্টা করুন যেনো পানি আপনার চোখে না পৌঁছায়।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আমলকী
প্রথম পদ্ধতি-
উপকরণঃ
- ৪-৫ টি আমলকী।
- ১ কাপ নারকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
- একটি পাত্রে নারকেল তেল দিন। এবার এতে ৪-৫টি আমলকী যোগ করুন। এবং সেদ্ধ করতে দিন।
- তেল কালো না হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে থাকুন।
- তেল কালো হয়ে যাওয়ার পর পাত্রটিকে ঠাণ্ডা করার জন্য আলাদা করে রাখুন।
- ঠাণ্ডা হওয়ার পর এবার সেই তেল দিয়ে চুলের গোড়া বা শিকড় ম্যাসাজ করুন।
- এটি প্রায় ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপরে যথারীতি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি-
উপকরণঃ
- ৪-৫ টি আমলকী নিন।
- লেবুর রস।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে ৪-৫ টি আমলকী গুঁড়ো করে এর রস বের করে নিন।
- এবার তাজা লেবুর রসে ২ চা চামচ আমলকীর রস বা গুঁড়ো সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন।
- এখন এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান এবং প্রয়োগ করার পরে এই মিশ্রণটি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন।
- শুকানোর পর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
তৃতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ৪-৫ টি আমলা বা আমলকী নিন।
- নারিকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
- সমপরিমাণ নারিকেল তেল এবং ৪-৫টি আমলকী মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিন।
- এই মিশ্রণটি সপ্তাহে একবার শিকড়ে লাগান।
- এবার এই মিশ্রণটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমলকী কখন ব্যবহার করবেন?
এই তিনটি পদ্ধতি সপ্তাহে দুবার করুন।
চুল পড়া রোধে আমলকীর উপকারিতা
আমলকী ভিটামিন সি তে সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করার পাশাপাশি চুলের সাইন বা উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ভিটামিন সি আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে যাতে আপনার চুলের গোড়া শক্ত ও সুস্থ থাকে। আমলকী চুলের অকাল পাকা হওয়া রোধ করে। নিয়মিত আমলকী খেলে চুল ঝকঝকে হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়া রোধেও সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম, আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে মেথি বীজ
প্রথম পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ২ টেবিল চামচ মেথি
- ৪ চা চামচ দই
- ১টি ডিম –
পদ্ধতিঃ
- দুই টেবিল চামচ মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে বীজগুলি সরিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- মিশ্রণে মেথি দানা পিষে তাতে সামান্য পানি দিন যাতে পেস্ট শক্ত না হয়ে যায়।
- এবার মেথি বীজের মিশ্রণে একটি ডিম ও চার চামচ দই যোগ করুন।
- এই মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুল ও চুলের গোড়ায় লাগান।
- এই মিশ্রণটি চুলে এভাবে আধা ঘণ্টা রেখে দিন।
- আধা ঘণ্টা পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি-
উপকরণঃ
- ১ কাপ মেথি বীজ।
পদ্ধতিঃ
- মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে বীজগুলি সরান এবং মিশ্রিত করুন। চেষ্টা করুন আপনার পেস্ট যেন ঘন না হয়।
- এবার এই মিশ্রণ চুলের গোড়া ও শেষ পর্যন্ত লাগান।
- এরপর তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন।
- এভাবে প্রায় ৪০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
তৃতীয় পদ্ধতি –
উপকরণঃ
- ২ টেবিল চামচ মেথি
- ১/২ কাপ নারিকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
- একটি প্যানে নারিকেল তেল নিন, এবার তাতে মেথি বীজ দিন।
- মেথি বাদামি হয়ে যাওয়ার পর প্যানটিকে ঠান্ডা করার জন্য আলাদা করে রাখুন।
- ঠাণ্ডা হওয়ার পর মিশ্রণটি ফিল্টার করুন।
- এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।
- মিশ্রণটি এক ঘণ্টা চুলে রেখে দিন।
- এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথি বীজ কখন ব্যবহার করবেন?
আপনি মাসে একবার বা দুবার এই মিশ্রণটি লাগান।
চুল পড়া রোধে মেথি বীজের উপকারিতা
মেথি বীজ চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুলের ফলিকল পুনর্গঠনে সাহায্য করে। মেথি বীজ চুলকে চকচকে, মজবুত ও লম্বা করে। এতে চুল পড়ার সমস্যা কমে।
আরো পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
চুল পড়া বন্ধ করতে লিকার
উপকরণঃ
- এক টেবিল চামচ লিকার
- এক কাপ দুধ।
- এক চামচ জাফরান নিন।
পদ্ধতিঃ
- দুধে সমপরিমাণে লিকোরিস ও জাফরান মিশিয়ে নিন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে তুলোর পশমের সাথে এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান।
- এভাবে সারারাত রেখে দিন।
- সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া রোধে লিকারের উপকারিতা
চুলে লিকার লাগালে খুশকি হয় না এবং শিকড় মজবুত থাকে। এটি চুল পড়ার সমস্যা কমায়।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে বীটরুট পাতা
উপকরণঃ
- কিছু বিট পাতা।
- ১ চা চামচ মেহেদি
পদ্ধতিঃ
- একটি প্যানে পানি নিন এবং এতে বিটরুট পাতা দিন।পানি অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে থাকুন।
- এবার পানি থেকে বীট পাতা তুলে মিক্সারে রেখে তাতে ১ চা চামচ মেহেদি যোগ করে মেশান।
- পেস্ট তৈরি করার পরে, এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান।
- এভাবে প্রায় ২০ মিনিট রেখে তারপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
বীট পাতা কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে তিনবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
চুল পড়া রোধে বিট পাতার উপকারিতা
বিটরুটে রয়েছে পটাসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং সি, যা সবই স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য প্রয়োজনীয় এবং চুল পড়া রোধেও উপকারী।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের রস
প্রথম পদ্ধতি
উপাদানঃ
- ১টি পেঁয়াজ।
- এক বান্ডিল তুলো
পদ্ধতিঃ
- পেঁয়াজ কুঁচি করে একটি পাত্রে এর রস বের করে রাখুন।
- একটি তুলোর বল রসে ডুবিয়ে সরাসরি আপনার মাথার ত্বকে লাগান। চুলের গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত লাগানোর চেষ্টা করুন।
- প্রায় ৩০ মিনিট চুল এভাবেই রেখে দিন। এর পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ১টি পেঁয়াজ।
- ২ চা চামচ মধু।
- গোলাপ জল।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে পেঁয়াজের রস বের করে নিন। এবার এতে ১ থেকে ২ চামচ মধু মেশান।
- পেঁয়াজের গন্ধ যেনো নাকে না লাগে এর জন্য গোলাপ জলও যোগ করতে পারেন।
- এবার এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
তৃতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ১টি পেঁয়াজ।
- নারকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে রসুন পিষে পানিতে ফুটিয়ে নিন।
- এবার এতে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল দিন।
- মিশ্রণটি একটু ঠান্ডা হলে চুলের গোড়ায় লাগান।
- ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি লাগাতে হবে
চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের রসের উপকারিতা
পেঁয়াজে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা চুলের ব্যাকটেরিয়ার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। সালফার চুলের ফলিকল এর চিকিত্সার জন্যও পরিচিত।
সতর্কতাঃ
চুলে পেঁয়াজের রস লাগানোর সময় সতর্ক থাকুন। পেঁয়াজের রস চোখে পড়লে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। তবে পেঁয়াজের রস আপনার চোখের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু পেঁয়াজের রস জ্বালা এবং চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধ করতে গ্রিন টি বা সবুজ চা
উপাদানঃ
- ২টি গ্রিন টি বা সবুজ চা এর ব্যাগ
- ২-৩ কাপ গরম জল।
পদ্ধতিঃ
- এক কাপ গরম পানিতে দুটি গ্রিন টি ব্যাগ রাখুন।
- এবার গরম পানি ঠান্ডা হতে দিন।
- এবার চায়ের ব্যাগটা বের করুন। আর সেই মিশ্রণটি চুল ধোয়ার জন্য ব্যবহার করুন।
- মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধোয়ার পর চুলের গোড়া ম্যাসাজ করুন।
- ম্যাসাজ করার পর চুলে শ্যাম্পু করুন।
কখন গ্রিন টি ব্যাগ ব্যবহার করবেন?
শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার হিসেবে গ্রিন টি-এর মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুইবার চুলে শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি লাগান।
চুল পড়া রোধে গ্রিন টি ব্যাগের উপকারিতা
গ্রিন টি চুলের বৃদ্ধি এবং গোড়া মজবুত করতে পরিচিত। এটি আপনার মেটাবলিজম বাড়ায়, যা দ্রুত চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করে।
নারকেল তেলের ম্যাসাজ
উপাদানঃ
- ১-২ চা চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
- সামান্য নারকেল তেল গরম করুন।
- আপনার চুল এবং শিকড়ে আলতো করে নারকেল তেল লাগান এবং ম্যাসাজ করুন।আধা ঘণ্টা বা সারারাত রেখে দিন।
- তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
নারকেল তেল কখন ব্যবহার করবেন?
আপনি ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত একদিন পর পর এই তেল প্রয়োগ করুন।
চুল পড়া রোধে নারকেল তেলের উপকারিতা
নারকেল তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলকে মজবুত করে এবং প্রাকৃতিকভাবে চকচকে করে দেয়। এটিতে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা শিকড়কে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। চুল পড়া বন্ধ করতে নারকেল তেল খুবই উপকারী একটি ঘরোয়া উপায়।
সতর্কতাঃ
এই তেল লাগানোর পর ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন। যদি সময় বেড়ে যায়, তাহলে ধুলোবালি আপনার তৈলাক্ত চুলে লেগে যেতে পারে, যা আপনার চুলের আরও ক্ষতি করতে পারে। তাই তেল ব্যবহার করে ঘরের বাহিরে যাবেন না।
দ্রষ্টব্যঃ আপনি অনুরূপ ফলাফলের জন্য নারকেল তেলের পরিবর্তে বাদাম, জলপাই এবং আমলকীর তেল ও ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল চুলে উজ্জ্বলতা আনে এবং চুল পড়া রোধ করে। বাদাম এবং আমলকীর তেল চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ নারিকেল তেলের ১০টি উপকারিতা
ডিমের মাস্ক
প্রথম পদ্ধতি
- ২ টি ডিম।
পদ্ধতিঃ
- একটি পাত্রে দুটি ডিম রাখুন।
- ডিমের কুসুম যোগ করার আগে আলাদা করে নিন।
- ডিমের সাদা অংশ ভালো করে মেশান যতক্ষণ না পেস্ট ঘন হয়।
- ডিমের গোড়ায় লাগানোর জন্য হেয়ার ডাই ব্রাশ ব্যবহার করুন।
- এবার শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন এবং প্রায় ২০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ১টি ডিম।
- ১ চা চামচ অলিভ অয়েল।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে একটি ডিম নিন।
- এবং এর সাথে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।এবার উভয়ের মিহি পেস্ট তৈরি করুন।
- এর পর চুলের গোড়ায় লাগান।
- এভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।
- এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
ডিমের হেয়ার মাস্ক কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে দুবার এই মাস্ক ব্যবহার করুন।
চুল পড়া রোধে ডিমের মাস্কের উপকারিতা
ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আলু
প্রথম পদ্ধতি
- ১ টি আলু।
- ১ চা চামচ মধু।
- ১ চা চামচ পানি।
পদ্ধতিঃ
- আলু ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
- এবার আলুকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে মিক্সারে দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি ফিল্টার করতে একটি মসলিন কাপড় বা কাপড়ের ছাকনি ব্যবহার করুন।
- ফিল্টার করার পর যে রস বের হবে তাতে এক চামচ পানি ও মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি চুলে এবং চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করুন। প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- এবার এই মিশ্রণটি ধুয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
আলু কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।
চুল পড়া রোধে আলুর উপকারিতা
আলুতে রয়েছে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং আয়রন, যা স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়ামের অভাবে চুল পড়া রোধ করে এবং আলু চুল পড়া রোধ করে।
লেবুর রস দিয়ে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
উপাদানঃ
- ২-৩ টি লেবু।
- ১ কাপ গরম পানি।
পদ্ধতিঃ
- ২-৩ টি লেবু কেটে একটি কাপে লেবুর রস ছেঁকে নিন।
- একটি মসলিন কাপড় অথবা একটি কাপড়ের ছাকনি দিয়ে রস ছেঁকে এর সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে নিন।
- গোসল করার সময় চুল ধোয়ার পর এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান এবং ম্যাসেজ করুন।
- এই মিশ্রণটি আপনার চুলে প্রায় ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
লেবু কখন ব্যবহার করবেন?
সপ্তাহে এক বা দুবার সকালে চুল ধোয়ার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
চুল পড়া রোধে লেবুর উপকারিতা
লেবু চুলের গোড়া মজবুত রাখে। তৈলাক্ত চুলে লেবুর রস ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। লেবু খুশকির সমস্যাও কমায়। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা চুলকে সুস্থ ও মজবুত রাখে।
সতর্কতাঃ
উপকারী হবার পাশাপাশি, লেবুতে অ্যাসিডও রয়েছে, তাই যখনই আপনি আপনার চুলে এই মিশ্রণটি লাগাবেন, চোখ বন্ধ করে রাখুন। এ ছাড়া মনে রাখবেন লেবুর রস দ্রুত বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার চুল শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ লেবুর রসের উপকারিতা, সুস্বাস্থ্যে লেবুর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, লেবু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় – ধনিয়া
উপাদানঃ
- ১ কাপ তাজা ধনে পাতা।
- ৩-৪ চা চামচ পানি।
পদ্ধতিঃ
- ধনেপাতা পিষে তাতে কিছু পানি যোগ করুন এবং মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- একটি পাত্রে এই মিশ্রণটি ছেকে নিন।
- চুলের গোড়া এবং চুলে মিশ্রণটি লাগান।
- এভাবে এক ঘণ্টা রেখে দিন।
- তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সবুজ ধনে পাতা কখন ব্যবহার করবেন?
সকালে গোসলের আগে সপ্তাহে দু-তিনবার মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।
চুল পড়া রোধে সবুজ ধনে পাতার উপকারিতা
ধনেপাতা আপনার চুলকে নরম করে এবং চুল পড়া রোধ করে। এছাড়া এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে হেনা বা মেহেদী
প্রাচীনকাল থেকেই, হেনা প্রাকৃতিকভাবে চুলে রঙ করার জন্য এবং কন্ডিশনার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চুল মজবুত করতেও হেনা ব্যবহার করা হয়। এর কার্যকারিতা বাড়াতে সরিষার তেলের সঙ্গে মেহেদি মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
পদ্ধতিঃ
- ২৫০ মিলি সরিষার তেল নিন।
- এবার এতে ধুয়ে রাখা মেহেদি পাতা দিন।
- এই মিশ্রণটি ফুটাতে থাকুন। পাতা জ্বলতে শুরু করা পর্যন্ত সিদ্ধ করুন।
- তারপর একটি মসলিন কাপড় বা কাপড়ের ছাকনি দিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিন।
- ফিল্টার করা মিশ্রণটি একটি বোতলে রাখুন।
- এবার এই মিশ্রণটি প্রতিদিন চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।
- এ ছাড়া আধা কাপ দইয়ের সঙ্গে ১ কাপ মেহেদির গুঁড়া মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগান এবং এটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- এবার মিশ্রণটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে কারি পাতা
হেয়ার টনিক হিসেবে কারি পাতা ব্যবহার করা হয়।
পদ্ধতিঃ
- আপনি আপনার চুলের জন্য যে তেল ব্যবহার করেন তাতে কারি পাতা যোগ করুন এবং এটি ফুটাতে থাকুন।
- পাতা বাদামী হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করুন।
- এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান।
- এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করুন।
- চুল পড়া রোধ করতে সপ্তাহে দুইবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
অলিভ অয়েল, মধু এবং দারুচিনি-
উপাদানঃ
- মধু।
- জলপাই তেল।
- দারুচিনি।
পদ্ধতিঃ
- মধু, অলিভ অয়েল এবং দারুচিনির প্যাক তৈরি করুন।
- এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান।
- এই মিশ্রণটি চুলে এভাবে এক ঘণ্টা রেখে দিন।
- এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কখন অলিভ অয়েল, মধু এবং দারুচিনি ব্যবহার করবেন?
সেরা ফলাফলের জন্য, সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। চুল পড়া রোধে এই চিকিৎসা খুবই উপকারী।
চুল পড়া রোধে অলিভ অয়েল, মধু ও দারুচিনির উপকারিতা
এই হেয়ার প্যাকটি আপনার চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করে।
আরো পড়ুনঃ জয়তুন তেলের উপকারিতা, ব্যবহার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
শিকাকাই, আমলকি, নিম এবং মধু
উপাদানঃ
- ঘৃতকুমারী।
- আমলা পাউডার।
- শিকাকাই পাউডার।
- নিম পাউডার।
পদ্ধতিঃ
- সমপরিমাণ অ্যালোভেরার পাল্প বা রস, আমলা গুঁড়া, শিকাকাই গুঁড়া, নিম গুঁড়া মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণে কিছু পানি যোগ করুন এবং একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে লাগান।
- সপ্তাহে দুইবার এই মিশ্রণটি লাগান।
- এবার হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
শিকাকাই, আমলা, নিম এবং মধু কখন ব্যবহার করবেন?
ভালো ফল পেতে মাসে দুবার এই মিশ্রণ টি ব্যবহার করুন।
চুল পড়া রোধে শিকাকাই, আমলা, নিম ও মধুর উপকারিতা
মিশ্রণটি লাগালে গোড়া মজবুত থাকবে।
জ্বালাপোড়া ও চুলকানি উপশম হবে।
চুল গভীরভাবে পুষ্টি পাবে যা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মজবুত থাকবে।
উপরোক্ত মিশ্রণ এবং প্যাকগুলো ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে।এর মধ্যে কোনো উপকরণ এ যদি আপনার এলার্জি মনেহয় সেক্ষেত্রে সেই উপাদান ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও শরীর বা ত্বক বা চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন।
আরো পড়ুনঃ