আমার এখনও মনে আছে, আমি যখনই কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতাম, মা তাড়াতাড়ি এক গ্লাস দুধ পান করার জন্য হাতে তুলে দিতেন। আমি সব সময় দুধের স্বাদ অপছন্দ করতাম। তখন দুধ এক রকম বিরক্ত লাগতো, কিন্তু আজ বুঝলাম এর উপকারিতা। এর কারণ এতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান। এর উপকারিতা দেখে, এখন দুধ পান করা সত্যিই আমার অভ্যাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রাচীন কাল থেকেই দুধ মানুষের অতি প্রিয় পানীয়। দুধের ব্যবহার ৭০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
দুধ আবিষ্কারের পূর্ববর্তী সময়ে, অনুমাননির্ভর একটি ধারণা ছিল যে, যারা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পান না শুধু তাদেরই দুধ খাওয়া উচিত। সূর্যের আলোর অভাবের কারণে তারা যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি পাচ্ছেনা ভেবে সম্পুরক খাদ্য হিসেবে দুধের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে।ইউরোপের মানুষ প্রথমে স্বাস্থ্যের সুবিধার জন্য দুধ পান করতে শুরু করে, এবং এই প্রবণতা টি ধীরে ধীরে বলকানদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রচীনকালে দুধ বিলাসিতা হিসেবেই বিবেচিত ছিল এবং এটির ব্যবহার ছিল শুধুমাত্র রাজকীয়দের জন্য। এই সংস্কৃতি মিশরে বেশ জনপ্রিয় ছিল। দুগ্ধদানকারী পশু হওয়া কারণে ভেড়া ও গরু ছিল অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ।
এই নিবন্ধে, আমরা দুধের উপকারিতা সম্পর্কে কথা বলব। এখানে আমরা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা পাশাপাশি এর ব্যবহার ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানব।
দুধের উপাদান কি কি
দুধের উপাদান সমূহঃ দুধের সবটুকুই অপরিহার্য পুষ্টি গুণে ভরপুর। শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সবারই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা উচিৎ।
দুধ ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচিত। দুধে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা – থ্রী, এছাড়া রয়েছে এছাড়া রয়েছে ওমেগা- সিক্স সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ উৎসের ভিত্তিতে দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে রয়েছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। এতে প্রচুর পরিমাণ vitamin B-12 রয়েছে, যা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অধিকিন্তু, এটি রিবোফ্লেভিনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উৎস যা শরীরকে কর্মক্ষম থাকতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে ফসফরাস, যা দেহের টিস্যু এবং কোষ মেরামতের জন্য দারূণ উপকারী। এখানে দুধের সকল পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলঃ
পুষ্টি উপাদান | প্রতি 100 গ্রাম |
জল | 88.13 গ্রাম |
শক্তি | 60 কিলোক্যালরি |
প্রোটিন | 3.28 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 4.67 গ্রাম |
মোট ফ্যাট (লিপিড) | 3.2 গ্রাম |
চিনি | 4.81 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 123 মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | 12 মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | 101 মিগ্রা |
পটাসিয়াম | 150 মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | 38 মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | 0.41 মিলিগ্রাম |
কপার | 0.001 মি.গ্রা |
সেলেনিয়াম | 1.9 μg |
থায়ামিন | 0.056 মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন | 0.138 মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | 0.105 মিগ্রা |
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড | 0.043 মিগ্রা |
ভিটামিন-বি-6 | 0.061 মিলিগ্রাম |
কোলিন | 17.8 মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-B12 | 0.54 µg |
ভিটামিন এ | 32 μg |
Retinol | 31 µg |
ক্যারোটিন, বিটা | 7 µg |
ভিটামিন-ই | ০.০৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-ডি | 1.1 μg |
ভিটামিন-কে | 0.3 μg |
ফ্যাটি অ্যাসিড, মোট স্যাচুরেটেড | 1.86 গ্রাম |
ফ্যাটি অ্যাসিড, মোট মনোস্যাচুরেটেড | 0.688 গ্রাম |
ফ্যাটি অ্যাসিড, মোট পলিআনস্যাচুরেটেড | 0.108 গ্রাম |
কোলেস্টেরল | 12 মিলিগ্রাম |
গরুর দুধের খাদ্য উপাদান
গরুর দুধের খাদ্য উপাদানঃ দুধের বিভিন্ন উৎস আছে। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি যেই দুধ পান করি তা হলো গরুর দুধ। গরুর দুধ যেমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তেমনই এটি সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। বলতে গেলে গরুর দুধ খাদ্য উৎপাদন এর মধ্যে একটি আশীর্বাদ স্বরুপ।
খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদানই এক সাথে পাওয়া যায় এই গরুর দুধে। প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায়। যা হাড়ের জন্য ও শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য খুবই প্রয়োজন। হাড়ের গঠন মজবুত করতে গরুর দুধের ভূমিকা অনবদ্য।
গরুর দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়াও গরুর দুধে আছে অ্যামাইনো এসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ পদার্থ, যেমন – ক্রোমিয়াম, ম্যাংগানিজ, আয়রন,কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম।বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে গরুর দুধের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে।
গরুর দুধের কম্পোজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস।
মহিষের দুধের উপকারিতা
মহিষের দুধের উপকারিতাঃ গবেষণায় দেখা যায় মহিষের দুধে একাধিক স্বাস্থ্য সুবিধা থাকতে পারে। যেমন-
১) হাড়ের স্বাস্থ্যকে মজবুত করতে পারেঃ মহিষের দুধ উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যা আমাদের হাড়ের বিকাশের জন্য অধিক প্রয়োজনীয়।
২) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করতে পারে।
৩) হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
তবে যাদের গরুর দুধে এলার্জি তাদের মহিষের দুধেও এলার্জি থাকতে পারে।
গুড়া দুধের উপকারিতা
গুড়া দুধের উপকারিতাঃ তরল দুধকে বাষ্পীভূত করার মাধ্যমে গুড়া দুধ তৈরি করা হয়। অনেক সময় ছোট বাচ্চা রা গরুর দুধ খেতে চায় না সেই ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে গুড়া দুধ খাওয়ানো যায়। তরল দুধের মেয়াদ খুব অল্প থাকে তাই বেশিরভাগ মানুষ তরল দুধের পরিবর্তে গুড়া দুধ বেছে নেয় পান করার জন্য।
বিভিন্ন গবেষণা মতে, তরল দুধের স্থান খুব সহজেই দখল করতে পারে গুড়া দুধ। কারণ এতে রয়েছে একই ধরনের ভিটামিন সমূহ ও মিনারেল সমূহ। যেকোনো মিষ্টি দ্রব্য তৈরিতে গুড়া দুধ ব্যবহার করলে তার স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
তবে গুড়া দুধে অক্সিডাইজড কোলেস্টেরল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সর্বোপরি দুধ আমাদের দেহের পুষ্টি জোগানের একটি বড় ভান্ডার। সুস্থ থাকতে হলে একজন মানুষ কে অবশ্যই নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে কারো গরু ও মহিষের দুধে এলার্জি অথবা হজমে সমস্যা হলে তার পরিবর্তে ছাগলের দুধ খেতে হবে।