গর্ভাবস্থায় মায়েদের নিয়মিত তাজা ফল শাকসবজি খাওয়া উচিত। এই সব ফলের মধ্যে আপেল এমন একটি ফল যা গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং তার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। আমরা জানি যে যেকোনো মানুষের জন্য দৈনিক একটি আপেল খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ এই ফলের উপকারিতা রয়েছে প্রতিটি পর্যায়ে। আজকে আমরা আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার নিয়ম, এর পুষ্টিগুন, উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
আপেলের পুষ্টিগুনঃ
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ উপাদান, বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ক্রিপ্টোজেন্থিন, ফ্ল্যাবোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মতো ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। এতে আরো রয়েছে পেকটিন। যা একটি প্রিবায়োটিক যা আপনার অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। আপেলকে অত্যন্ত কম ক্যালোরির খাবার হিসেবে গণনা করা হয়, কারণ এসব খাবার গ্রহণে দীর্ঘক্ষণ খুব ভরাট মনে হয়, যার জন্য ঘন ঘন ক্ষুধা অনুভূত হয় না। গবেষণায় দেখা যায় যে আপেল যেকোনো মানুষের স্বাস্থ্যের একাধিক উপকার করতে পারে।
একটি কাঁচা, খোসা ছাড়ানো, মাঝারি আকারের আপেলের ১০০ গ্রামে পুষ্টি রয়েছে:
- আপেলে ক্যালোরি বা শক্তির পরিমান প্রায় ৫২ গ্রাম।
- পানি ৮৬%
- প্রোটিন ০.৩ গ্রাম
- শর্করা ১৩.৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১০.৪ গ্রাম
- ফাইবার ২.৪ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- থায়ামিন (ভিটামিন বি১) ০.০১৭ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২) ০.০২৬ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) ০.০৯১ মিলিগ্রাম
- পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি৬) ০.০৪১ মিলিগ্রাম
- ফলিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৯) ৩ এমসিজি
- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি) ৪.৬ মিলিগ্রাম
- রেটিনল (ভিটামিন এ) ৫৪ আই ঈঊ (IU)
- আলফা-টোকোফেরল (ভিটামিন ই) ০.১৮ মিলিগ্রাম
- ফিলোকুইনোন (ভিটামিন কে) ২.২ এমসিজি
- পটাসিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.১২ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
- জিঙ্ক ০.০৪ মিলিগ্রাম
- মোট স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ০.০২৮ গ্রাম
- মোট মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ০.০০৭ গ্রাম
- মোট পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ০.০৫১ গ্রাম
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা
অধিকাংশ গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে আপেলকে নির্বাচন করে থাকেন তবে ১০০ জন নারীর মধ্যে ৮০ জনই ভুল পদ্ধতিতে ভুল সময়ে আপেল খেয়ে থাকেন। এমনকি ভুল পদ্ধতিতে আপেল খেলে শরীরে বিষক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম ও সময় মেনে আপেল খাওয়া উচিত।
১. হজমে সহায়তা করে: আপেল হজমে সাহায্য করে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা সামগ্রিক হজম এবং মলত্যাগে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া হজমে সমস্যা হলে শরীরে অস্বস্তিকর ভাবের সৃষ্টি হয়। সাথে গ্যাসের সমস্যা তীব্রতর হয়। সুতরাং, আপনি যদি অতিরিক্ত হজমের এবং গ্যাসের সমস্যার সাথে লড়াই করে থাকেন তবে আপেলের মতো ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক গর্ভবতী মহিলার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। আমরা পূর্বেই জেনেছি আপেল হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. আয়রনের ঘাটতি কমায়: গর্ভবতী মায়েদের বেশিরভাগ সময় শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন এর অভাবে গর্ভের শিশুর নানা জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এসব ত্রুটি এবং আয়রন এর অভাবজনিত সমস্যা দূর করতে নিয়মিত একটি করে আপেল খেতে পারেন। এই আয়রন হলো অপরিহার্য খনিজ যা গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা এড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা মোটামুটি সাধারণ একটি সমস্যা, তাই নিয়মিত আপেল খাওয়া আপনার আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে (অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে)।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আপেল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুরানো প্রবাদে আছে “একটি আপেল প্রতিদিন ডাক্তারকে দূরে রাখে” এটি শুধুমাত্র একটি প্রবাদ বাক্য নয়। এটা ঠিক যে, আপনি যদি নিয়মিত আপেল খান তবে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন, কারণ এতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক কারণ একটি শিশুকে বহন করার সময় শরীরে ভিতরে কন্টিনিউ একটি ইনফ্লেমেশন হতে থাকে যা গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেমকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
৫. শরীরে শক্তির সঞ্চার করে: কোন গর্ভবতী মহিলার শরীরে শক্তির প্রয়োজন নেই? আপেল একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে শক্তি বাড়ায়। এটি একটি প্রাকৃতিক শক্তির আধার। মায়ের গর্ভে একটি শিশুর বেড়ে ওঠা সেই মার জন্য অনেক ক্লান্তিকর। তাই যখনই শরীরে ক্লান্তি বোধ হয়, তখন আপেলের মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি খুঁজে খাদ্য তালিকায় যোগ করে রাখুন। আপেল আপনার ব্লাড সুগারকে তাদের সাধারণ শর্করার সংমিশ্রণে বাড়িয়ে দিয়ে আপনার শক্তি বাড়ায়। কিন্তু যদি আপনার ডায়বেটিস জনিত সমস্যা থাকে তাহলে দিনে শুধুমাত্র ১টি আপেল গ্রহণ করুন।
৬. শরীর ও হাড়ের গঠনে সহায়তা করে: গর্ভবতী নারী এবং শিশুর শরীর ও হাড়ের গঠন ও সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে আপেল। এসময় মায়ের যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম এর দরকার সে ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ফল বা দুধ থেকে পাওয়া সম্ভব হয়না। প্রয়োজন হয় একাধিক খাদ্য উপাদান গ্রহণের। শিশুর বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন পড়ে। তাই নিয়মিত ১-২ টি আপেল গ্রহণ করার মাধ্যমে সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
৭. গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়: আপেল গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়। যেহেতু আপেলের পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে একত্রে অনেক গুলো খনিজ, মিনারেল এবং ভিটামিন পাওয়া যায়, সেহেতু নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর বুদ্ধিগত বিকাশে তা দারুণ ভূমিকা পালন করে।
৮. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: স্মৃতিশক্তি গর্ভস্থ সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপেল আপনার শিশুর স্মৃতিতে মেমরি ধারণ করার ক্ষমতা অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়।
৯. হৃদপিন্ডের জটিলতা কমায়: আপেল হার্টের স্বাস্থ্যে সাহায্য করে। আপেল বুক জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের (বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে) অনেক কষ্ট দিয়ে থাকে। আপেলের দ্রবণীয় ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং প্লাক তৈরির গতি কমায়। প্রতিদিন আপেল খাওয়া খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা, ফলক গঠন এবং ধমনীর দেয়ালের প্রদাহ কমায়। যার ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুর হার্ট সুস্থ স্বাভাবিক থাকে।
১০. গর্ভের শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে: অনেক মহিলাদের গর্ভবস্থায় শুরু থেকে আন্ডারওয়েট থাকেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া এতটাই কম থাকে, যার ফলে তাদের ওজন ও গর্ভের শিশুর ওজন বৃদ্ধি পায় না। এতে করে আন্ডার ওয়েট বা প্রিমেচিউর বেবির জন্ম হতে পারে। এইজন্য গর্ভবস্থায় ওজন স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের। তাই শিশুর ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত একটি থেকে দুটি করে আপেল খাওয়া প্রয়োজন।
১১. আপেল জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা কমায়: আপনি সম্ভবত শুনেছেন যে কিছু জন্মগত ত্রুটি এড়াতে গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড (বা ফোলেট) গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপেলে ফোলেট থাকে, তাই নিয়মিত আপেল খেলে এটি আপনার শরীরে ফোলেট বাড়াতে সহায়তা করবে।
১২. আপেল গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে: কিছু প্রমাণ দেখায় যে আপেল খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার হজম এবং শর্করার শোষণকেও ধীর করে দিতে পারে।
৩৮,০১৮ জন মহিলার একটি গবেষণায়, প্রতিদিন ১ বা তার বেশি আপেল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২৮% পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে। আপেল আপনার ব্লাড সুগারকে আরও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে, কারণ এতে থাকা ফাইবার এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, তাই আপেলকে আপনার খাদ্য তালিকার অংশ করে নিলে, গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
১৩. আপেল শ্বাসকষ্ট/অ্যাস্থমার সমস্যা প্রতিরোধ করে: আপেলেও রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে যাতে আপনি গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে পারেন এবং শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা ও এড়াতে পারেন। এমনকি এটি আপনার শিশুর ফুসফুসকেও শক্তিশালী করতে পারে, যার ফলে পরবর্তীতে তাদের হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
১৪. ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করুন: ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফাইটোকেমিক্যালস আপেলের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীর থেকে মুক্ত র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অন্যথায় ফ্রি র্যাডিক্যালের কোষ, ডিএনএ এবং তাদের কার্যক্ষমতার মাধ্যমে শরীরে অক্সিডেটিভ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৫. ক্যান্সার প্রতিরোধ: আপেল নিয়মিত সেবনে ফুসফুস, কোলোরেক্টাল, পরিপাকতন্ত্র এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এমনকি এই ফলের ফাইটোকেমিক্যাল যৌগগুলি ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই শুধু গর্ভাবস্থায় নয়, বরং যেকোনো পরিস্থিতিতেই আপেলকে খাদ্য তালিকায় যোগ করে রাখুন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিয়ম
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার নিয়মঃ
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। যাদের প্যাগনেন্সি স্বাভাবিক তাদের গর্ভাবস্থায় দিনে মাঝারি সাইজের ১ টি আপেল খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ এসময় আপেল ছাড়াও দিনে অন্যান্য পুষ্টিমান ব্যালেন্স করতে অন্যান্য আরো কিছু ফল ও খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হয়। যেসব মায়েদের গর্ভকালীন ওজন কম এবং যেসব মায়েদের গর্ভের শিশুর ওজন কম তাদের দিনে ২ টি আপেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। বা এই বিষয়ে আপনি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিয়েও আপেল নিজের খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
এছাড়া কারো যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আপনার আপেল খাওয়ার সংখ্যা নির্ভর করবে আপনার ডায়বেটিস কতখানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে।
আপনি দিনের বেলা সকালের নাস্তার ৩০ মিনিট পর অথবা দুপুরে মিড টাইমে যেকোনো ফলের সাথে সামান্য গ্যাপে ১ টি আপেল খেতে পারেন। রাতে আপেল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন বা একান্ত প্রয়োজন, ক্ষুধাবোধ না হলে রাতে আপেল খাবেন না। এতে গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও খালি পেটে আপেল খাবেন না। আপেল চাইলে আপনি বিকেলেও খেতে পারেন। কিন্তু সন্ধ্যার উপর আপেল খাওয়া কিছুটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কখনোই প্রয়োজন এর অতিরিক্ত আপেল খাবেন না। এতে আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেড়ে যাবে পাশাপাশি এটি ব্লাড সুগারকেও বাড়িয়ে দিতে পারে।
আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে আপেল অন্তর্ভুক্ত করার উপায়ঃ
গর্ভাবস্থায় অনেক সময় অনেক মজার ফল বা খাবার ও মানুষের কাছে বিষাক্ত মনে হতে থাকে। যত তাজা ফলই থাকুক না কেনো, মাঝে মাঝে তা বিরক্তিকর হতে পারে। তাই আপনি নিজেকে সুখী এবং সুস্থ রাখতে আপেল কাচা খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের রেসিপি বানিয়েও চেষ্টা করতে পারেন।
১। দিনে দুবার তাজা আপেলের রস আপনার তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে একটি স্বাস্থ্যকর মকটেল তৈরি করতে পারেন। গাজর বা বিটরুটের মতো অন্যান্য ফল বা শাকসবজিও এতে মিশ্রিত করতে পারেন।
২। কাস্টার্ড বানিয়ে তাতে আনার ও আপেল মিক্স করে, হালকা মধু মিশিয়ে নিন। অনেক সুস্বাদু একটি ডেজার্ট এ পরিনত হবে এটি।
৩। শুকনো আপেল থেকে বানানো চিপসগুলিও নাস্তার জন্য একটি ভাল বিকল্প।
৪। ঘরে তৈরি প্যানকেক, দই বা কটেজ পনিরের সাথে আপেল খেতে পারেন।
৫। অনেকেই আপেল চা নামে একটি পানীয় পান করেন বাহিরের দেশে, যা নিয়মিত চায়ের একটি চমৎকার বিকল্প, এটি প্রশান্তিদায়ক এবং সতেজ।
সচরাচর প্রশ্নঃ
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, আপনি গর্ভবতী হলে আপেল খাওয়া নিরাপদ। এগুলি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ। যাইহোক, ফল খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন যাতে তাদের উপর থাকা কোন কীটনাশক অবশিষ্ট না থাকে। এছাড়াও, আপেলের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে সায়ানাইড থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও রাতে আপেল খাওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ এতে বদহজম হতে পারে।
সবুজ আপেল কি লাল আপেলের মতো ভালো?
সবুজ আপেল লাল আপেলের মতোই ভালো এবং স্বাস্থ্যকর, যদিও সামান্য ভিন্নতা রয়েছে। তাদের খোসা মোটা, খাস্তা এবং টক। এগুলি দ্রবণীয় ফাইবারের একটি ভাল উৎস যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
যদিও যুক্তিসঙ্গত পরিমাণে আপেল খাওয়া মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ভালো, তবে এটিকে অতিরিক্ত গ্রহণ করা একটি খারাপ ধারণা হতে পারে।
আমি কি গর্ভবতী অবস্থায় খোসা সহ আপেল খেতে পারি?
আপেলের খোসা বা ত্বকে বর্ধিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফেনোলিক যৌগ রয়েছে এবং এতে অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা থাকে। যাইহোক, ফল এবং সবজির খোসায় কখনো কখনো পরজীবী টক্সোপ্লাজমা থাকে, যা টক্সোপ্লাজমোসিস ঘটায়। এর ফলে চোখে দৃষ্টি সমস্যা বা লিম্ফ নোড ফোলা জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। তাই খোসা সহ ফল ও শাকসবজি খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা, যেমন খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া ভালো। বাজার থেকে এনে ফল ভিনেগার সমৃদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। এতে জীবাণু কেটে যায়।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আপেল সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কি কি?
আপনার খাদ্যতালিকায় আপেলের সংখ্যা সম্পর্কে সচেতন হোন, কারণ অতিরিক্ত ফল খাওয়ার ফলে নিম্নলিখিত জটিলতা হতে পারে।
মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করে: আপেলের অতিরিক্ত সেবন কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়ায়, যার ফলে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়, বিপাক ক্রিয়া কমে যায় এবং আপনার শরীরকে চর্বি পোড়াতে বাধা দেয়।
ওজনের সমস্যা: অনেক বেশি আপেল খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে ওজন ব্যবস্থাপনার সমস্যা দেখা দেয়।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আপেলের দৈনিক প্রস্তাবিত ডোজ হল দিনে দুই থেকে চারটি পরিবেশন, যার মধ্যে একটি পরিবেশন একটি মাঝারি আকারের সম্পূর্ণ আপেলের সমান।
অনেকেই গর্ভবতী হলে আপেল খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়, কেনো?
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকাটা স্বাভাবিক। যাইহোক, নির্দিষ্ট আকাঙ্ক্ষা একটি নিদিষ্ট কারণ বা অবস্থার জন্য হতে পারে। গর্ভাবস্থায় আপেলের প্রতি আকর্ষণ হতে আরে আর একটি কারণে। সেটি হলো ভিটামিনের অভাব। তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়মিত ঔষধ সেবনে করেই আপেল গ্রহণ করার পরামর্শ দেন ডাক্তারেরা।
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া নিরাপদ, এবং এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। আপেল হল আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে এবং গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদিও এটি বেশি উপকারী হবে যদি আপনি পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।
কারণ এগুলি গ্লুকোজ সমৃদ্ধ উৎস তাই অতিরিক্ত ওজন বাড়াতে পারে। ভাল মানের আপেল কেনার সময় যাচাই বাছাই করে কিনুন। আপেলের জুস খাওয়ার চেয়ে তা কেটে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন, কারণ জুস বানাতে গেলে তা তৈরি করার সময় ফাইবার এবং অনেক পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় এবং বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিত জুসে স্বাদ বাড়ানো জন্য কৃত্রিম নানা উপাদান এবং প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয়। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আপেল খান, কিন্তু অবশ্যই এর আগে নিয়ম কানুন জেনে তা মেনে চলুন।
আরো পড়ুনঃ