প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, love,  ভালোবাসা, প্রেম, affection,  attachment এগুলো আসলে কি? এবং এগুলো আমাদের সাথে কেনো হয়! কেনো এমন হয় যে কোনো ব্যাক্তিকে এতোটাই ভালো লেগে যায় যে তার জন্য প্রাণও দিয়ে দিতে পারবে! এমন ধরনের ফিলিংস তৈরি হয়ে যায়। আপনিও হয়তো কোনো না কোনো সময় কাউকে না কাউকে অবশ্যই ভালোবেসেছেন, তাই না? এই ভালোবাসা হলো এমন একটি অনুভূতি যা মানব জাতির survival এর জন্য খুবই আবশ্যক। আর শুধু মানুষই নয়, এই প্রেম বা ভালোবাসা  কে পৃথিবীতে অবস্থিত প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। প্রেমের এই সাশ্বতভাব  পৃথিবী তৈরির সময় থেকেই রয়েছে। প্রকৃতিকে ব্যালেন্স রাখার জন্য প্রেম একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রেম কিঃ  প্রাচীন কাল থেকেই বহু মনিষী, লেখক, কবি, মনোবৈজ্ঞানীক, শিল্পীরা বিভিন্ন ভাবে এর ব্যখ্যা দিয়েছেন।  প্রত্যেকের কাছেই এই ভালোবাসা বা  প্রেমের অনুভূতি আলাদা আলাদা পাওয়া গেছে। প্রেম একটি আবেগের সাথে সম্পর্কিত উত্তেজনাপূর্ণ, যৌন এবং রহস্যময় অনুভূতি। এটি বাহ্যিক এবং আনন্দদায়ক অনুভূতি যা কোনও ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ সম্পর্কিত কোনও আবেগীয় আকর্ষণকে উস্কে দেয়। প্রেম হল অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি  দৃঢ় আকর্ষণ যা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিয়ের নিমিত্তে বিবাহপূর্ব সম্পর্ক গঠনকারী আচরণগুলো প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যখন দুটি মানুষ একে অপরের সম্পর্কে কিছু জেনে, সেই বিষয়টি নিজের অন্তরে একটি প্রশান্তির সৃষ্টি করলে, মানুষ দুটি সেই রকম ভালোলাগার  ঘটনা সারাজীবন পেতে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একে অন্যকে সারাজীবন এক সাথে পাশে পেতে চায়।

প্রেমের অনেক শর্ত, কারণ ও নীতি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে  প্রেমের শুরু হয় চেহারা দেখে। তারপর আস্তে আস্তে  ব্যাক্তির আন্তরিকতা, স্বভাব,  কর্ম, ব্যবহার, চাঞ্চল্যতা সেই প্রেমকে গভীর করে দেয়। কেউ যদি বলে সে চেহারা দেখে প্রেমে পড়েনি, তাহলে নিশ্চিত সে মিথ্যা বলছে।

তবে একটি  বিষয়  একটু লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে প্রাচীন কালের প্রেম, অর্থাৎ যেই প্রেমকে আমরা পড়েছি সেই প্রেমের সাথে আজকালকার প্রেমের কোনো মিল ই নেই। এই ২০২১ সেঞ্চুরি তে গ্লোবালাইজেশন এর যুগে প্রেমের ডেফিনিশন অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। ভালোবাসার লোকটির সাথে ঘোরা, সময় কাটানো,  ভালোবাসার প্রদর্শন সকলের সামনে করা এই বিষয় গুলিকে এখন ফ্যাশন হিসেবে দেখা হয়। আজকাল মোবাইল ফোন চেঞ্জ করার মতোই ভালোবাসার লোকেদের breakup এবং patchup হয়ে যায়।

সত্যি বলতে কি জানেন? এতো গবেষণার পরও প্রেম কি, প্রেম কেন হয়, প্রেম কখন হয়, কার সাথে হয় এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। মনে করা হয় প্রেমের এই সম্পর্ক টি আত্মার সাথে বন্ধনের একটি সম্পর্ক। অর্থাৎ  প্রেম হল অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি কোন ভালোবাসার অনুভূতি, বা কোন দৃঢ় আকর্ষণ, এবং এসকল বিষয়ের ফলে সৃষ্ট আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিয়ের নিমিত্তে বিবাহপূর্ব সম্পর্ক গঠনকারী আচরণাবলি প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

যখন দুটি মানুষ একে অপরের সম্পর্কে কিছু জেনে, সেই বিষয়টি নিজের অন্তরে একটি প্রশান্তির সৃষ্টি করলে, মানুষ দুটি সেই রকম ভালোলাগার  ঘটনা সারাজীবন পেতে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একে অন্যকে সারাজীবন এক সাথে পাশে পেতে চায়। 

প্রেমের অনেক শর্ত, কারণ ও নীতি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে  প্রেমের শুরু হয় চেহারা দেখে। তারপর আস্তে আস্তে  ব্যাক্তির আন্তরিকতা, স্বভাব,  কর্ম, ব্যবহার, চাঞ্চল্যতা সেই প্রেমকে গভীর করে দেয়। কেউ যদি বলে সে চেহারা দেখে প্রেমে পড়েনি, তাহলে নিশ্চিত সে মিথ্যা বলছে। তবে একটি  বিষয়  একটু লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে প্রাচীন কালের প্রেম, অর্থাৎ যেই প্রেমকে আমরা পড়েছি সেই প্রেমের সাথে আজকালকার প্রেমের কোনো মিল ই নেই। এই ২০২১ সেঞ্চুরি তে গ্লোবালাইজেশন এর যুগে প্রেমের ডেফিনিশন অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। ভালোবাসার লোকটির সাথে ঘোরা, সময় কাটানো,  ভালোবাসার প্রদর্শন সকলের সামনে করা এই বিষয় গুলিকে এখন ফ্যাশন হিসেবে দেখা হয়। আজকাল মোবাইল ফোন চেঞ্জ করার মতোই ভালোবাসার লোকেদের breakup এবং patchup হয়ে যায়।

মানুষ কেনো প্রেমে পড়েঃ যখন কোনো ব্যাক্তি কারো প্রেমে পড়ে, তখন তার ব্রেনের একটি নির্দিষ্ট অংশ সক্রিয় হয়ে যায়। কোনো ধরেনের নেশা করার পর যেভাবে মানুষেরা এক ধরনের আনন্দ কে অনুভব করতে পারে তেমনি এই প্রেমও ঠিক একই রকমের অনুভূতি পেতে সাহায্য করে। তফাৎ শুধু একটাই  যে নেশা কিছু সময়ের জন্য কোনো ব্যাক্তিকে আনন্দের অনুভূতি দেয় আর এই প্রেম দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেই অনুভূতি দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে এই আনন্দের অনুভূতিকে পাওয়ার জন্য লোকেরা নিজের সীমাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে।যে ব্যাক্তি প্রেমে হাবুডুবু খায় তার ব্রেন সাধারণ ব্যাক্তির তুলনায় একটু অন্যভাবেই কাজ করে।

বিজ্ঞানের ভাষায় প্রেম হলো এক ধরনের জেদ এবং নেশা। বিজ্ঞান বলে যে, “প্রেম অন্ধ”। এই কথাটি ১০০% সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই যে এই প্রেম বা ভালোবাসার কারণে মানুষের ব্রেনে এতো বড় পরিবর্তন কিভাবে এবং কেনো হয়ে যায়!! 

মিসিগান এর ফেরিস স্টেট ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিক ডঃ রবার্ট ফিয়ার্ড এর মতে এই সব ঘটনাবলীর পিছে মানুষের ব্রেনে অবস্থিত Phenylethylamine Amino নামের একাটি নিউরো ক্যামিকেল দায়ী। এই নিউরো ক্যামিকেল প্রেমে পড়া লোকেদের তার partner এর ত্রুটি এবং ভুল গুলোকে ইগনোর করতে সাহায্য করে। ব্যাক্তিকে এক ধরনের খুশির অনুভুতি পেতে  সাহায্য করে এবং এই ক্যামিকেল প্রেমে পড়া ব্যাক্তির partner কে top priority দেওয়ার সিগনাল দেয়।আসলে এই নিউরো ক্যামিকেল আমাদের প্রত্যেকের ই ব্রেনে রয়েছে  কিন্তু প্রেমে পড়া ব্যাক্তিদের ব্রেনে এই C8H11N নিউরো ক্যামিকেল টি খুব বেশি মাত্রায় রিলিজ হয়। তবে এই নিউরো ক্যামিকেল এর একশান দীর্ঘ সময় ধরে থাকে না। ৩-৪ বছর পর এই ক্যামিকেলের রিলিজের মাত্রা কমতে শুরু করে। 

Human Psychologist Arthur Aron এর মতে ভালোবাসা হওয়ার জন্য সংবেদন এর সাথে সাথে আরও বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যেমন চোখ হলো তার মধ্যে থেকে একটি অংশ। 

Phycologists Arthur একটি experiment করেন। যেখানে তিনি বেশ কিছু অচেনা ছেলে এবং মেয়েদেরকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একে অপরের সাথে  ৯০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে বললেন। তারপর ৪ মিনিট তাদেরকে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে বললেন। এই এক্সপেরিমেন্ট এর রেজাল্ট এ পাওয়া গেল যে, চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে সামনের ব্যাক্তির উপর পার্টিসিপেন্ট রা attacked হয়ে গিয়েছিল। এবং মজাদার কথা হলো এই, যে এই পার্টিসিপেন্ট দের মধ্যে থেকে ৪ টি couples এক্সপেরিমেন্টেরর ১ বছর পর বিয়েও করে নিয়েছিল। এবং ৩ টি couples  leaving relationship এও থাকা শুরু করেছিল। 

ভালোবাসায় নাক ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি ব্যাক্তির ই গন্ধ ইউনিক হয়ে থাকে। আর এই গন্ধের ইনফরমেশন নাক দ্বারা ব্রেনে পৌছায়। ব্রেন এই ইনফরমেশন কে ডিকোড করে। ডিকোড করে যে সামনের ওই ব্যাক্তিটির কতটা গুরুত্ব রয়েছে আমাদের লাইফে। Dr. Arthur এর হিসেবে কোন ব্যাক্তির মধ্যে attraction এর এই প্রোসেস টি ৮০ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৪ মিনিট এর মধ্যে শুরু হয়ে যায়। Attraction এর Law এ ৫০% ভুমিকা থাকে  বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং পার্সোনালিটির। ৩৮% ভুমিকা থাকে কথা বলার স্টাইল এর উপর এবং ৭% ভুমিকা থাকে কেবল মাত্র এই বিষয়টির উপর যে আপনার কথা বোঝানোর এবং বোঝার ক্ষমতা কতটুকু তার উপর।

American Anthropologist and Human Behaviour research এবং Why We Live বইয়ের লেখক হেলেন ফিস্টার লাভ কে মোট ৩ টি ভাগে ভাগ করেছেন। 

  • Attraction 
  • Affection
  • Deep love 

Attraction: Attraction হলো এমন এক ধরনের বাসনা যেখানে ব্রেন sex hormon , Testosterone  এবং Estrogen নামক দুই ক্যামিকেল কে রিলিজ করে। এই ক্যামিকেল কেবল মাত্র পুরুষদের মধ্যেই থাকে না বরং মহিলাদের ব্রেন থেকেও রিলিজ হয়। এই হরমোনস ব্যাক্তিকে তার পার্টনার এর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রেরণা দেয়। 

Affection: এই স্টেজের জন্য ব্রেনের Dopamine এবং Norepinephrine  নামক নিউরো ক্যামিকেল দায়ী। এই নিউরো ক্যামিকেল দুটির কারণেই ব্যাক্তির মধ্যে ভালোবাসা বা প্রেমের ফিলংস তৈরি হয়। এই সময় ব্যাক্তির কোন কিছুই ভালো লাগে না। চোখ থেকে ঘুম হারিয়ে যায়। এই সময় প্রেমের প্রেমিকারা ফিলোসফার হয়ে যায়। সব সময় নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার ব্যাপারে ভাবতে থাকে। Dopamine এবং  Norepinephrine এর সাথে সাথে ব্রেনের Serotonin ও প্রচুর মাত্রায় এক্টিভ হয়ে যায়। আর এই Serotonin ব্যাক্তিকে প্রেমে পাগল বানিয়ে দেয়। 

Deep love: আসলে এটি Effection এর পরের একটি স্টেজ। Effection এ কোনো কাপলস এর সম্পর্ক যখন বহুদিন ধরে চলতে থাকে  তখন তা Deep love এ কনভার্ট হয়ে যায়।  Attraction এবং Effection এ কোন ব্যাক্তি দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে না কিন্তু Deep love এর এই সম্পর্কে লোকেরা সারাজীবন  পর্যন্ত থাকতে পারে। Deep love এর এই স্টেজে আমাদের ব্রেন Oxytocin and Vasopressin নামক দুই নিউরো ক্যামিকেলকে রিলিজ করতে শুরু করে। আর এই দুই নিউরো ক্যামিকেল আমাদের মধ্যে responsible, social, এই ধরনের ফিলিংস কে তৈরি করতে সাহায্য করে।

প্রেম ভালোবাসা
ভালোবাসা আর প্রেম কি এক

ভালোবাসা আর প্রেম কি এক ?

কাউকে ভালোবাসা আর কারো প্রেমে পড়া আসলে এক বিষয় নয়। কাউকে ভালবাসা এবং কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া একই রকম অনুভূতি কিন্তু তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান পার্থক্য রয়েছে।

কারো প্রতি প্রেমে পড়া বলতে বোঝায়, কারো মায়ায় পড়া, কাউকে নিজের করে কাছে পাওয়ার অনুভূতি এবং তাকে নিজের কাছে পাওয়ার এক আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়া। আর কাউকে ভালোবাসা মানে শারীরিক সম্পর্ক উপেক্ষা করে কাছে পাওয়ার অনুভূতি। তাহলে জেনে নিন কাউকে ভালোবাসা এবং কারো প্রতি প্রেমে পড়া মধ্যে কয়েকটি পার্থক্যর কথাঃ

ভালোবাসা তোমার বাস্তবতা শেখাবে এবং বাস্তবতা কি সেটা জানিয়ে দিবে ভালোবাসা তোমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করতে শেখাবে আর প্রেম প্রেম তোমায় স্বপ্ন দেখাবে।

 মিথ্যে স্বপ্ন আকাশের তারা গোনা বে মেঘের ঘ্রাণ নিয়ে আসি খাবে অহেতুক চিন্তা করতে শিখাবে আর বাসাবে মিথ্যের আবেগের সাগরে প্রেম চোখের পলক ই হয়ে যায়।

কারো চেহারা  কারো বা কন্ঠ শুনে  হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা ভালোবাসা তো এত সহজে হয় না।

ভালোবাসা অনেক সময় নিয়ে আসে এটা হতে পারে না এক মাস এক বছর হয়তো আরও অনেক বেশি সময় ধীরে ধীরে ভালোবাসা বাড়তেই থাকে,

ভালোবাসা একবার সৃষ্টি হলে কখনো কমে যায় না,

ভালোবাসা তো ধীরে ধীরে তার অস্তিত্বকে বিকশিত করে একটি ছোট গাছের চারায় ধীরে ধীরে যেমন ডালপালা সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি ভাবে হৃদয়ে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় আর প্রেম তৃতীয় বিশ্বের শীতকালের বাতাসের মতো নিজের পথ বদলায় প্রেম বারবার নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার চেষ্টা করেও হাজারবার  ভালোবাসার কাছে হেরে যায়।

প্রেম চোখের পলকে এসে যায় প্রেম নিজের স্বার্থ খোঁজে আর ভালোবাসা ভালোবাসা মানুষটির সুখের জন্য নিজের ভালোবাসাটাকে ঈগল বানিয়ে দেয়া যায়। প্রেম ক্ষণস্থায়ী, ভালোবাসা চিরস্থায়ী, 

সবাই ভালবাসার যোগ্য হয় না।

প্রেম আর ভালোবাসা কখনোই এক নয় প্রেম আর ভালোবাসা কখনোই এক নয়।

সম্পর্কের বিচ্ছেদ পরবর্তী মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়ঃ ব্রেক-আপ অর্থাৎ সম্পর্কের বিচ্ছেদ৷ অনেক সময় মানুষ একটি সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকতে থাকতে, গভীরভাবে সে সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলে৷ তারপর হঠাৎই কোনো কারনে, সেই সম্পর্ক ভেঙে গেলে ভীষণ রকম অবসাদ মানুষকে গ্রাস করে৷ এটাই স্বাভাবিক৷

কিন্তু কীভাবে তুমি সেই অবসাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করে, স্বাভাবিক আর দশটা মানুষের মতো একটা ভালো জীবন যাপন করতে পারো, সে বিষয়েই আজ তোমাদের সাথে আলোচনা করব৷ তবে তার আগে আমাদের মাথায় একটা জিনিস ভালো করে ঢুকিয়ে নিতে হবে, আমাদের মস্তিষ্ক(brain) এমনভাবে তৈরী, তুমি যেভাবে তোমার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করবে, সেভাবেই সে কাজ করতে বাধ্য৷ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কর্ম জলের ধর্মের মতোই বললেও কোনো অত্যুক্তি হয় না৷

দ্রুত ঘুম আসার ম্যাজিক টিপস

ব্রেক-আপ মস্তিষ্কের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলেঃ

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো ধরনের শারীরিক ব্যথা আমাদের মস্তিস্কের(brain) যে অংশকে সক্রিয় করে, ঠিক একইভাবে যে কোনো ধরনের মানসিক যন্ত্রণাও আমাদের মস্তিষ্কের একই অংশকে উত্তেজিত করে৷ সুতরাং শারীরিক বা মানসিক এই দু’ধরনের ব্যথাই কিন্তু মস্তিষ্কের কাছে সমান৷

সমস্যা হল, মানুষের শারীরিক যে কোনো যন্ত্রণা বিভিন্ন ঔষধের দ্বারা নিরাময় হতে পারে৷ কিন্তু মানসিক ব্যথা যেহেতু কোনো ঔষধের দ্বারা নিরাময় সম্ভব নয়৷ সুতরাং কেবল মাত্র তোমার বিভিন্ন চিন্তা শক্তির দ্বারাই, তোমার মানসিক যন্ত্রণাকে তুমি বিলুপ্ত করতে পারো৷ এক্ষেত্রে তোমার ডাক্তার কিন্তু তুমি নিজেই৷

ব্রেক-আপের অবসাদ থেকে মুক্তির পথঃ

এতদিন সে যা কিছু বলেছে , যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে , সবই কী তাহলে মিথ্যে! এই প্রশ্নগুলোই তোমাকে বার বার বিদ্ধ করবে, যার উত্তর তোমার কাছে থাকার কথাও নয়৷ সমস্ত পৃথিবী তোমার কাছে মিথ্যে মনে হবে, মনে হবে সব স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয়ে গেল৷

আসলে তুমি সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, তোমার চিন্তাভবনাটাও একটা ছোট্ট গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ আর তোমার মস্তিষ্কও সারাক্ষণ তা নিয়েই ভাবছে৷ ফলে তুমি গভীর অবসাদে ভুগবে ,খুবই স্বাভাবিক৷ আগেই বলেছি, তুমি যেভাবে ভাববে, তোমার মস্তিষ্কও সেরকই ভাবতে বাধ্য৷ চলো এবার দেখা যাক, ব্রেক আপের পর, কীভাবে নিজেকে অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে পারো৷

ইতিবাচক চিন্তাভাবনা (positive thinking):

যেহেতু তোমার মস্তিষ্ক তোমার চিন্তা ভাবনার ক্রীতদাস৷ সুতরাং মনে রাখবে, ব্রেক আপের অবসাদ কাটাতে হলে, যতটা পারো নিজেকে একটু বেশি পরিমান সময় দিয়ে, সবকিছু গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করো৷ কথা দিচ্ছি, ভাবতে ভাবতে একটা রাস্তা ঠিক বের হতে বাধ্য, যা তোমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দেবে৷ কিন্তু সেই রাস্তা অবশ্যই বের হবে, যার ভিত্তিই হল ইতিবাচক ভাবনা৷

উদাহরণ হিসেবে যদি একটু বলি, তবে কয়েকটা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা পয়েন্ট আকারে আসতে পারেঃ

যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। তার জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকাও৷

যে সম্পর্কটা ভেঙেছে, সেটা হয়তো কখনই হবার ছিল না৷ আজ না কাল সেটা নষ্ট হতই হত৷

হয়তো সে তোমার উপযুক্ত ছিল না৷ অথবা তুমি তার৷

নিজেকে ভালোবাসতে শেখো (self love)

আমরা এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই, সাধারণ  যা করে থাকি, তা হল আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলি৷ আমরা ভুলে যাই শরীরের যত্ন নেওয়া৷ অর্থাৎ আমরা নিজেকে ভালোবাসতেই ভুলে যাই৷ আর কেউ যদি নিজেকেই ভালোবাসতে না জানে, সে অন্য কাউকে ভালোবাসতেও কখনও পারে না৷ নিজেকে ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তা হল

সময় মতো স্নান,খাওদাওয়া করো৷ শরীরকে সুস্থ রাখো৷ তাহলে অনেক পজিটিভ চিন্তা চলে আসতে বাধ্য৷

ছেলেদের ক্ষেত্রে চুল দাঁড়ি বড়ো হলে, সেগুলো কেটে ফেল৷ নিজেকে পরিপাটি রাখলে, মনের ভেতর পজিটিভ এনার্জি আসে৷ এটাই হিউম্যান সাইকোলজি৷

বেশি রাত অবধি না জেগে, তাড়াতাড়ি ঘুমোও, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাও৷ তার জন্য দিনের বেলা ভালো লাগার মতো, পরিশ্রমের কাজ করো৷

সকালে উঠে শরীর চর্চা এবং মেডিটেশন করো৷ দেখবে সারাদিন মনটা তরতাজা থাকবে এবং বিভিন্ন রকম কাজের জন্য এনার্জি আসবে, যা তোমাকে সেই অবস্থা থেকে দূরে রাখবে৷

বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আড্ডায় অংশ নাও। দেখবে

সবার মধ্যেই কম বেশি দুঃখ রয়েছে। সব ভুলে কীভাবে নতুন ভাবে বাঁচা যায় – তার আলোচনা করো। দেখবে একদিন যা নিয়ে কেঁদেছিলে, তা নিয়েই একদিন হাসাহাসি করবে।

নিজেকে খুঁজে বের করোঃ

এরকম পরিস্থিতির শিকার হলে, দেখবে অতীত রোমন্থনের জন্য অজস্র সময় তুমি বের করে নিচ্ছ৷ যে সব ভাবনায় তোমার কিচ্ছু লাভ তো হবেই না – সময় নষ্ট ছাড়া৷ আর সেটা তুমি বুঝতে পারবে অনেক পরে৷ তাই সেই অবসর গুলোয় অতীত রোমন্থন না করে, বরং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো৷ তুমি তোমাকে খুঁজে বের করো৷ তোমার কোন কাজটা ভালো লাগে, যেটা তোমার জীবনের একটা প্যাশান৷ সেই কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে তোলো৷ দেখবে তখন এই সমস্ত বাজে চিন্তা থেকে তোমার মস্তিষ্ক অন্যদিকে ডাইভার্ট হতে বাধ্য৷ মনে রাখতে হবে প্রতিটা আঘাত আসলে, জীবন তৈরীর একটা ভিত এবং অনুপ্রেরণাও বটে।

সত্যিটাকে মানতে শেখাঃ

সত্যিটাকে মানতে শেখো৷ যাকে তুমি সবচেয়ে আপন ভাবতে, তার সাথে হঠাৎই ব্রেক-আপ হওয়া, অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ কিন্তু এরকম কিছু ঘটলে, আমরা অলীক এবং অবাস্তবতার উপর নিজেকে ভাসিয়ে দেই৷ কোনো ভাবেই সেই ছিন্ন হওয়াটাকে মানতে পারি না৷ তাকে ছাড়া পৃথিবীতে কেউ বাঁচবে না, এতো সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা৷ তাই সত্যটাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করো৷ দরজা, নিজেকে বোঝাও, হ্যা তোমার জীবনে এটাই হয়েছে৷

সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বের করে আনাঃ

মৃত্যু এবং ব্রেক আপ, দুটো আসলে একই জিনিস৷ মৃত্যুতে শরীরের অবলুপ্তি ঘটে৷ আর ব্রেক আপে সম্পর্কের৷ তাই যেখানে সম্পর্ক শেষ, তাকে নিয়ে মিথ্যে মিথ্যে ভেবে কষ্ট পাওয়ার অর্থহীন৷ তার সঙ্গে সম্পর্কের যত রকম মাধ্যম ছিল, সম্পুর্ণভাবে তার থেকে নিজেকে ছিন্ন করো৷ যেমন ফোন নম্বর, হোয়াটস-আপ, ফেসবুক প্রভৃতি থেকে তাকে ব্লক করো৷ কেননা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর, তার সাথে এমনি এমনি যোগাযোগ থাকলে, তাতে তোমার কষ্ট শুধুই বাড়াবে৷

ভেতরে কোনো অভিমান বা ক্ষোভ পুষে রেখো নাঃ

তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, তোমার থেকে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নিলে, যে যন্ত্রণা কাজ করে৷ সেটা যাতে কখনই তোমার ভেতরে ক্ষোভ সঞ্চার না করে৷ যদি করে তবে প্রথমেই বুঝবে, আসলে তোমাদের সম্পর্কটা প্রেম বা ভালোবাসার ছিল না৷ সেটা আসলে চাওয়া পাওয়ার সম্পর্ক ছিল৷ তাই শেষ হয়েছে মানে, এক অর্থে ভালো হয়েছে৷ তোমার জন্য উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে – এটাই বুঝবে৷

সুতরাং বন্ধুরা, এসব আলোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এল, তা থেকে একটা বিষয় আমাদের বুঝতে আর অসুবিধে নেই যে, ব্রেক-আপের পর যে স্বাভাবিক অবসাদ নেমে আসে আমাদের মনে৷ তা থেকে মুক্তির পথ কেবল তোমাকে তুমিই দেখাতে পার৷ অন্য কেউ এসে তোমার ভেতরের দুঃখ যন্ত্রণার উপশম দিতে পারে না৷ জীবন তোমার, সুতরাং তোমার ভালো তোমাকেই বুঝে নিতে হবে৷ সুতরাং বন্ধুরা ভেঙে পড়লেও, প্রতি মুহুর্তে নিজেকে নিজস্ব ভাবনায় তাড়িত করো৷ কেননা পৃথিবীতে তোমার একমাত্র বিকল্প কেবল তুমি৷

এই সমস্ত কথা গুলো গেলো বুদ্ধিজীবী, Scientists , phycologists দের কথা। Science, Phycologists  যতই একে এক্সপ্লেইন করার চেষ্টা করুক না কেন বিষয়টি কিন্তু অতোটা সহজ নয়। কারণ এর ডেফিনিশন সম্পর্কে যদি চান তো আপনি পাবেন যে প্রত্যেকেই এই একটি জিনিসের ই আলাদা আলাদা ডেফিনেশন দিয়েছেন। Philosopher, Poet, Musician, Artist এমনকি আপনি, আমি প্রত্যেকের কাছেই এর অনুভূতি অন্য রকম। কারো সাথে কারো অনুভূতির মিল নেই। Science এর উর্ধে যদি প্রেম বা ভালোবাসার ডেফিনেশন দেয়া হয় তাহলে সেটা হলো প্রেম, ভালোবাসা  এটা হলো একটি ফিলিংস। এটা অনুভব করার জিনিস। যা প্রকৃতি বা God এর দেয়া একটি গিফট। আর সত্যি বলতে কি প্রেম, ভালোবাসা এটা কনো ক্যামিকেল লোচা নয়, Human survival এর জন্য আমাদের সমাজ বদ্ধ হয়ে থাকার জন্য প্রকৃতিকে ব্যালেন্স এ রাখার জন্য একটা উপায় বা অনুভুতি। এর মধ্যে কিছু মনোবৈজ্ঞানীক কারণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Rate this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *