পরিবর্তিত জীবনধারার সাথে সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন এসেছে, যার কারণে আমাদের শরীর হয়ে উঠছে নানা রোগের আবাসস্থল। এমন পরিস্থিতিতে কিছু রোগ রয়েছে যা সাধারণ হওয়া সত্ত্বেও বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। ডাক্তার ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন ১২০০-১৮০০ ক্যালোরি গ্রহণের পরামর্শ দেন, যাতে রোগীর নেওয়া ওষুধটি আরও ভালভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য নিয়মিত ও সুষম হওয়া প্রয়োজন।
অনেক সময় ডায়াবেটিসের সমস্যায় মানুষ চিন্তায় পড়ে যায় যে ডায়াবেটিসের ডায়েটে কী খাওয়া উচিত, যাতে ডায়াবেটিসের ভারসাম্য বজায় রাখা যায় বা চিনি কী পরিহার করা উচিত। ডায়াবেটিস হলে অনেক কিছু খেতে নিষেধ করা হয়, যার কারণে অনেক সময় রোগী বিরক্তও হয়।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে অবশ্যই দুই ধরনের ফল খেতে হবে। এর পাশাপাশি সালাদ খাবারের ১০ মিনিট আগে খেতে হবে, যাতে রোগী একবারে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার না খান।
এখানে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর নমুনা ডায়েট চার্ট শেয়ার করছি যা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া খাবারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এই ডায়েট চার্টের নমুনাগুলো সঠিক অনুপাতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং প্রোটিনের সাথে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ১২০০-১৮০০ ক্যালোরি সরবরাহ করবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
সকালের খাবার- দুটি বাদামী পাউরুটি সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ বা দুটি ছোট পরোটা(ঘি বা মাখন ছাড়া) এবং এক বাটি দই বা এক কাপ/বাটি দুধ গমের সঙ্গে মিশিয়ে (গমের ফ্লেক্স) খান। এই সবগুলির সাথে অন্তত একটি ফল খান (আপেল, পেয়ারা বা কমলা)।
ব্রাঞ্চ (সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের মধ্যে সময়)- শসা, টমেটো, গাজর এবং বিটরুট মিশিয়ে সালাদ তৈরি করুন এবং স্বাদের জন্য লেবুর রস, ধনে পাতা এবং পুদিনা পাতা যোগ করুন। আপনি যদি কাঁচা সবজি খেতে পছন্দ না করেন, তাহলে সব সবজি সিদ্ধ করে তাতে এক চিমটি লবণ, গোলমরিচ ও সামান্য মাখন মিশিয়ে স্যুপ পান করতে পারেন।
মধ্যাহ্নভোজ- রাজমা, ছোলা বা সবজির তরকারি দিয়ে মাঝারি আকারের দুটি রুটি খেতে পারেন। এ ছাড়া গাজর, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, বেগুন বা ওকরা যোগ করে ভেজে সবজি তৈরি করা যায়।
সন্ধ্যার খাবার- আপনি চিনি বা চিনি ছাড়া গ্রিন টি পান করতে পারেন। এ ছাড়া এক বাটি বেলপুরি বা বেক স্ন্যাকসও খাওয়া যেতে পারে।
রাতের খাবার- দুটি মাঝারি আকারের রুটি, যেকোনো একটি সবজির তরকারি (লাউ, বেগুন এবং ক্যাপসিকাম সবজির তরকারি)। সেই সঙ্গে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন।
দ্রষ্টব্য– উপরে দেওয়া ডায়াবেটিসের ডায়েট সম্পর্কিত চার্ট শুধুমাত্র নমুনা। তাই এগুলো ব্যবহার করার আগে রোগীকে তার সুগার লেভেলের উপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিস ডায়েট নেওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো, ডায়াবেটিস কি
ডায়াবেটিসে আমাদের কী খাওয়া উচিত?
ডায়াবেটিসে কোনও সময়েই ডায়েট বাদ দেওয়া উচিত নয়। দিনে তিনবার খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া যখনই খাবেন, একবারে খুব বেশি খাবেন না, কিছু না কিছু খেতে থাকুন। সারাদিন আপনার খাদ্যতালিকায় ফল খাওয়া নিশ্চিত করুন এবং উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
নীচে আমরা এমন আরও অনেক খাদ্য আইটেম সম্পর্কে বলছি, যেগুলি ডায়াবেটিসের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা কেবল উপকারী হবে না, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবে।
সবুজ শাকসবজি- যদি ডায়াবেটিস না থাকে বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সবুজ শাকসবজি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম এবং লাউ এর সাথে পেঁয়াজ, রসুন এবং বেগুন ডায়াবেটিক ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে ।
ডায়াবেটিসের জন্য ফল– ডায়েবেটিসে ফল খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী । আপনার ডায়াবেটিস না থাকলেও ফল খান, কারণ এটি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ডায়াবেটিসে কলা (কাঁচা), লিচু, ডালিম, পেয়ারা এবং অ্যাভোকাডো খাওয়া খুবই উপকারী।
দুগ্ধজাত দ্রব্য– ডায়াবেটিক খাদ্য হিসাবে, শাকসবজি এবং ফলের সাথে সীমিত পরিমাণে কম চর্বিযুক্ত দুধ, দই বা পনির খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে দই এবং দুধ উপকারী, যদি সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়।
ডায়াবেটিসে এড়িয়ে চলা খাবার
- খাবারে বেশি লবণ খাবেন না।
- চিনিযুক্ত পানীয় যেমন ঠান্ডা পানীয় থেকে দূরে থাকুন।
- চিনির ব্যবহার সীমিত করুন।
- আইসক্রিম বা ক্যান্ডি খাবেন না।
- বেশি ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার খাবেন না।
ডায়বেটিস রোগীদের খাবার তালিকায় জিরো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারসমূহ কি কি?
ডায়াবেটিস কোন মরণব্যাধি না হলেও ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীরের নানা অঙ্গসমূহ যেমন কিডনি, লিভার কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খাদ্যের মূখ্য উপাদান। এটি গ্রহণ না করলে যেমন শরীরে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেরকম এর অত্যাধিক মাত্রায় গ্রহণের ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
ডায়বেটিস রোগীদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায়, ডায়বেটিস এর মাত্রা বুঝেই কার্বস জাতীয় খাবার রাখা উচিত। একজন ডায়বেটিস রোগী দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে পারবেন। প্রয়োজন হলে এর কম ও গ্রহণ করতে হতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত একটি ডায়েট চার্ট ফলো করে খাবার গ্রহণ করেন তাহলে ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ আনা অনেকটাই সহজ। এর জন্য কম শর্করা আর বেশি পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও পানি আপনার ডায়েট চার্টে যোগ করুন।
ডিমঃ ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা, সর্বপ্রথম যে খাবার টি রাখা যায় সেটি হলো ডিম। ডিম প্রাণিজ শর্করা। সব ধরনের ডিমে সর্বাধিক প্রোটিন ও ফ্যাট এবং মাত্র ৩ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই খাবার এ শর্করার পরিমাণ একদম ই কম যাকে নো সুগার কার্বোহাইড্রেট ও বলা হয়। এমনকি কিছু কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে এটি টাইপ টু ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন আপনি একটি করে ডিম সিদ্ধ বা ডিমের যে কোন খাবার খেতে পারেন কিন্তু একের অধিক পরিমানে খেলে তা অনেকের ব্রণের সমস্যা, পেটের সমস্যা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হৃদরোগের সমস্যার কারণ হতে পারে। হাসের ডিম না খাওয়াই ভালো, এতে কোলেস্টেরল অত্যাধিক পরিমাণে থাকে।
মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংস ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অন্যতম একটি সেইফ অপসন। কারণ মুরগির মাংস নো সুগার ফুড। বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এর পরিবর্তে খুব সহজেই আপনি আপনার খাবার মেনুতে মুরগির মাংস রাখতে পারেন। এতে রয়েছে প্রানীজ আমিষ ও ফ্যাট যা আমাদের শারীরিক গঠনে ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বেশিরভাগ সময় আমরা মুরগির মাংস ফ্রিজে স্টোর করে অত্যাধিক তাপে বয়েল করে খাই। যার ফলে এর পুষ্টিগুন অনেকটাই কমে যায়। তাই মুরগির মাংস খেতে হলে বাজার থেকে ফ্রেশ মাংস কিনে এনে তবেই রান্না করে খান।
মাছঃ মাছের মধ্যে রয়েছে আমিষ ও খনিজ উপাদান ও জিরো কার্বোহাইড্রেট। এটিও ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অনেক ভালো একটি খাদ্য। মাছ খেলে ব্লাড সুগার বাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অনেকে মাছের পুষ্টি বলতে শুধুমাত্র সামুদ্রিক মাছের কথাই ভাবেন। অথচ আমাদের দেশের নদী-নালা-খাল-বিলে অজস্র মাছের দেখা মিলে প্রতিদিন। যেসব মাছ নানা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। তাই ডায়বেটিস রোগীরা মাছ তাদের নিত্যদিনের খাবার মেনুতে রাখতে পারেন।
গরুর মাংসঃ আপনাদের শুনতে অবাক লাগলে ও এটা সত্যি যে গরুর মাংসে শর্করার পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু এই নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। অনেক গবেষণা মতে দেখা গেছে গরুর মাংস বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানা জটিলতার দিকে নিয়ে যায়। হৃদরোগের সমস্যা থেকে শুরু করে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেশার, পাইলস, টাইপ টু ডায়বেটিস বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু শুধু গরুর মাংস ডায়বেটিস বাড়ানোর জন্য দায়ি নয়। এটি অন্যান্য সমস্যার সাথে একত্রিত হয়ে একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই যেকোনো মানুষেরই নিয়ন্ত্রিত উপায়ে গরুর মাংস খাওয়া উচিত। এই একই বিষয় খাসী, ভেড়ার বেলায় খাটে।
টকদই এবং পনিরঃ দুধের তৈরি দুটি জনপ্রিয় খাবার যেগুলো আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের অন্যান্য খাবারের সাথে যোগ করি। আবার কখনো কখনো খালি ও গ্রহণ করে থাকি। এই দুটি খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান ২-৪ গ্রাম। যাকে আপনি জিরো কার্বোহাইড্রেট এর সাথেই তুলনা করতে পারেন।
বাদামঃ ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন ৩০ গ্রাম পর্যন্ত বাদাম খেতে পারেন। বাদামে আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে যেমন, হাই কোলেস্টেরল বা এলার্জি তাহলে আপনি অনায়াসেই এই বাদাম গ্রহণ করতে পারবেন বিকেলের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের আগে মিড টাইম স্নেকস হিসেবে। এক মুঠো বাদামে ২-৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, এছাড়া ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে ৭-৯ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ১৬ গ্রাম। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা বাদাম তাদের খাবার মেন্যুতে যোগ করে নিতে পারেন। এতে আপনার কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদাও পূরণ হবে এবং ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ফলমূলঃ ফলমূলের মধ্যেও কিছু কিছু ফলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। তাই দৈনন্দিন ফল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ জেনেই নিত্যদিনের খাবার মেনুতে তা যোগ করা উচিত। অনেকগুলি ফলে অল্প মাত্রায় সুগার থাকে যা আপনার ডায়বেটিস বাড়াবেনা ঠিক, কিন্তু শরীরের নানা চাহিদা পূরন করতে পারবে। এরকম কিছু ফলের নাম হলো, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, অলিভ, স্ট্রবেরি, লেবু, কিউই, আপেল(অর্ধেকটি), কলা(ছোট থেকে মাঝারি সাইজের দিনে ১টি), আনার, বরই এবং কিছু কিছু টক জাতীয় ফল।
শাক সবজিঃ কিছু কিছু শাক সবজিতে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। সেসব শাকসবজি ডায়াবেটিস রোগীরা অনায়াসেই তার নিত্যদিনের খাবার মেন্যুতে যোগ করতে পারেন।
যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, বেগুন, শসা, বরবটি, মাশরুম এবং বিভিন্ন ধরনের শাক ইত্যাদি থেকে ৩ গ্রাম থেকে ১০ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকে। এসব শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এখন যদি আপনি একদম কার্বোহাইড্রেট বর্জন করে দেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই দৈনন্দিন খাবার তালিকায় কম করেই কার্বোহাইড্রেট রাখুন যেনো তা আপনার শারীরিক গঠনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ভূমিকা পালন করতে পারে।
ঘি, মাখন ও ভোজ্য তেলঃ এই তিনটি উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ ফ্যাট জাতীয় খাবার। কিন্তু এতে কার্বোহাইড্রেট নেই। কিন্তু তাই বলে আপনি যদি বেশি বেশি করে এসব খাবার খেতে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দিবে, যা ডায়বেটিস থেকেও মারাত্মক হতে পারে। এমনকি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ রাখতে এসব খাবার অনেক নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে বলেন ডাক্তারেরা। ভোজ্য তেল হিসেবে অলিভ ওয়েল, সানফ্লাওয়ার ওয়েল, সরিষার তেল অনেক ভালো কিছু অপসন।
চিনি ছাড়া লিকার চাঃ চায়ের লিকার ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এমনকি কিডনি রোগীদের জন্য ও বিশেষ এক ধরনের ঔষধ। চিনি ছাড়া মানেই হলো জিরো ক্যালরি এবং জিরো কার্বোহাইড্রেট। অন্যদিকে লিকারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নানা ফলমূল থেকে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থেকেও ২০ গুন বেশি সমৃদ্ধশালী।
বিভিন্ন ধরনের মসলাঃ দৈনন্দিন প্রতিটি খাবার রান্না করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করে থাকি। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মসলা গরম পানি বা গরম চা এর সাথেও খেয়ে থাকেন। এসব মসলায় কোন কার্বোহাইড্রেট থাকে না উল্টো এগুলো গ্রহণ করার কারণে অনেকেরই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে।
ডায়াবেটিসে ব্যায়াম
দৌড়ানো– প্রতিদিন সকালে দৌড়ানো বা হাঁটা, এটি শরীরকে ফিট রাখবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
সাইক্লিং– আপনি চাইলে সাইক্লিং উপভোগ করতে পারেন। এটি টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সকালে এবং সন্ধ্যায় হাঁটুন– আপনি যদি ব্যায়াম করতে পছন্দ না করেন বা জিমে যেতে না পারেন তবে সকাল এবং সন্ধ্যায় হাঁটতে যাওয়া ভাল হবে।
নাচ– এটি শুধুমাত্র একটি ভাল ব্যায়াম নয় একটি শিল্পও। নাচ শুধুমাত্র ক্যালোরি কমাবে না, কিন্তু আপনি নিজের ভিতরে একটি শিল্প অনুভব করবেন।
সাঁতার– এটি অ্যারোবিক ব্যায়ামের অংশ। সাঁতার কোলেস্টেরল এবং ক্যালোরি কমাতে এবং ওজন ভারসাম্য বজায় রাখে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠুন– খাওয়ার পরে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন এবং নামুন, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং আপনাকে ফিট রাখবে।
যোগব্যায়াম– এসব ছাড়াও যোগব্যায়াম করতে পারেন। যোগব্যায়াম অনেক লোকের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে এবং এই কারণেই আজও মানুষ অনেক বড় রোগে যোগব্যায়ামকে অবলম্বন করে। ডায়াবেটিসে যোগের উপকারিতাও অনেক। এর জন্য ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, নৌকাসন দিয়ে যোগব্যায়াম করতে পারেন।
ডায়াবেটিস ডায়েটের জন্য অন্যান্য টিপস
খাদ্য এবং পানীয় ছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাদের জীবনযাত্রার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। নীচে আমরা কিছু সাধারণ, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সম্পর্কে বলছি-
সকালের নাস্তা একেবারেই এড়িয়ে যাবেন না, কারণ সকালের নাস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। এটি ব্যক্তিকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। সকালে নাস্তা করলে শরীর এনার্জি পায় এবং ওজনও ঠিক থাকে।
ডিটক্স পানীয় যেমন: – লেমনেড পান করুন।।
প্রচুর পানি পান করুন, যাতে শরীর থেকে টক্সিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন, সঠিক সময়ে খাবার খান এবং সঠিক সময়ে ঘুমান।
চিনিতে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
ডায়াবেটিসের কোনো নিরাময় নেই, তবে সঠিক ডায়াবেটিক ডায়েট এবং ভালো রুটিন ও লাইফস্টাইল অবলম্বন করলে শরীরে এই রোগের প্রভাব কমানো যায়। তাই ডায়াবেটিসে খাবারের বিশেষ যত্ন নিন। এছাড়াও সঠিক ডায়াবেটিস ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
১। আমার বয়স 24 বছর, আমার ডায়াবেটিস আছে। এর মানে কি আমাকে সারা জীবনের জন্য একটি সীমাবদ্ধ খাদ্য অনুসরণ করতে হবে?
২। করলার রস বা নিমের রস পান করলে কি ডায়াবেটিস সারাতে সাহায্য করবে?
৩। ইউক্যালিপটাস তেল কি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় কার্যকর?
৪। আমি কি কখনো মিষ্টি খেতে পারি?
৫। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভ্রমণে ভাল খাবার কি কি?
৬। পনিরে চিনি খাওয়া উচিত নাকি?
৭। ডায়াবেটিস রোগীরা কি রাতে দুধ পান করতে পারেন?
ডায়াবেটিসের জন্য সেরা ডায়েট প্ল্যান-
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ডায়াবেটিক ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কার্বোহাইড্রেট, শাকসবজি, ফল, প্রোটিন, কম চর্বিযুক্ত দুধের পণ্য এবং প্রচুর আঁশের সঠিক মিশ্রণ সহ একটি ডায়েট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জাঙ্ক ফুড- ডায়াবেটিস রোগীদের এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। এমন অনেক খাবার আছে যেগুলোর পুষ্টিগুণ বেশি এবং ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। যেমন, মেথির বীজ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় দারুণ সাহায্য করে।
সকালের নাস্তা– ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট দিয়ে তাদের দিন শুরু করা উচিত যেমন-
- সবজি দিয়ে তৈরি উপমা
- বেসন বা মুগ চিলা
- ওটস, পুরো গম বা বাদামী চাল দিয়ে রান্না করা স্টিমড ইডলি
- পেঁয়াজ, শসা এবং টমেটো দিয়ে স্প্রাউট
- মাল্টিগ্রেন ব্রেডের সাথে শক্ত সেদ্ধ ডিম বা অমলেট।
মধ্যাহ্নভোজ– সুষম খাদ্য ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। রুটি, ডাল, সবজি এবং দই সমন্বিত খাবারের অনেক উপকারিতা রয়েছে, বিশেষ করে যখন এটি স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।
সিরিয়াল– গমের পরিবর্তে, ওট বা জোয়ার থেকে রুটি তৈরি করুন। আপনি যদি ভাত প্রেমী হন, তাহলে ফাইবার সমৃদ্ধ ব্রাউন রাইস খান। সাদা ভাত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
মসুর ডাল– মসুর ডাল, দই বা দুধের মতো প্রোটিনের উৎস বেছে নিন।
শাকসবজি– পালং শাক, ফুলকপি, ব্রকলি, মটর, লেটুস ইত্যাদি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি খান।
চর্বি– ওমেগা-৩ হল এক শ্রেণীর ভাল চর্বি যা আপনার শরীরে প্রয়োজন। রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন যেমন তিসির তেল, ক্যানোলা তেল এবং সরিষার তেল।
ফাইবার– ডায়াবেটিক ডায়েটে ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া বীজ, বাদাম এবং শাক-সবজির মতো ফাইবার থাকা উচিত।
আপনি যদি নন-ভেজ খাবার পছন্দ করেন তবে সামুদ্রিক খাবার এবং মুরগির মাংস অন্তর্ভুক্ত করুন তবে লাল মাংস এড়িয়ে চলুন কারণ এতে উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
রাতের খাবার– দুপুরের খাবারের মতোই, সিরিয়াল, সবজি এবং সালাদ সহ সম্পূর্ণ রাতের খাবার নিন। স্যুপ, মসুর ডাল বা দই অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। ঘুমানোর অন্তত ২ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খান। রাতের খাবারের প্রায় ২ ঘন্টা পরে এক গ্লাস লো ফ্যাট দুধ খেতে পারেন। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
খাবারের মধ্যে স্ন্যাকসের জন্য, আপনি এই খাবারগুলি বেছে নিতে পারেন:
ফল– শুকনো ফল বা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যেমন আম খাবেন না। পেঁপে, বেরি, কমলা, আপেল, আঙুর, খেজুর, পেয়ারা ইত্যাদি ফল খেতে পারেন।
শুকনো ফল– শুকনো ফলের ক্যালোরি বেশি থাকে, তাই এগুলো পরিমিত পরিমাণে খান। এক বাটি ভাজা বা সেদ্ধ ছোলা এবং ভেজানো বাদাম বা চিনাবাদাম খান।
সালাদ– শসা, গাজর, মুলা এবং পালং শাক সহ স্বাস্থ্যকর সালাদ খান।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া এবং খাবারের সময় মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবার এড়িয়ে যাওয়া বা দেরি করা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে। একটি বড় খাবারের পরিবর্তে নিয়মিত বিরতিতে কম খাবার খান।
আরো পড়ুনঃ