গোলাপ ফুলের ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম

পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ খুঁজে মেলা ভার যে গোলাপ পছন্দ করেনা। ফুল মানেই জেনো গোলাপ। গোলাপ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “রোসা ” ( rosa) থেকে। রোসা শব্দটি আবার গ্রিক শব্দ ওসকান থেকে নেওয়া। পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির গোলাপ ফুল রয়েছে। গোলাপ কে বলা হয় ভালবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুলের রাণী গোলাপ কে নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের আয়োজন। আজ আমরা গোলাপের নিম্নোক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবঃ

গোলাপের ইতিহাস

গ্রিক উপকথায় আছে, প্রেমের দেবী ভেনাসের পায়ের রক্ত থেকে গোলাপের জন্ম হয়। যদিও আরব্য কাহিনী বলে, বুলবুলি পাখি ভালবেসে সাদা গোলাপ কে আলিঙ্গন করতে গেলে তার কাঁটায় বুলবুলি পাখির রক্তে সাদা গোলাপ থেকে লাল গোলাপের জন্ম হয়। আবার হিন্দু পৌরানিক কাহিনীতে আছে, বিষ্ণু ব্রহ্মাকে পদ্মই শ্রেষ্ঠ ফুল বললে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে স্বর্গে নিয়ে গিয়ে গোলাপ ফুল দেখান। গোলাপ সম্পর্কে এরকম নানান উপকথা প্রচলিত আছে। তবে উপমহাদেশে গোলাপ প্রথম আসে সম্রাট বাবরের হাত ধরে। প্রায় পাঁচশ বছর আগে তিনি ইরাকের “বসরা” শহর থেকে প্রথম গোলাপ নিয়ে এসেছিলেন।

কোন রঙের গোলাপ কি অর্থ প্রকাশ করেঃ

লাল গোলাপঃ ভালবাসা ও প্রেম নিবেদনের প্রতীক

হলুদ গোলাপঃ বন্ধুত্বের প্রতীক

কমলা গোলাপঃ সম্পর্ক টিকে রাখার প্রতীক

গোলাপী গোলাপঃ কৃতজ্ঞতার প্রতীক

সাদা গোলাপঃ শুদ্ধতার প্রতীক

সবুজ গোলাপঃ ভাগ্যের প্রতীক।

কালো গোলাপঃ মৃত্যু বা শোকের বার্তা বাহক।

গোলাপের গুরুত্ব ও ব্যবহার

শুধুমাত্র সৌন্দর্যবর্ধক, ভালবাসার প্রতীক, প্রেম নিবেদন, সুবাস সৃষ্টি কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজনে সাজানো নয় গোলাপের রয়েছে বহুমুখি ব্যবহার। খাদ্যসামগ্রী, প্রসাধনী, উপহারসামগ্রী প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে গোলাপের উপস্থিতি।

  • গোলাপের পাপড়ি থেকে জ্যাম ও জেলি প্রস্তুত করা হয়।
  • রুহ আফজা জাতীয় সিরাপও তৈরি হয় গোলাপ থেকে।
  • গোলাপ থেকে সুগন্ধি যুক্ত গোলাপজল প্রস্তুত করা হয় যা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে ঔষুধি কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • গোলাপ অনাদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন রান্নায়।
  • গোলাপের শুকনো পাপড়ি থেকে শরবত ও চা তৈরি করা হয়,
  • গোলাপের সুগন্ধকে কাজে লাগিয়ে সাবান, তেল ও পারফিউম তৈরি করা হয়,
See also  লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

এছাড়াও, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে অতিথিদের গোলাপ দিয়ে সম্মান ও সমাদর করা হয়।

প্রস্তাবিত ভিডিও

গোলাপ ফুলের ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম

গোলাপের উপকারিতা

  • অবসাদ, ক্লান্তি, ইনসোমনিয়া, অস্থিরতা কমাতে গোলাপের সুবাস বেশ কার্যকরী।
  • গোলাপের পাপড়ি চিবিয়ে খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা দূর হয়,
  • গোলাপ ভিটামিন এ, সি, ই ও বি৩ এর অন্যতম উৎস,
  • স্নায়ুগুলোকে সতেজ ও সবল রাখতে গোলাপজল “রিল্যাক্সিং এজেন্ট ” হিসেবে কাজ করে,
  • গোলাপের গন্ধ ডিপ্রেশন দূর করে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে।

গোলাপ ফুলের চা

প্রস্তুত প্রণালীঃ কয়েক উপায়ে গোলাপের চা তৈরি করা যায়ঃ

১. গোলাপ ফুলের পাপড়ি গরম পানিতে সেদ্ধ করে চা তৈরি করা যায়।

২. নির্দিষ্ট পরিমাণ চায়ের গুড়ার সঙে শুকনো পাপড়ি যোগে চা বানানো যায়।

গোলাপ চায়ের গুণাগুণ

ব্যথা দূরীকরণঃ গোলাপে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করণঃ গোলাপ চা পাচকতন্ত্রের উপকারি ব্যকটেরিয়া তৈরি করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়াতে ফলপ্রসু।

ক্ষুধানিবারণঃ গোলাপ চা ক্যাফেইন মুক্ত। এটি ক্ষুধানিবারক হিসেবে কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করণঃ এতে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বিষ দূরীকরণঃ শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে বলে গোলাপ চা কে বিষনাশকও বলা হয়।

এছাড়াও গোলাপ চাঃ

  • পিত্তথলি ও যকৃতকে ভাল রাখে,
  • আলসার, অ্যাজমা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে ও জ্বর কাশি প্রতিরোধ করে।

গোলাপ ভর্তা

কি ভাবছেন? গোলাপ আবার ভর্তা খাওয়া যায় নাকি, তাইতো? প্রিয় পাঠকবৃন্দ গোলাপ ভর্তা হিসেবে পরীক্ষিত খাদ্য। গোলাপের এতো গুনাগুন ও কার্যকারিতার কারণেই গোলাপ ভর্তা হিসেবেও গ্রহনীয়।

গোলাপ ভর্তা রেসিপিঃ গোলাপ কেনার পরে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিস্কার করে নিয়ে, কাঁচা মরিচ, একটু লবণ সহ বেটে নেওয়া। তৈরি হয়ে গেল গোলাপ ভর্তা।

See also  সেরা রোমান্টিক পিকচার গুলো ফ্রি ডাউনলোড করুন

গোলাপ ভর্তা আমরা কেন খাবঃ গোলাপের ক্যালরি কম হওয়ায় এবং ক্ষুধা নিবারণের কারণে ডায়েট এর সময় গোলাপ ভর্তা হতে পারে একটি উপযুক্ত খাবার। স্বাদে একটু অন্যরকম হলেও গুনাগুনে ভরপুর এই ভর্তা আপনারা অবশ্যই টেস্ট করবেন।

প্রতিদিন একটু গোলাপ ভর্তা আপনাকে ভেতর থেকে করবে সতেজ, উৎফুল্ল। মানসিক চাপ হালকা অনুভূত হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমিয়ে দিবে। গোলাপ ত্বকের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা সবাই জানি। সেই আদি যুগ থেকেই গোলাপ ব্যবহৃত হচ্ছে রূপচর্চায়। গোলাপ খেলে ত্বকের মধ্যে উজ্জ্বলতা ভাব বৃদ্ধি পাবে।

রূপচর্চায় গোলাপ

মুখের ত্বকের জন্যঃ মুখের ব্রণ, তৈলাক্ত ত্বক, দাগ, দূর করতে গোলাপ পেস্ট ব্যবহার করা হয়।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

  • গোলাপ পেস্ট- ১ চা চামচ
  • মধু- ১/৪ চামচ

ব্যবহারের নিয়মঃ গোলাপ, মধু ভালকরে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এভাবে সপ্তাহে ১ দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে।

ঠোঁটের ঔজ্জ্বল্যঃ প্রথমে লেবু ও চিনির রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন, মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁটে হালকা ভাবে স্ক্রাব করে মৃত চামড়া গুলো তুলে ফেলুন।

এরপর গোলাপ পেস্ট ও মধুর মিশ্রণ ঠোঁটে লাগান, ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ঠোঁট হবে গোলাপি ও আকর্ষণীয়।

কনুইয়ের কালো দাগঃ গোলাপ পেস্ট, মধু, অলিভ অয়েল ও লেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণ টি কনুইয়ে লাগিয়ে নিন। এরপর ৫ মিনিট ধরে চিনি দিয়ে স্ক্রাব করুন। এভাবে সপ্তাহে ২ দিন করতে থাকেন, দেখবেন কালো দাগ মিশে যাবে।

চোখের নিচে কালো দাগঃ এক টুকরো তুলো নিয়ে গোলাপ জলে ভিজিয়ে চোখের ওপর কিচ্ছুক্ষণ ধরে রাখুন। ১ সপ্তাহের মধ্যে কালো দাগ চলে যাবে।

চুলের যত্নেঃ চুলের গোড়ায় ভাল করে গোলাপজল লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। খুশকির মতো ভয়াবহ সমস্যা দূর হবে। শুধু তাই নয়, মাথায় নতুন চুল গজাবে ও খুব দ্রুত চুল বড় হবে।

See also  বাংলালিংক নাম্বার চেক করার কোড | Banglalink Number Check Code

গোলাপকে উপহার হিসেবে কারও মন জয়ের জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি নিজের জন্য খাদ্য হিসেবেও ভালোবাসুন। এই করোনাকালিন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গোলাপ রাখুন। নিয়ম মেনে চলুন, সুস্থ থাকুন।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (39 Reviews)
foodrfitness
foodrfitness
Articles: 234

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *