আজকে আমরা জানবো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলো কি কি, ভিটামিন ডি এর অভাবে কি রোগ হয় এবং ভিটামিন ডি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা।
আমাদের শরীরের জন্য দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিটামিন এবং মিনারেলস এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব কিছুই দেহের গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য কোনো না কোনোভাবে জড়িত। তাই যে কোন ভিটামিনের অভাবেই শারীরিকভাবে আমরা নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই। আজকে আমরা এই পোস্টে এরকমই একটি ভিটামিন সম্পর্কে আলোচনা করবো, যেটি হল ভিটামিন ডি। যার প্রধান উৎস সূর্যের আলো।
আমরা ভিটামিন ডি সরাসরি সূর্যের আলো থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু এখন একটি চিন্তার বিষয় হলো সূর্যের তাপমাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা সূর্যের আলোতে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পছন্দ করি না এবং সূর্যের আলোতে গেলে অনেকের ত্বকে এখন বার্ণ ইফেক্ট বা জ্বালাপোড়া ভাব দেখা দিতে থাকে যা ত্বকের জন্য ও অসহনীয়। এর পাশাপাশি অনেকেই হিট স্ট্রোকে মারা ও যাচ্ছেন। যার ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিচ্ছে এবং আমরা নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। এই সমস্যা গুলো আমরা শুরুর দিকে উপলব্ধি না করলেও পরবর্তীতে এ সমস্যাগুলো অনেক মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে যেসব সমস্যা দেখা দেয়
ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে নানা সমস্যার দেখা দেয়। এর অভাব হলে আর্থারাইটিসের ও অস্টিওপোরোসিস রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হলো:
১. হাড় ক্ষয় হতে থাকে।
২. কোমরে এবং মেরুদন্ডে ব্যাথা অনুভব হয়।
৩. শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়।
৪. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৫. হরমোনাল সমস্যা দেখা দেয়।
৬. হাই প্রেশার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৭. যৌন সমস্যা দেখা দেয়।
৮. মাথার চুল পড়তে থাকে।
৯. শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
১০. শরীরে নানা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যায়।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুধের তৈরি খাবার যেমন দই, বাটারমিল্ক, পনির ইত্যাদি। দুধ একটি আদর্শ খাবার। দুধে ভিটামিন ডি সহ নানা খনিজ উপাদান বিদ্যমান যা আমাদের দেশের শারীরিক গড়ন, হাড় ও দাতের গঠনে ভূমিকা পালন করে। কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলে আপনি নিয়মিত এক মগ করে দুধ খেতে পারেন। কিন্তু কারো যদি ডিরেক্ট দুধ খেতে অসুবিধা হয় তাহলে তারা দুধের তৈরি অন্যান্য খাবার খেয়েও ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিয়ম, দুধের পুষ্টি উপাদান কি কি
ডিম
ডিম এবং ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে এবং এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজলভ্য একটি খাদ্য। দৈনিক একটি করে ডিম সিদ্ধ খেলে এর চাহিদা পূরন হয়। ডিমের কুসুম এমনিতেই একটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। ডিমের সাদা অংশে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রোটিন থাকে এবং হলুদ অংশে থাকে ফ্যাট ও খনিজ উপাদান।
এটি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে পারেন। এছাড়াও সপ্তাহে ১-২ দিন দুপুরে খাবার মেনুতে ডিম বা ডিমের তৈরি যেকোনো খাবার বা বেশিরভাগ খাবারই রাখতে পারেন। নিয়মিত ডিম খাওয়ার আগে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যাদের হাই কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুম খাওয়া উচিত নয়।
টকদই
ভিটামিন ডি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দুপুরে খাবার গ্রহণের পর নিয়মিত টক দই খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি তেমন সুস্বাদু খাবার নয় তাই অনেকেই এর সাথে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন যা একদম ই ঠিক নয়। দরকার হলে সামান্য পরিমাণে বিট লবণ যোগ করে নিতে পারেন।
মাছ
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তালিকায় মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কিন্তু সব ধরনের মাছে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়না। সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন ডি এর আরেকটি বড় উৎস। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। স্যালমন ফিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। এটি সবসময় পাওয়া যায়না। তাই এর পরিবর্তে আপনি টুনা মাছ খেতে পারেন। সামুদ্রিক মাছ শহরের মানুষদের জন্য সহজলভ্য নয়। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তারা ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের জন্য সামুদ্রিক মাছ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
মাশরুম
ভিটামিন ডি এর আর একটি ভালো উৎস হল মাশরুম যা সুস্বাদু ও মুখরোচক। এটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং কম চর্বিযুক্ত। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। ইউরোপ মহাদেশের মানুষগন খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখেন। মাশরুম সাধারণত যেখানে সূর্যের আলো পড়ে সেখানে জন্মায় এবং এটি চাষাবাদ ও করা হয়। অনেকেই তরকারি হিসেবে মাশরুম গ্রহণ করেন আবার কেউ পাস্তা বা সালাদে সিদ্ধ করে মাশরুম গ্রহণ করে থাকেন। মাশরুমে কারো এলার্জির প্রবণতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং এটি ছাড়া অন্য যেকোনো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে এর চাহিদা মেটান।
বাদাম
বিভিন্ন ধরনের বাদাম, আখরোট সহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল গুলো ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার। প্রত্যেক দিন এক মুঠো বাদাম খেলে সহজেই শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ বাদামের উপকারিতা
কমলা
আমরা সবাই জানি, কমলা ভিটামিন সি এর একটি আদর্শ উৎস। কমবেশি সবাই কমলার জুস খেতে পছন্দ করে। কমলা পুরো বছর জুড়ে না পাওয়া গেলেও কমলার সিজনে এটি সহজলভ্য হয়।তখন কমলা এবং কমলার জুস খেলে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করা যায়। আবার অনেকের ভিটামিন সি তে এলার্জি থাকে বা গ্যাস্ট্রিক এর ও সমস্যা দেখা দেয়। তাই যাদের অসুবিধা হয় তারা ব্যতীত, বাকিরা অনায়াসে কমলার জুস খেয়ে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে পারেন। প্রতিদিন এক গ্লাস জুস খেলে খুব সহজেই ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করা সম্ভব।
পনির
পনির ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পনির খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ে।
শস্যজাতীয় খাবার
শস্যজাতীয় খাবার যেমন গম, বার্লি, ওটস। এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার।এসব খাবার সপ্তাহে ১-২ দিন খেলেও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কিছুটা কমে।
এছাড়াও আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন শাকসবজি রাখতে পারেন যা ভিটামিন ডি’র চাহিদা অনেকটাই পূরণ করতে সাহায্য করবে। মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন এতে সুফল পাওয়া যাবে।
ভিটামিন ডি গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা
আমরা সকলেই জানি যে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিন্তু সূর্যের আলোই ভিটামিন ডি এর একমাত্র উৎস নয়। এমন অনেক খাবার রয়েছে যার মধ্যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। নিয়মিত সেই সমস্ত খাবার গ্রহণ করলে আর্থ্রাইটিস ও হাড়ের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
১. দাঁতের ব্যথা, কোমরের ব্যথা, পেশির যন্ত্রণা এবং হাড় সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি।
২. ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলির মধ্যে একটি হলো এটি শরীরে ক্যালসিয়াম ফসফেট এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যা শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে অবদান রাখে।
৩. আমাদের বয়সের সাথে সাথে শরীরে নানা সমস্যার দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ভিটামিন ডি খেলে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সহজ হয়।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫. নানা যৌন সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।
৬. শরীরের হাড় মজবুত করে।
৭. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৮. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান। সূর্যের আলো যেহেতু এর প্রধান সোর্স তাই প্রতিদিন আমাদের ১০ থেকে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা উচিত। সূর্যের আলোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে নিবেন। তাহলে প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের দেহে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হবে। এছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করুন এবং নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
আরো পড়ুনঃ